গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার ৬নং ঘাঘরকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তপতী বাড়ৈর বিরুদ্ধে বহুমুখী অভিযোগের তদন্তে এসে অভিভাবকদের ক্ষোভের মুখে পড়েছেন উপজেলা শিক্ষা অফিসের তিন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা। বৃহস্পতিবার দুপুরে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এ ঘটনা ঘটে।
সহকারী শিক্ষক তপতী বাড়ৈর বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, ক্লাস ফাঁকি, শিক্ষার্থীদের প্রতি অমানবিক আচরণসহ শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ এনে এলাকাবাসী লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। এর ভিত্তিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং উপজেলা শিক্ষা অফিস পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।
দুপুরে তদন্ত টিম স্কুলে পৌঁছালে ক্লাস্টার এলাকার দুই শতাধিক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জড়ো হয়ে তপতী বাড়ৈর বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ উত্থাপন করেন। তারা তদন্ত কমিটির হাতে লিখিত অভিযোগ হস্তান্তর করেন এবং অবিলম্বে তার স্থায়ী বদলীর দাবিতে স্লোগান দেন। খবর পেয়ে কোটালীপাড়া থানার ওসি ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত অভিভাবকদের শান্ত থাকা ও তদন্তে সহযোগিতার আহ্বান জানান।
অভিভাবক এমদাদ আলী বলেন, তপতী ম্যাডাম যোগদানের পর থেকেই বিদ্যালয়ে অরাজকতা তৈরি হয়েছে। ইচ্ছেমতো স্কুলে আসেন, ক্লাস নেন না। তার শিশু সন্তানকে দিয়ে ক্লাসে মোবাইল ব্যবহার করেন। আমরা দ্রুত তার বদলি চাই। তা না হলে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি দেওয়া হবে।
অভিভাবক শাহনাজ বেগম বলেন, এখানে কোনো ভালো শিক্ষক থাকতে চায় না তপতী ম্যাডামের বাজে আচরণের জন্য। শিক্ষকদের সঙ্গেও তার আচরণ ভালো নয়। ছাত্রছাত্রীরাও তার ভয়ে থাকে। ক্লাসে বাচ্চাদের ওপর নির্যাতন করেন।
অভিভাবক শাহাদাত গাজী অভিযোগ করেন, আমরা বহুবার তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু কোনো সমাধান হয়নি। তিনি উল্টো ভয়ভীতি দেখান। তার কারণে কেউ এই স্কুলে থাকতে চায় না। অনেক সহ্য করেছি আর না। আমরা তার স্থায়ী বদলি চাই। কর্তৃপক্ষ যদি তার বদলি না করে তাহলে আমরা আমাদের সন্তানদের এখানে পড়াবো না।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নমিতা মন্ডল জানান, গত বছর আমি এখানে যোগ দেওয়ার আগ পর্যন্ত তপতী বাড়ৈ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ছিলেন। দায়িত্ব হস্তান্তরের সময় আর্থিক হিসাব দিতে পারেননি। নিয়মশৃঙ্খলা মানেন না, ক্লাসও ঠিকমতো নেন না। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা অফিসে একাধিকবার জানিয়েছি।
সহকারী শিক্ষক প্রণয় বিশ্বাস ও দীপক গাইন বলেন, তপতী ম্যাডামের আচরণ সবসময়ই উৎশৃঙ্খল। ভয় পেয়ে তাকে আমরা কিছু বলতে পারি না। তার কারণে অনেক শিক্ষকই বদলি নিয়ে চলে গেছেন এখান থেকে।
অভিযুক্ত তপতী বাড়ৈ সাংবাদিকদের সাথে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তিনি বলেন যা বলার তদন্ত কমিটির কাছে লিখিতভাবে জানিয়েছি।
তদন্ত কমিটির সদস্য সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দ মো. আহসান বলেন, আমরা অভিযোগকারীদেরসহ অভিযুক্ত শিক্ষক, অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দ ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছ থেকে বক্তব্য নিয়েছি। তদন্ত প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে উপস্থাপন করা হবে।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার শেখর রঞ্জন বলেন, তপতী বাড়ৈর বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

