সরকারি অর্থের অপচয়

সাবেক সচিবের গাড়িচালকের পুকুরে প্রবেশে ৩১ লাখ টাকার সেতু

নান্নু মৃধা, ডামুড্যা (শরীয়তপুর)
প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪৯

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিবের গাড়িচালকের পুকুরে প্রবেশের জন্য ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে সেতু। স্থানীয়রা বলছেন, জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে সেতু নির্মাণ না করে ব্যক্তি স্বার্থে এমন সেতু নির্মাণ ক্ষমতার অপব্যবহার ও রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয়। আর সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের দাবি-উপর মহলের নির্দেশে বাধ্য হয়ে বাস্তবায়ন করতে হয়েছে এমন প্রকল্প।

জেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্র জানায়, জেলার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের (এমএসআরডিপি) আওতায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ডামুড্যা উপজেলার চরধানকাটি আদাসন দরবার শরীফ সড়কের মধ্যবর্তী স্থানে একটি বক্স কালভার্ট নির্মাণ করে এলজিইডি। ৩১ লাখ ১২ হাজার চুক্তিমূল্য ধরে কালভার্ট নির্মাণের কাজটি শেষ করে মিনহাজ ট্রেডার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ব্রিজটি যে স্থানে নির্মাণ করা হয়েছে সেই স্থানে নেই কোনো বসতবাড়ি। খালের ওপাশে একটি মস্তবড় পুকুর। এমনকি পুকুরটির পাশ দিয়ে যাতায়াতের অন্যকোনো সড়কও নেই। তবে অদূর ভবিষ্যতে এই পুকুরপাড়ে বসতবাড়ি নির্মাণ করবেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিবের গাড়িচালক মোকসেদ সরদার। তাই বিশেষ সুপারিশে এবং ক্ষমতাবলে বাস্তবায়ন করা হয়েছে এমন অবিশ্বাস্য প্রকল্প। ব্যক্তিস্বার্থে এমন প্রকল্প বাস্তবায়নে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় ও সচেতনমহল।

সরকারি টাকা নষ্ট করে এমন প্রকল্প বাস্তবায়ন করায় ক্ষোভ স্থানীয়দের। হাবীবুল্লাহ নামের স্থানীয় এক মুরব্বি বলেন, ৩১ লাখ টাকা নষ্ট করে শুধু শুধু একটি ব্রিজ নির্মাণ করেছে। এই ব্রিজ দিয়ে কোনো লোকের যাতায়াত নেই, সামনে শুধু দুইটা পুকুর আছে। কোনো এক প্রভাবশালী লোক এটা করেছে। এক কথায় এটা অন্যায়। সরকারের টাকা যারা এভাবে নষ্ট করছে তাদের আমরা বিচার চাই।

এ সময় কথা বলার জন্য তৎকালীন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের গাড়িচালক মোকসেদ সরদারের কাছে জানতে চাইলে উত্তর না দিয়েই পালিয়ে যায়। শুধু বলেন, আমি এখানে বাড়ি নির্মাণ করব।

এদিকে ব্রিজ নির্মাণের বিষয়টি খোলাসা করলেন এলজিইডির ডামুড্যা উপজেলা প্রকৌশলী আবু নাঈম নাবিল। তার ভাষ্য, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের মাধ্যমে সুপারিশ করে সেতু নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন ওই গাড়িচালক। তিনি বলেন, আমরা উপজেলা থেকে প্রকল্পে এ ধরনের কোনো প্রপোজাল মন্ত্রণালয়ে পাঠাইনি। ওই গাড়িচালক সচিবকে দিয়ে তদবির করে কীভাবে যেন এটি ঢুকিয়েছে। পিডি চিঠি দিয়েছে এটি বাস্তবায়ন করার জন্য। আমরা পিডিকে জানিয়েছিলাম এটি আমাদের প্রকল্পের মধ্যে পড়ে না। পরে পিডি নিজে ফোন দিয়েছে ও হেড অফিস থেকে জানানো হয়েছে এই কাজটি সম্পাদনের জন্য।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত