চাঁদা তুলে দায়সারা স্বাধীনতা দিবস উদযাপন প্রশাসনের

উপজেলা প্রতিনিধি, দৌলতপুর (কুষ্টিয়া)
প্রকাশ : ২৬ মার্চ ২০২৫, ২২: ৫৭

কুষ্টিয়ায় যথাযথ মর্যাদায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদ্‌যাপিত হলেও ব্যতিক্রম ঘটেছে দৌলতপুর উপজেলায়। এখানে উপজেলা প্রশাসন দায়সারাভাবে মহান স্বাধীনতা দিবসটি উদযাপন করেছে। ছিল না স্কুলকলেজের শিক্ষার্থীদের কুচকাওয়াজ, শরীরচর্চা প্রদর্শন সালাম গ্রহণ, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। স্মৃতিসৌধেও কোনো সংগঠনকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে দেখা যায়নি।

অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বীর মুক্তিযোদ্ধা, সুধীজন ও স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের। উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তানদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটিও ছিল দায়সারা ও অগোছালো। উপস্থিতি ছিল মাত্র ৫০ থেকে ৬০ জনের মতো। অথচ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসকে ঘিরে উপজেলা প্রশাসন সর্বোচ্চ কালেকশন বা চাঁদাবাজি করেছে। চাঁদাবাজির হাত থেকে বাদ পড়েনি নিষিদ্ধ ইটভাটার মালিকরা, অবৈধ ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শিল্প কলকারখানা, বিড়ি কারখানা, তামাক ক্রয় কেন্দ্র, স-মিল, লেদ কারখানা, বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সার ও বীজের ডিলার, এমনকি বাদ পড়েনি ব্রেড ফ্যাক্টরি ও মুদি দোকানও।

বিজ্ঞাপন

দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসের বদলি হওয়া অফিস সহকারী শিশির কুমার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে বিগত সময়ের মতো এ বছরও অর্থ কালেকশন বা চাঁদাবাজি করেছেন। দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় উদযাপনে প্রায় ১৫ লাখ টাকা নগদ অর্থ সহায়তা বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যবসায়ীর কাছ থেকে গ্রহণ করা হয়। এরপরও দিবসটি পালন করা হয় দায়সারাভাবে। এছাড়াও দিবসটিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তানদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হলেও সে খাবার ভ্যান ভর্তি হয়ে বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় সরবরাহ হতে দেখা গেছে। আবার খাবার না পেয়ে ফিরেও গেছেন অনেকে।

উপজেলা বাজারে অবস্থান করা বীর মুক্তিযোদ্ধা কাওছার আলী বিশ্বাস ও আসমত আলী মাষ্টার জানান, বর্তমান ইউএনও স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস বা শহীদ দিবস কোন জাতীয় দিবসে আমাদের দাওয়াতপত্র দেন না বা আমন্ত্রণও জানান না। যা স্বাধীনতার ৫৫ বছরের ইতিহাসে এমন ঘটেনি। এটা একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিজেদের কাছে লজ্জা ও অপমানের। একই কথা জানান, বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সাইদুল আনাম। তিনি বলেন, দৌলতপুরে এই ইউএনও যোগ দেওয়ার পর জাতীয় কোন অনুষ্ঠানে আমাদের আমন্ত্রণ জানানো হয় না।

দৌলতপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি প্রবীণ সাংবাদিক এম মামুন রেজা ও সিনিয়র সাংবাদিক এম এ রাজ্জাক জানান, এবারের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানে আমাদের বা দৌলতপুর প্রেসক্লাবকে আমন্ত্রণপত্র দেওয়া হয়নি বা ফোন করেও জানানো হয়নি। অথচ উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন দৌলতপুর প্রেসক্লাব কার্যালয়। বর্তমান ইউএনও কাদের নিয়ে এবারের স্বাধীনতা দিবসের জাতীয় অনুষ্ঠান করলেন আমাদের জানা নেই।

দায়সারাভাবে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানের বিষয়ে জানতে চাইলে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হাই সিদ্দিকী বলেন, জনে জনে দাওয়াত দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। দিবসকে ঘিরে সর্বোচ্চ অর্থ কালেকশনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি অফিসে আসেন বলে ফোন কেটে দেন।

দায়সারাভাবে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালনে ক্ষোভ প্রকাশ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করেছেন স্থানীয় সচেতন মহল ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত