অচল কোটি কোটি টাকার প্রকল্প

ছয় বছরেও চালু হয়নি বগুড়ার বার্ন ইউনিট

সবুর শাহ্ লোটাস, বগুড়া
প্রকাশ : ০২ অক্টোবর ২০২৫, ১১: ১৩

বগুড়ার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে নির্মিত ১০ শয্যাবিশিষ্ট বার্ন ইউনিট জনবল ও চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবে অব্যবহৃত হয়ে পড়ে আছে। ফলে চালুর আগেই কার্যকারিতা হারাচ্ছে তিন কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই প্রকল্প। হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় আট হাজার বর্গফুটের এই আধুনিক বার্ন ইউনিটের নির্মাণকাজ শেষ হয় ২০১৯ সালে। কিন্তু ছয় বছর পরও ইউনিটটি চালু করা সম্ভব হয়নি। ফলে ওই অঞ্চলে অগ্নিকাণ্ডে আহতদের চিকিৎসা নিতে নানারকম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে । রোগীকে দূরের হাসপাতালে নিতে সময়, অর্থ ও শ্রম নষ্ট হয়। একইসঙ্গে গুরুতর দগ্ধ রোগীদের মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যায়।

বিজ্ঞাপন

অভিযোগ রয়েছে, কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে এর কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। ফলে উত্তরাঞ্চলের কেন্দ্রস্থল বগুড়ায় বড় অগ্নিকাণ্ড বা বিস্ফোরণজনিত দুর্ঘটনায় দগ্ধ রোগীদের ঢাকাসহ দূরের হাসপাতালে পাঠাতে হয়।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বছরের পর বছর দামি বেড, এসিসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার না হওয়ায় নষ্ট হওয়ার পথে। করোনাকালীন সময়ে ওই ইউনিটগুলোকে করোনা আক্রান্তদের সেবায় ব্যবহার করা হয়েছিল। কিন্তু করোনার পর সম্পূর্ণ একটি বার্ন ইউনিট চালুর কথা থাকলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। ফলে আগুনে পোড়া রোগীদের চিকিৎসা আগে যেমনটি ছিল, এখনো তেমন রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৮ সালে বার্ন ইউনিট নির্মাণ শুরু হয়ে শেষ হয় ২০১৯ সালে । নির্মাণ শেষে ২০২০ সালে কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয় । কিন্তু সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের অবহেলায় আজও এটি চালু হয়নি। বার্ন ইউনিট চালুর জন্য জনবল ও সরঞ্জামের চাহিদা উল্লেখ করে পূর্বের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এটিএম নুরুজ্জামান বহুবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে লিখিত আবেদন করেছিলেন । আবেদনে একজন সিনিয়র কনসালটেন্ট, দুজন জুনিয়র কনসালটেন্ট, চারজন সহকারী রেজিস্ট্রার, চারজন মেডিকেল অফিসার, দুজন অ্যানেসথেসিওলজিস্ট, ১৬ জন সিনিয়র স্টাফ নার্স, ১৬ জন অফিস সহায়ক, ১২ জন ওয়ার্ডবয় ও আটজন পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের তালিকা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেগুলোর অনুমোদন পাওয়া যায়নি।

জেলা সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডা. সাজ্জাদ-উল-হক জানান, প্রয়োজনীয় লোকবল সরকার থেকে না পাওয়ায় বার্ন ইউনিট চালু করা যাচ্ছে না।

সদ্য যোগদানকৃত জেলা সিভিল সার্জন ডা. খুরশিদ আলম বলেন, আমি নতুন যোগদান করেছি । বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বগুড়াবাসীর একমাত্র ভরসা শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। সেখানেও নেই বার্ন ইউনিট ও পর্যাপ্ত সুবিধা । সে কথা জানালেন শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. ওয়াদুদ। তিনি জানান, শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পূর্ণাঙ্গ কোনো বার্ন ইউনিট নেই । গুরুতর দগ্ধ রোগীদের সেবায় মাত্র ‍দুটি কক্ষ আছে।

অন্য একটি সূত্র জানায়, ইউনিটে জরুরি অপারেশনে ভোল্টেজ ঠিক রেখে বৈদ্যুতিক জেনারেটরের ব্যবস্থা করা হয়নি। বিশেষায়িত মেডিকেল যন্ত্রপাতি স্থাপনের সুবিধাজনক ব্যবস্থাও হয়নি।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত