চোখজুড়ানো বাঁশের হাট

খায়রুল আরেফিন রানা, নড়াইল
প্রকাশ : ২১ আগস্ট ২০২৫, ১১: ২৪
নড়াইলে চিত্রা নদীর তীরে বাঁশের সারি। ছবি: আমার দেশ

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার নড়াইলের পলাইডাঙ্গা পাইকারি বাঁশের হাট। অর্ধশতাব্দী পুরোনো এ বাঁশের হাট গ্রামবাংলার জীবনাচারের প্রতিচ্ছবির জন্যই শুধু অতুলনীয় নয়, সাশ্রয়ী দাম ও উন্নতমানের বাঁশের জন্যও খুলনা বিভাগে এ হাট প্রসিদ্ধ। এ কারণে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ক্রেতারা জড়ো হন এ হাটে।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিন দেখা যায়, দৃষ্টিসীমাজুড়ে শুধু বাঁশ আর বাঁশ। গ্রামবাংলার প্রকৃতির কোলে রাশি রাশি সাজানো বাঁশের বিস্তীর্ণ প্রান্তর নান্দনিক করে তুলেছে পরিবেশকে। নদীর ঘাটে বাঁধা নৌকার সারি, মাঝিমাল্লার কর্মব্যস্ততা, সবুজ-শ্যামল পরিবেশে বাঁশ কেনাবেচা, আনা-নেওয়াসহ হাটের ফড়িয়া, পাইকার আর মজুরদের প্রাণবন্ত উপস্থিতি উপভোগ্য করে তোলে হাটের পরিবেশ।

নড়াইল সদর উপজেলার ভদ্রবিলা ইউনিয়নের চিত্রা নদীর পাড়ে চমৎকার এ দৃশ্যের অবতারণা হয় সপ্তাহে একদিন, প্রতি রোববার।

সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, ভোক্তাপর্যায়ে বাঁশ পৌঁছাতে কয়েক দফা হাতবদল হয়। বিক্রির জন্য আনা বাঁশ সাধারণত আশপাশের ছোট ছোট হাট ও সরাসরি বাঁশঝাড় থেকে কিনে ব্যবসায়ীরা পলাইডাঙ্গার হাটে তোলেন। এখান থেকে আবার খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, গোপালঞ্জের ব্যাপারীরা কিনে সেখানকার প্রত্যন্ত এলাকায় নিয়ে ভোক্তাপর্যায়ে বিক্রি করেন।

কম খরচে স্বাচ্ছন্দ্যে পরিবহন করা যায় বলে ৯০ ভাগ বাঁশ নদীপথে পরিবহন করা হয়। এভাবে পরিবহন সময়সাপেক্ষ হওয়ায় পলাইডাঙ্গায় হাট বসার দুদিন আগে থেকেই বাঁশ আসা শুরু হয়।

এসব বাঁশ নদীর কিনারে হাটের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে সাজিয়ে রাখা হয়। বাঁশ কাটা, হাটে নামানো, বিক্রি হওয়া বাঁশ নৌকায় ওঠানোসহ বিভিন্ন কাজে শ্রমের ব্যাপক চাহিদার ফলে স্থানীয়দের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। এতে আর্থিক সচ্ছলতার মুখ দেখছেন এলাকাবাসী।

বর্তমানে আকার ও প্রকারভেদে প্রতিটি বাঁশ ৭৫ থেকে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে বর্তমানে বাঁশের উৎপাদন হ্রাস পাওয়া এর দাম চড়া। ফলে লাভ করা কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

পলাইডাঙ্গা বাঁশের হাট ঈদগাহ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি কাজী রকিব সেন্টু বলেন, ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে পরিচালিত বাশেঁর হাটটি এখানকার আশপাশের গ্রামের মানুষের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। এ হাটে এখানকার শ্রমজীবী মানুষের কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও হাটের দিন এখানে কাজ করে নিজ নিজ পরিবারকে আর্থিক সহায়তা করতে পারছে। এখানে প্রতি হাটে অন্তত ২৫ লাখ টাকার বাঁশ বেচাকেনা হয়। হাটের নিরাপত্তাসহ ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ বজায় রাখতে গ্রামবাসী সব সময় তৎপর রয়েছেন।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত