চামড়া পাচার ঠেকাতে বিভিন্ন সীমান্তে কঠোর নজরদারি

ঢাবি সংবাদদাতা
প্রকাশ : ০৭ জুন ২০২৫, ২০: ২৮
আপডেট : ০৭ জুন ২০২৫, ২০: ৩১

দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে কোরবানির পশুর চামড়া পাচার ঠেকাতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ)। সারা দেশে সীমান্তজুড়ে নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

শনিবার সকাল থেকেই সীমান্তে কঠোর নজরদারির পাশাপাশি টহল জোরদার করা হয়েছে।

লালমনিরহাটের ২৮২ কিলোমিটার ও কুড়িগ্রামের ২৫০ কিলোমিটার সীমান্তের মধ্যে যথাক্রমে ৭৪ ও ৩০ কিলোমিটার এলাকা এখনো কাঁটাতারবিহীন। এই সীমান্ত চামড়া পাচারের জন্য সম্ভাব্য রুট হিসেবে বিবেচিত।

এসব এলাকায় সীমান্ত নিরাপত্তায় কাজ করছে লালমনিরহাট ১৯ বিজিবি, কুড়িগ্রাম ২২ বিজিবি, জামালপুর ৩৫ বিজিবি, রংপুর ৫১ বিজিবি ও ৬১ বিজিবি ব্যাটালিয়ন।

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার আঙ্গোরপোতা সীমান্তে এক বিজিবি সদস্য বলেন, ঈদের দিন সকাল থেকেই নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এই সীমান্ত দিয়ে আগে প্রচুর পশুর চামড়া ভারতে পাচার হতো। এবার আমরা সতর্ক আছি।

একই অবস্থা কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তেও। দায়িত্বে থাকা এক বিজিবি সদস্য জানান, 'একসময় এই রুট ছিল চামড়া পাচারের জন্য নিরাপদ। এবার চামড়া পাচার রোধ করতে পারবো।’

লালমনিরহাট ১৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মেহেদী ইমাম বলেন, 'চামড়া পাচার ঠেকাতে আমরা প্রস্তুত। আমি নিজেই মনিটরিং করছি। পশুর চামড়া জাতীয় সম্পদ। এই সম্পদ পাচার হতে দেয়া হবে না।'

এদিকে চামড়া পাচার ঠেকাতে যশোরের বিভিন্ন সীমান্তে ব্যাপক সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

শার্শা উপজেলার ১০২ কিলোমিটার সীমান্তের শিকারপুর, কাশিপুর, রঘুনাথপুর; বেনাপোলের পুটখালি, দৌলতপুর, সাদিপুর, ঘিবা, গোগা, রুদ্রপুর, অগ্রভুলোট, পাঁচভুলোট ও দাদখালি সীমান্তে চামড়া পাচার প্রতিরোধে বাড়তি সতর্কতা নেয়া হয়েছে।

এসব এলাকায় সীমান্তরক্ষা বাহিনীর পাশাপাশি পুলিশও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলে জানান যশোর-৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী।

রাজধানীর পর দেশে পশুর চামড়ার সবচেয়ে বড় মোকাম যশোরের রাজারহাট। সেখানে দুই শতাধিক আড়তে ২১ জেলার ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করেন।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার কোরবানির পশুর সংখ্যা তুলনামূলক কম। চামড়ার দামও কম, লবণের দাম বৃদ্ধি, ট্যানারি মালিকদের কাছে টাকা অনাদায়ি থাকায় চামড়া ভারতে পাচারের আশঙ্কা রয়েছে।

যশোরের কয়েকজন ব্যবসায়ীও একই অভিযোগ করেছেন।

তারা বলেন, সরকার চামড়া কেনার জন্য ঋণ দিলেও সেই অর্থের পুরোটা তারা ব্যয় করেন না। স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ীরা ঋণ পান না। কোরবানির সময় তাদের হাতে টাকা থাকে না। ফলে ‘সিন্ডিকেট করে’ চামড়ার দাম কমিয়ে দেয়া হয়। তখন বেশি দামের আশায় পাচার করা হয়।

এক চামড়া ব্যবসায়ী বলেন, ‘পেশাদার চামড়া ব্যবসায়ীদের পুঁজি সংকটের সুযোগ নেয় চোরাকারবারিরা। পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে তারা বাজার দরের চেয়ে বেশি দামে চামড়া সংগ্রহ করেন। পরে সুযোগ মতো পাচারকারীদের হাতে সেই চামড়া তুলে দেয়।’

বেনাপোলের দক্ষিণাংশের সীমান্তে নিরাপত্তার দায়িত্বে আছে খুলনা ২১ বিজিবি ব্যাটালিয়ন। এই ব্যাটেলিয়ানের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ খুরশীদ আনোয়ার বলেন, এবার কোরবানির চামড়া পাচার হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

দৌলতপুর, পুটখালি, গোগা রুদ্রপুর, দাদখালি, পাচভুলোট ও অগ্রভুলোট সীমান্তের ইছামতি নদী এলাকায় টহল জোরদার করা হয়েছে- বলেন তিনি।

বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি রাসেল মিয়া বলেন, সীমান্ত অভিমুখে চামড়াবোঝাই যান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সীমান্তবর্তী পুলিশ ফাঁড়িগুলোকে সতর্ক থাকার নির্দেশও দেয়া হয়েছে।

যশোর-৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী বলেন, যশোরের সীমান্ত দিয়ে চামড়া পাচারের সম্ভবনা খুবই কম।

শার্শা সীমান্ত দিয়ে চামড়া পাচার রোধে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন এবং চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে বলে জানান শার্শা থানার ওসি কে এম রবিউল ইসলাম।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত