তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষ, পর্যটক বরণে প্রস্তুত সুন্দরবন

শেখ মিরানুজ্জামান, বাগেরহাট
প্রকাশ : ৩১ আগস্ট ২০২৫, ১১: ৩৪
আপডেট : ৩১ আগস্ট ২০২৫, ১১: ৪৫

শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিচ্ছেন জেলে ও পর্যটন ব্যবসায়ীরা। দীর্ঘ তিন মাস বন্ধ থাকার পর আগামীকাল (১ সেপ্টেম্বর) থেকে আবারো খুলে যাচ্ছে সুন্দরবনের দ্বার। বনের অভয়ারণ্যসহ পুরো সুন্দরবনজুড়ে নতুন উদ্যমে শুরু হবে জেলেদের মাছ ধরা ও পর্যটকদের আনাগোনা। এরই মধ্যে ১১টি পর্যটনকেন্দ্র ও অভয়ারণ্য এলাকায় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বন বিভাগ। এর পাশাপাশি বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে সুন্দর বনে প্রবেশ করতে পারবেন দেশি-বিদেশি পর্যটকসহ বনজীবী ও জেলেরা। বিশ্ব ঐতিহ্য ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা দেশ-বিদেশি পর্যটকদের সরব উপস্থিতিতে কোলাহলপূর্ণ হয়ে উঠবে সুন্দরবন।

বিজ্ঞাপন

দীর্ঘ সময়ের নিষেধাজ্ঞা শেষে সুন্দরবনের দ্বার খোলার অপেক্ষার প্রহর গুনছিল পর্যটন ব্যবসায়ী ও জেলেরা। এ কারণে জেলে পল্লিগুলোতে ফিরে এসেছে চিরচেনা রূপ। জেলেপল্লিতে ঠুকঠুক শব্দে নৌকা ও ট্রলার মেরামতে ব্যস্ত সময় পার করছে জেলেরা। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি শেষে প্রথম দিনেই সুন্দরবনে প্রবেশের জন্য নিরলস পরিশ্রম করেছেন তারা। তেমনি পর্যটন ব্যবসায়ীরাও ইতোমধ্যে তাদের ট্যুরিস্ট বোটগুলো মেরামত করে নতুনত্ব ফিরিয়ে এনে অপেক্ষায় আছেন পর্যটকদের।

বন বিভাগ সূত্র জানায়, বন্যপ্রাণী ও মাছের প্রজনন মৌসুম হওয়ায় গত ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনের নদ-নদী, খাল ও বনে মাছ ধরা ও পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ছিল। এই সময়ে সুন্দরবনের বিভিন্ন অঞ্চলে জেলে ও বনজীবীদের নৌযান চলাচলও বন্ধ ছিল। নিষেধাজ্ঞার কারণে বিপাকে পড়েছিলেন হাজার হাজার জেলে ও বনজীবী।

সুন্দরবন সংলগ্ন মোংলার চিলা এলাকার জেলে বিদ্যুৎ মণ্ডল ও আব্দুর রশিদ জানান, এই তিন মাস তারা প্রায় অর্ধাহারে কাটিয়েছেন। পরিবার চালাতে এনজিও ও মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিতে হয়েছে। বর্তমানে তারা ট্রলার, জাল ও খাদ্যসামগ্রী প্রস্তুত করে সুন্দরবনে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন।

শরণখোলা উপজেলার খুঁড়িয়া খালি গ্রামের, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জেলে বলেন, নিষেধাজ্ঞা থাকাকালীন অভাব অনটনে জীবন অতিবাহিত হয়। তবে সরকার থেকে যতটুকু সহযোগিতা করা হয়, তা আমরা সঠিকভাবে পাই না। তাই নিষেধাজ্ঞার সময় বিকল্প কর্মসংস্থান ব্যবস্থা করলে আমরা উপকৃত হবো। পাশাপাশি তিন মাস নিষেধাজ্ঞার জায়গায় দুই মাস করার কথা বলেন এই জেলে।

ট্যুর ব্যবসায়ী জাহিদ মোল্লা ও মো. সোহাগ হাওলাদার বলেন, ১ সেপ্টেম্বর থেকে বনে প্রবেশের অনুমতি মিললেও এটি পর্যটনের অফ সিজন। অক্টোবর-নভেম্বর থেকে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়বে। তারপরও কিছু পর্যটকরা যোগাযোগ করেছেন। সুন্দরবনে যাওয়ার জন্য বোট বা ট্রলার প্রস্তুত রাখতে বলেছেন।

দীর্ঘদিন অলস বসে থেকে জীবিকা চালাতে অনেক কষ্ট হয়েছে উল্লেখ করে তারা বলেন, ১ সেপ্টেম্বর থেকে পর্যটকের সংখ্যা বাড়লে ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হবে।

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও পর্যটন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, পর্যটকদের স্বাগত জানাতে কটকা, কচিখালী, করমজল, হারবাড়িয়া ও আন্ধারমানিকসহ ১১টি পর্যটন কেন্দ্র সম্পূর্ণ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। লোকসমাগম না থাকায় হরিণ, বানরসহ বন্যপ্রাণীর উপস্থিতি বেড়েছে। এখন সকাল-বিকাল হরিণের দৌড়ঝাঁপ দেখা যায়। এছাড়া ১ সেপ্টেম্বর থেকে মাছ ধরা ও পর্যটকদের জন্য অনুমতিপত্র (পাস) ইস্যু শুরু হবে। সংশ্লিষ্ট সব টহল ফাঁড়িকে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, পর্যটকদের বরণ ও জেলেদের মাছ ধরার জন্য বন বিভাগ সম্পূর্ণ প্রস্তুত। মৎস্য ও বনজীবীদের সহায়তা নিশ্চিত করতে মন্ত্রণালয়ে তালিকা পাঠানো হয়েছিল, যা এখন যাচাই করেছে মৎস্য দপ্তর। আগামী বছর থেকে জেলেরা খাদ্য সহায়তা পাবেন। এছাড়া দর্শনার্থীদের জন্য সুন্দরবনে পর্যটন স্পটগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কয়েক বছরের মতো এবারো পহেলা জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনে পর্যটক ও বনজীবীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। এসময়ে সুন্দরবনে ভেতরে সব নদী ও খালে মাছ আহরণে যেতে পারেননি কেউ। এতে সুন্দরবনের নদী ও খালে মাছের প্রজনন বৃদ্ধি পায়। সুন্দরবনের মৎস্য সম্পদ রক্ষায় ইন্টিগ্রেটেট রিসোর্সেস ম্যানেজমেন্ট প্লানিংয়ের সুপারিশ অনুযায়ী ২০১৯ সাল থেকে প্রতি বছর তিন মাসের জন্য বন্ধ থাকে সুন্দরবন।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত