বগুড়ায় এখনো উদ্ধার হয়নি লুট হওয়া ২২ অস্ত্র

সবুর শাহ লোটাস, বগুড়া
প্রকাশ : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০: ৫৬

সরকার ঘোষিত সময়ে বগুড়ায় ৩৬৪টি আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে একটির হদিস পায়নি প্রশাসন। এ ছাড়া জুলাই বিপ্লবের সময় ৩৯টি অস্ত্র লুট হলেও উদ্ধার হয়নি অর্ধেকেরও বেশি। অন্যদিকে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারেও উল্লেখযোগ্য সাফল্য নেই পুলিশ বিভাগের। গত এক বছরে বগুড়ায় পুলিশ মাত্র ১০টি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও ২৯৫ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছে।

সূত্র জানায়, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বগুড়ায় ৩৬৪টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়। গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে লাইসেন্স করা অস্ত্র ও গোলাবারুদ জমা দেওয়ার কথা থাকলেও বগুড়ার ৫৫ জন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। পরে তারা বিভিন্ন থানায় জমা দেন। এর মধ্যে একটি আগ্নেয়াস্ত্রের হদিস পায়নি প্রশাসন।

বিজ্ঞাপন

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় লুট হওয়া বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র ও গুলি উদ্ধারে পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তবে এ ঘোষণার আগেই জেলায় উল্লিখিত অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। বর্তমানে বগুড়ায় পুলিশ লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে জোরালো পদক্ষেপ নিয়েছে। জেলায় এ পর্যন্ত লুটের ১৭টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতের স্বার্থে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বগুড়া জেলা ম্যাজিস্ট্রেসি থেকে ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য প্রদত্ত সব আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স (কর্মরত সামরিক- বেসামরিক কর্মকর্তা ব্যতীত) স্থগিত করে গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী লাইসেন্সভুক্ত আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ গত ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে লাইসেন্স গ্রহীতার স্থায়ী ঠিকানার থানায় অথবা বর্তমান বসবাসের ঠিকানার নিকটস্থ থানায় জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। ওই সময় ৩৬৪টি আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে ৫৫ জন অস্ত্র জমা দেননি। পরবর্তীতে ৫৩ জন বিভিন্ন থানায় জমাদানের প্রেক্ষিতে একজনের অবশিষ্ট থাকে এবং একটি অস্ত্র হারিয়ে যাওয়ার জিডি সংরক্ষিত রয়েছে।

অন্যদিকে জুলাই আন্দোলনে বগুড়া সদর থানায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পর লুট করা ৩৯টি বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে ১৭টি এ পর্যন্ত উদ্ধার হলেও বাকি ২২টি অস্ত্রসহ বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদও উদ্ধার হয়নি।

এদিকে নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও বৈধ আগ্নেয়াস্ত্র জমা না পড়ায় সেগুলো অবৈধ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন বগুড়া জেলা প্রশাসক হোসনে আফরোজা। তিনি বলেন, দ্রুত সময়ে এই আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করা হবে।

বগুড়া পুলিশের সূত্র জানায়, গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর দুর্বৃত্তরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে। তারা শহরের কাজী নজরুল ইসলাম সড়কে সদর থানায় হামলা চালায়। সেনাসদস্যদের সহযোগিতায় পুলিশ সদস্যরা গুলি ছুড়তে ছুড়তে থানা থেকে পালিয়ে যান। এরপর দুর্বৃত্তরা থানায় হামলা চালায়। তারা হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। শেষে তারা অস্ত্রাগার থেকে থানার ৩৬টি ও পুলিশ লাইনসের সদস্যদের তিনটিসহ মোট ৩৯টি আগ্নেয়াস্ত্র লুট করে। এ ছাড়া লুট হয় ও পুড়ে যায় শর্টগানের তিন হাজার ৪০০ রাউন্ড কার্তুজ ও টিয়ারশেল এবং দুই হাজার রাউন্ড চায়না রাইফেলের গুলি। দুর্বৃত্তরা থানা চত্বরে থাকা শতাধিক আলামতের মোটরসাইকেল ও অন্যান্য জিনিসপত্র লুটপাট এবং আগুন দিয়ে পুলিশের কয়েকটি গাড়ি পুড়িয়ে দেয়।

এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ পর্যন্ত অভিযানে লুট হওয়া ১৭টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। এগুলোর অধিকাংশই ব্যবহারের অনুপযোগী। কিন্তু এক বছর পার হলেও এ পর্যন্ত লুট হওয়া ২২টি আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ প্রশাসন। এ ছাড়া এ ব্যাপারে আজ পর্যন্ত কোনো মামলাও হয়নি।

বগুড়া সদর থানার ওসি হাসান বাসির জানান, লুট হওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। আর মামলা দায়েরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

বগুড়ার পুলিশ সুপার মুসা আল জেদান বলেন, ‘থানা থেকে লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারের প্রক্রিয়াকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে অভিযান চলছে। আমি এখানে আসার পর এ পর্যন্ত ১৫টি অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। এ ছাড়া জমা না হওয়া বৈধ অস্ত্র নিয়েও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। সাধারণ মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আগামীতে এসব দ্রুত উদ্ধার ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের জেএম শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী কমিশনার (ডিসি) রশিদুল ইসলাম জানান, দুটি আগ্নেয়াস্ত্র জমা পড়েনি। এর মধ্যে একটি হারিয়ে যাওয়ায় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। জমা না দেওয়া ওই অস্ত্রের মালিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে থানা থেকে খোয়া যাওয়া আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ দুর্বৃত্তদের কাছে থাকায় এসব অপরাধমূলক কাজে ব্যবহারের আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অস্ত্রগুলো উদ্ধারে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন মহল ও রাজনৈতিক নেতারা।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত