আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

ধানি জমিতে পুকুর খননে বাধা, এক্সকাভেটরের চাপায় প্রাণ গেলো যুবকের

উপজেলা প্রতিনিধি, মোহনপুর (রাজশাহী)

ধানি জমিতে পুকুর খননে বাধা, এক্সকাভেটরের চাপায় প্রাণ গেলো যুবকের

‘রাতের খাবার খেয়ে আমরা স্বামী-স্ত্রী দুজনে শুয়ে ছিলাম। মসজিদের মাইকে ঘোষণা এলো বিলে ফসলি জমিতে—পুকুর কাটবে, সবাই বাইরে বের হন। শুনেই সে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। হাত ধরে আটকাতে পারিনি জুবায়েরকে, তবুও চলে গেল।’

বিজ্ঞাপন

কথাগুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন আহাম্মেদ জুবায়েরের স্ত্রী মোহনা বেগম। পুকুর খননের সময় বাধা দিতে গিয়ে ভেকুর (এক্সকাভেটর) নিচে পড়ে মারা যান তার স্বামী।

পরিবারের দাবি, ফসলি জমিতে পুকুর খননে বাধা দেওয়ায় পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে।

মোহনা বেগম বলেন, আমি কতবার বলেছি যেও না। বলল, যাব আর একটু পরেই ফিরে আসব। কিছুক্ষণ পরেই খবর এলো আমার স্বামী মারা গেছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে স্বামীর মরা মুখটাও দেখতে পাইনি। তার আগেই তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জুবায়েরের বাড়ি থেকে মাত্র ২০ গজ দূরে কবর খনন হচ্ছে। স্থানীয় সাত-আটজন যুবক কবর খননের কাজ করছেন। চারপাশে ভেসে আসছিল স্বজনদের কান্নার রোল।

নিহতের খবর পেয়ে দূর-দূরান্ত থেকে আত্মীয়স্বজনরা বাড়িতে ছুটে এসেছেন। এখনো লাশ পাননি স্বজনেরা।

এ সময় নিহতের মা কোহিনুর বেগম বলেন, আমার ছেলের সঙ্গে শেষবার কোনো কথা হয়নি। এখনো তার মরা মুখটা দেখতে পাইনি। শুনেছি লাশ থানায় আছে। এরপর রাজশাহী হাসপাতালে ময়নাতদন্ত হবে, তারপর বাড়িতে আনা হবে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বড় পালশা গ্রামের আব্দুল মজিদ ওরফে মন্জিলের ছেলে আনিসুজ্জামান রহমান বকুল এবং মুনতাজ হাজির দুই ছেলে রুহুল আমিন ও রুবেল হোসেন এক্সভেটর দিয়ে পুকুর খনন করছিল। খবর পেয়ে রাত ৯টার দিকে স্থানীয় কয়েকজন কৃষক তাদের জমিতে পুকুর খনন করতে দেবে না বলে বাধা দেয়। এ সময় মালিকরা এক্সকাভেটর চালিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। চালক এক্সকাভেটর চালিয়ে দিলে জুবায়ের নিচে পড়ে গুরুতর আহত হন। পরে তাকে উদ্ধার করে দ্রুত মোহনপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে রাত ১০টার দিকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

নিহতের বাবা রফিজ উদ্দিন বলেন, ‘বকুল, রুহুল ও রুবেল বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। জমির মালিকদের সঙ্গে কোন কথা না বলেই জোর করে কৃষি জমিতে পুকুর খনন করছিল তারা। বাধা দিতে গেল ভেকু (এক্সভেটর) চাপা দিতে তার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে তারা এলাকায় অবৈধভাবে পুকুর খনন করছিল।

এর আগে বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) রাত ৯টার দিকে রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার ধুরইল ইউনিয়নের বড় পালশা গ্রামে পুকুর খননের সময় এক্সকাভেটরের নিচে পড়ে আহাম্মেদ জুবায়েরের মৃত্যু হয়। ঘটনার পরপরই পুলিশ ভেকু চালক আবদুল হামিদকে (২৮) আটক করে। তিনি টাঙ্গাইল জেলার কাদিমহামজানি উত্তরপাড়া গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে।

রাজশাহী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ভেকুর বাকেটের আঘাতে একজনের মৃত্যু হয়েছে। দুপুরে নিহতের বাবা থানায় এসে মামলা করবেন। একজনকে আটক করা হয়েছে। আইনগত প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।’

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর

খুঁজুন