ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হামলা ভাঙচুর, পরিস্থিতি থমথমে

মো. কামাল উদ্দিন, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ)
প্রকাশ : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ০১

ময়মনসিংহের গৌরীপুরে বিএনপির দুই গ্রুপের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ ও এক ছাত্র দল কর্মীর মৃত্যুর পর এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। গত রোববার বিকালে উপজেলার পাটবাজার এলাকায় বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষের সময় দৌড়ে আহত হয়ে হাসপাতালে মারা যাওয়া তানজিল আহমেদ উত্তর জেলা ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি উত্তর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি নুরুজ্জামান সোহেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তানজিলের বাড়ি ময়মনসিংহ নগরের কৃষ্টপুর দৌলতমুন্সি রোডে। গতকাল সোমবার জানাজা শেষে তাকে ময়মনসিংহে দাফন করা হয়েছে।

এদিকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে দলের অভ্যন্তরে হাঙ্গামা, সহিংসতা, সন্ত্রাসী কার্যকলাপের অভিযোগে গত রোববার রাতে কেন্দ্রীয় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে গৌরীপুর বিএনপির পাঁচ নেতাকে বহিষ্কারের কথা জানানো হয়। বহিষ্কৃতরা হলেনÑমনোনয়ন বঞ্চিত উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আহাম্মদ তায়েবুর রহমান হিরণ, যুগ্ম আহ্বায়ক তাজুল ইসলাম খোকন, সদস্য মাসুদ পারভেজ কার্জন, গৌরীপুর পৌর বিএনপির সদস্য সচিব সুজিত কুমার দাস ও যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান পলাশ। বহিষ্কারের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপির একমাত্র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মোতাহার হোসেন তালুকদার।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে জনসভায় যোগদানের জন্য গত রোববার বিকাল ৩টায় ‘ধানের শীষ’ প্রতীকের মনোনয়ন পাওয়া ইঞ্জিনিয়ার এম ইকবাল হোসাইন তার নেতাকর্মীদের নিয়ে মিছিল করে গৌরীপুর সরকারি কলেজ হোস্টেল মাঠে যাচ্ছিলেন। অপরদিকে বিএনপির এ আসনে মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে পৌর এলাকার ধান মহালে নারী সমাবেশ করছিলেন বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিত নেতা আহমেদ তায়েবুর রহমান হিরণ। কিন্তু ইকবাল হোসাইনের সঙ্গে থাকা মিছিলের বেশিরভাগ অংশ পৌর এলাকার পাটবাজার মোড় হয়ে কলেজ হোস্টেল মাঠে চলে গেলেও তার পেছনে থাকা নেতাকর্মীদের সঙ্গে হিরণ সমর্থক নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ধানমহালে হিরণ সমর্থনের নারী সমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়। এ সময় প্রায় ৩০ মিনিটিব্যাপী দুই গ্রুপের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার দাবি করলেও স্থানীয়রা জানান, পুলিশ ছিল একেবারেই নির্বিকার। এরই মধ্যে বিকাল ৪টার দিকে হিরণ সমর্থক নেতাকর্মীরা গৌরীপুর থানা সংলগ্ন স্থানীয় যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছসেবক দলের দলীয় কার্যালয়সহ বেশ কয়েকটি বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। এ সময়ে তারা যুবদল ও ছাত্রদলের অফিসের চেয়ার-টেবিল বের করে রাস্তায় আগুন ধরিয়ে দেয়।

এদিকে তখনও গৌরীপুর সরকারি কলেজ হোস্টেল মাঠে এম ইকবাল হোসাইনের নির্ধারিত জনসভা চলছিল। এতে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব হাফেজ মো. আজিজুল হকের সভাপতিত্বে পৌর বিএনপির আহ্বায়ক মো. আলী আকবর আনিচের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ধানের শীষের মনোনয়ন পাওয়া ইঞ্জিনিয়ার এম ইকবাল হোসাইন। পরে সভা শেষে ইকবাল সমর্থকরা বাড়ি ফেরার পথে আবারো হিরণ অনুসারীদের হামলার শিকার হন। এ সময় ইকবাল সমর্থক কর্মী ছাত্রদল নেতা তানজিম আহমেদ আবিদ (৩০) দৌড় দিতে গিয়ে রাস্তায় পড়ে গিয়ে আহত হন। পরে তার সঙ্গে থাকা নেতাকর্মীরা তাকে দ্রুত ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় একে অপরকে দায়ী করে রোববার রাতেই উভয় পক্ষ সংবাদ সম্মেলন করেছে।

গত ৩ নভেম্বর বিএনপি মহাসচিব প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে ময়মনসিংহ–৩ (গৌরিপুর) আসনে দলীয় প্রার্থীর তালিকায় ইঞ্জিনিয়ার এম ইকবাল হোসাইনের নাম ঘোষণা করেন। প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত না হলেও প্রাথমিক এ তালিকা ঘোষণা শেষে দলের মহাসচিব ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে সবাইকে এক হয়ে কাজ করার কথা বলেন। কিন্তু ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে সবাইকে এক হয়ে কাজ করার কথা বলা হলেও এখনো দুই ভাগে বিভক্ত গৌরীপুর বিএনপির নেতাকর্মীরা।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত