ভারত থেকে ধেয়ে আসা পানিতে আকস্মিক বন্যায় প্লাবিত শিবগঞ্জ

পানিবন্দী ১১ হাজার পরিবার, বন্ধ ১২ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

উপজেলা প্রতিনিধি, (শিবগঞ্জ) চাঁপাইনবাবগঞ্জ
প্রকাশ : ১১ আগস্ট ২০২৫, ২১: ৫৬
আপডেট : ১১ আগস্ট ২০২৫, ২২: ০৮

উজানে ভারত থেকে ধেয়ে আসা পানিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে পদ্মা নদীর পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে সৃষ্ট বন্যায় চারটি ইউনিয়নের প্রায় ১১ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

সোমবার বিকেলে সরেজমিনে ঘুরে বন্যার্তদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার পাঁকা-উজিরপুর ইউনিয়নের সম্পূর্ণ ও দূর্লভপুর-মনাকষা ইউনিয়নের আংশিক এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গিয়েছে প্রায় ৫’শ হেক্টর জমির ফসল। বন্যার কারণে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে ১২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

বিজ্ঞাপন

পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, বন্যার পানি এখনো বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে শূন্য দশমিক ৪৩ সেন্টিমিটার বাকি রয়েছে।

এসব এলাকার অনেকেই গরু-ছাগল অন্যত্র রেখে এসেছে। কমলমতি শিশুদের চৌকি ও টেবিলে উপরে রেখে সার্বক্ষণিক নজরবন্দি করে রেখেছে। তবে কোনো আশ্রয়ণ স্থল না থাকায় অনেকেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ও বাঁধ সড়কের উপর আশ্রয় নিয়েছে।

দূর্লভপুর ইউনিয়নের বাদশাহ পাড়া গ্রামের প্রতিবন্ধী গুমানী মন্ডল বলেন, মাত্র কয়েকদিন আগে আমার শেষ সম্বলটুকু সর্বনাশা পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। খোলা আকাশের নিচে বাস করছি। তারপর আবার বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।

একই এলাকার সোহরাব আলী বলেন, বাড়ি ঘর ভেঙে নৌকাযোগে অন্যত্র নিয়ে যাবার পথে নৌকা ডুবে সব তলিয়ে গেছে। এখন আমি পরিবার নিয়ে নিরুপায়।

দূর্লভপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজম আলী বলেন, দূর্লভপুর ইউনিয়নের বর্তমানে তিন হাজার পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় জীবনযাপন করছে।

অন্যদিকে পাঁকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক বলেন, বন্যার পানি এখনো বৃদ্ধি পাচ্ছে। বন্যা এখন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। প্রায় হাজার হাজার পরিবার পানিবন্দী। মনাকষা ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুর রাকিব বলেন, মনাকষা ইউনিয়নের সিংনগর, চর সিংনগর, রামনাথপুর, তারাপুর ভবানীপুর, রানীনগর, হঠাৎপাড়া, হাঙ্গামী, ঠুঠাপাড়া-পারচৌকা নতুনপাড়াসহ প্রায় ১০ গ্রামের মানুষ বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে ৩'শ পরিবার একেবারে অসহায় হয়ে পড়েছে। আকস্মিক বন্যায় উজিরপুর ও মনাকষা ইউনিয়নের পানিবন্দি ৩ হাজার পরিবার।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রকিবুল ইসলাম বলেন, পদ্মা নদীর পানি আরো দুদিন বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভবনা আছে। বর্তমানে বিপদসীমার চেয়ে শুন্য দশমিক ৪৩ সেন্টিমিটপার নিচে নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বর্তমানে ওয়াটার প্লেয়িং আছে ২১ দশমিক ৬৪ সেন্টিমিটার। তিনি আরও বলেন, ভারতের উজানের ঢল আর টানা বৃষ্টিতে পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি বর্ষার সময় ভারতের সবগুলো বাঁধ খুলে দেয়ায় বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে এ অঞ্চল। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নয়ন মিয়া বলেন, পদ্মা নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় ৪২৭ হেক্টর জমির বিভিন্ন ধরনের ফসল তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে ৩৯৫ হেক্টর জমির আউশ ধান, ২৫ হেক্টর জমির সবজি, পাঁচ হেক্টর জমির হলুদ ও দুই হেক্টর জমির কলা তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নয়ন মিয়া বলেন, পদ্মা নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় ৪২৭ হেক্টর জমির বিভিন্ন ধরনের ফসল তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে ৩৯৫ হেক্টর জমির আউশ ধান, ২৫ হেক্টর জমির সবজি, পাঁচ হেক্টর জমির হলুদ ও দুই হেক্টর জমির কলা তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আজাহার আলী বলেন, আকস্মিক বন্যায় ১২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর। এর মধ্যে প্রায় পাঁচ 'শ পরিবারের মাঝে শুকনা খাবার, জিআর চাল, ঢেউটিন, নগদ টাকা ও পানি বিশুদ্ধিকরণের ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত