পূর্বধলা হাসপাতালে জনবল সংকটে ভেঙে পড়েছে চিকিৎসাসেবা

শফিকুল আলম শাহীন, পূর্বধলা (নেত্রকোনা)
প্রকাশ : ০৬ জুলাই ২০২৫, ২০: ৪৪
আপডেট : ০৬ জুলাই ২০২৫, ২০: ৪৭

নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ও জনবল সংকটের কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে চিকিৎসাসেবা। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা ওষুধ, নার্স, শয্যা ও অন্যান্য সংকট ছাপিয়ে এখন চিকিৎসক সংকটই মুখ্য হয়ে উঠেছে।

উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের সাড়ে তিন লক্ষাধিক জনগোষ্ঠীর চিকিৎসাসেবা পাওয়ার একমাত্র ভরসাস্থল এই পূর্বধলা উপজেলা হাসপাতাল। উক্ত হাসপাতালটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়েছে সেই গত ২০০৬ সালে। এ জন্য নির্মিত হয়েছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সম্প্রসারিত বিশাল ভবন।

এই ভবনে প্রয়োজনীয় ও আধুনিক চিকিৎসাসেবা পাওয়া যাবে এমনটাই আশা করেছিলেন এলাকার লোকজন। কিন্তু ক্রমশ সেই আশা ফিকে হয়ে গেছে। কারণ রোগীদের যারা চিকিৎসা দিবেন প্রয়োজনীয় সেই চিকিৎসকই নেই এখানে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তিনটি মেডিকেল অফিসারের পদ থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে দুটি পদই শূন্য। আবাসিক মেডিকেল অফিসারের একটি পদের মধ্যে একটি, ইনডোর মেডিকেল অফিসারের একটি পদের মধ্যে একটি, প্যাথলজিস্টের একটি পদের মধ্যে একটি, অ্যানেসথেটিস্ট একটি পদের মধ্যে একটি, ইউনানী মেডিকেল অফিসারের একটি পদের মধ্যে একটি, জুনিয়র কনসালটেন্ট ১১টি পদের মধ্যে সাতটি ও ডেন্টাল সার্জনের একটি পদের মধ্যে একটি পদই দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে।

ফলে একজন মেডিকেল অফিসার, একজন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার ও একজন ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার এই তিনজন চিকিৎসক দিয়েই চলছে হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম। এ ছাড়া পরিচ্ছন্ন কর্মীর পাঁচটি পদের মধ্যে দুটি ও নিরাপত্তা প্রহরীর দুটি পদের মধ্যে একটি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে।

উক্ত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ জন রোগী চিকিৎসা নিতে আসে। ভর্তি থাকে প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ জন। তাছাড়া শয্যা সংকটের কারণে ওয়ার্ডে ও বারান্দার মেঝেতে রোগীদের গাদাগাদি করে পড়ে থাকতে দেখা যায়। গত তিন দিন ধরে পেটে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালের বারান্দায় ভর্তি আছেন উপজেলা সদরের লক্ষ্মী রানী, গোহালাকান্দা গ্রামের আতিকুল ইসলাম। জ্বর এবং পাতলা পায়খানা নিয়ে ভর্তি আছেন সোহাগীডহর গ্রামের সুফিয়া খাতুন। তারা জানান, ভর্তির সময় জরুরি বিভাগে ডাক্তার দেখেছিলেন। এরপর তিন দিন ধরে আর দেখেননি। তবে নার্সরা নিয়মিত সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। কথা হয়, বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা স্থানীয় শোভা বেগম ও বিলকিস বেগমের সঙ্গে। তারা জানান, গত এক সপ্তাহে তারা দুই দিন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে টিকিট কেটেও চিকিৎসক পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেননি। বাধ্য হয়ে তারা চিকিৎসাসেবা না পেয়ে বাড়ি চলে যান। ব্যবস্থাপত্র পেলেও কোনো ওষুধ পাননি।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান মামুন বলেন, চিকিৎসক সংকটের কারণে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা অনেকটা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে এটি সত্য। তবে উপজেলার বৈরাটি ইউনিয়নের আলমপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও খলিশাউড় ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দুইজন চিকিৎসক এবং উক্ত হাসপাতালের একজন চিকিৎসকসহ মোট তিনজন চিকিৎসক নিয়মিত চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তা ছাড়া জেলা সিভিল সার্জন সম্প্রতি উক্ত হাসপাতালে বারহাট্টা, কেন্দুয়া ও দুর্গাপুর হাসপাতাল থেকে তিনজন চিকিৎসক ১০দিন করে সংযুক্তি দিয়েছেন। আগত রোগীদের চিকিৎসা দিতে আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি। চিকিৎসক ও জনবল সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত