নড়াইলে রবিশস্যের চাষাবাদ মৌসুমকে ঘিরে সারের বাজারে চরম নৈরাজ্য বিরাজ করছে। চাষিদের অভিযোগ, বিক্রেতারা সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের তোয়াক্কা না করে তাদের কাছ থেকে নিজেদের ইচ্ছামতো দাম হাতিয়ে নিচ্ছেন। তবে সার নিয়ে কোনো অনিয়মের বিরুদ্ধে তাদের কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
সরেজমিনে জেলার প্রত্যন্ত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ব্যস্ততা এখন গম, ধনিয়া, মসুর, খেসারি, পেঁয়াজ, সূর্যমুখীসহ রবিশস্য-গোত্রীয় নানা ফসলের আবাদকে ঘিরে। চাহিদামতো সারের সংকটে আশার ফসলের কাঙ্ক্ষিত ফলন নিয়ে দোলাচলে রয়েছেন চাষিরা। সরকার-নির্ধারিত দাম দূরে থাক, কোথাও কোথাও বাড়তি দাম দিয়েও কাঙ্ক্ষিত সার মিলছে না বলে অভিযোগ তাদের।
সরকার প্রতি কেজি ইউরিয়া এবং টিএসপি ২৭ টাকা করে, ডিএপি ২১ টাকা ও এমওপি ২০ টাকা দর নির্ধারণ করে দিলেও নিয়ন্ত্রণহীন সারের বাজারে প্রতি কেজিতে প্রকারভেদে ২ টাকা থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত গুনতে হচ্ছে।
সদর উপজেলার তুলারামপুর ইউনিয়নের চাঁচড়া গ্রামের চাষি তৈয়ব আলী জানান, ‘রাসায়নিক সার পেতে আমাদের বঞ্চনার এই চিত্র নতুন নয়। তুলারামপুর ইউনিয়নের ডিলার অলোক কুন্ডুর দোকানে গেলে প্রয়োজনমতো সার পাওয়া যায় না। বাইরে থেকে সার কিনে বাড়তি দামের বোঝা বইতে তাদের সারা বছর চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়।’ একই গ্রামের কালাম মিয়া অভিযোগ করেন, ‘বেগুন, টমেটোসহ অন্যান্য সবজি চাষে বিএডিসির টিএসপি খুবই কার্যকর, কিন্তু তা না পাওয়ার ফলে আমরা এসব শাকসবজির চাষ ছেড়েই দিয়েছি।’ একই উপজেলার মাইজপাড়া ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের ক্ষুদ্র চাষি ঠাকুর দাশ জানান, ‘মাইজপাড়া বাজারে সব সারের দোকানে টিএসপি এবং ইউরিয়া ৩০ টাকা করে এবং ডিএপি ২৫ টাকা করে কেজি নিচ্ছে।’ একই ইউনিয়নের আদমপুর গ্রামের চাষি ইদ্রিস আলী জানান, ‘সরোষপুর বাজারে ইউরিয়ার দাম সঠিক নিলেও টিএসপি ৪০ টাকা এবং ডিএপি ৩৫ টাকা করে নিচ্ছে।’
লোহাগড়া উপজেলার নলদী ইউনিয়নের জালালশি গ্রামের চাষি মনিরুল ইসলামের অভিযোগ, ‘দোকানে সার কিনতে গেলে সারের সরবরাহ স্বল্পতার দোহাই দিয়ে বিক্রেতা তার কাছ থেকে ডিএপি সার কেজিপ্রতি ৩৩ টাকা ও এমওপি ২৫ টাকা করে নিয়েছে।’ একই ইউনিয়নের বারইপাড়া গ্রামের বৃদ্ধ চাষি সালাম জানান, ‘দোকানি এমওপি সার নিয়েছে ২৬ টাকা এবং ডিএপির দাম নিয়েছে ২৮ টাকা দরে।’
লোহাগড়া উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের বিসিআইসি সাব-ডিলার শফিকুল আলম জানান, মূল ডিলারদের কাছ থেকে সাব-ডিলার পর্যায়ে সারের সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে, যা পূরণ করতে তারা বাইরের নানা উৎস থেকে বাড়তি দামে সার সংগ্রহে বাধ্য হচ্ছেন। বাড়তি দামের এই প্রভাব স্থানীয় সারের বাজারে পড়ছে বলে সাব-ডিলার শফিকুল আলম স্বীকার করেন।
এদিকে সদর উপজেলার মাইজপাড়া বাজারে বিসিআইসি ডিলারের বিক্রয়কেন্দ্রের ম্যানেজার ইমরুল ইসলাম সারের কোনো সংকটের কথা মানতে নারাজ। তিনি জানান, সব ধরনের সারের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে।
নড়াইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষিবিদ উপ-পরিচালক মুহাম্মদ আরিফুর রহমান বলেন, ‘জেলায় সারের মজুত পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক রয়েছে। সারের বাজার নিয়ন্ত্রণে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাসহ নিয়মিত বাজার তদারকি চলমান রয়েছে। অতিরিক্ত দাম নেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

