রাজশাহীর নওহাটা পৌরসভা

আলোকায়ন প্রকল্পের কেনাকাটায় ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি

রাজশাহী অফিস
প্রকাশ : ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৬: ৩১
ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহীর নওহাটা পৌরসভায় আলোকায়ন প্রকল্পে সরকারি অর্থে কেনাকাটায় ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, বৈদ্যুতিক সামগ্রী কেনাকাটায় প্রকৃত বাজারদরের তুলনায় দুই থেকে তিনগুণ বেশি বিল দেখানো হয়েছে। এমনকি নিম্নমানের মালামাল সরবরাহ করেও উচ্চমানের পণ্যের হিসাব ধরা হয়েছে।

পৌরসভা থেকে পাওয়া একটি বিলের কপিতে দেখা যায়, ৫০০ পিস ১৫ ওয়াটের এলইডি বাল্ব কেনা হয়েছে প্রতিটি ৩১৮ টাকায়, যেখানে বাজারদর ২১৮ টাকা। তিন কয়েল ১ দমমিক শূন্য তারের বাজারদর প্রায় তিন হাজার টাকা হলেও প্রতি কয়েলের বিল করা হয়েছে ১৬ হাজার ২০০ টাকা। এছাড়া ১০০ পিস লাইট হোল্ডার কেনা হয়েছে ২১০ টাকা দরে। অথচ বাজারে প্রতি পিসের দাম ৭০ টাকার বেশি নয়।

বিজ্ঞাপন

তথ্য অনুযায়ী, ১০০ ওয়াটের ১৩টি ফ্লাড লাইট কেনা হয়েছে প্রতি পিস তিন হাজার ৬৪০ টাকায়, বাজারে যা তিন হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হয়। স্থানীয়দের দাবি, সরবরাহ করা লাইটগুলোর প্রকৃত ক্ষমতা ৫০ ওয়াটের বেশি নয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পৌরসভার এক কর্মচারী জানান, মেয়র ও কাউন্সিলর না থাকায় পৌরসভায় এখন জবাবদিহির অভাব। যারা আছেন, তারা নিজেদের মতো করে কাজ করছেন। অল্প পরিমাণ কেনাকাটাতেই বড় অঙ্কের বিল করা হচ্ছে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, সরকারি অর্থের নামে লুটপাট চলছে অথচ কেউ কিছু বলছে না। অবিলম্বে স্বচ্ছ তদন্ত করে দায়ীদের শাস্তি দিতে হবে।

বাজারদরের চেয়ে বেশি দামে কেনাকাটার বিষয়ে জানতে চাইলে পৌরসভার উপসহকারী প্রকৌশলী আব্দুর রহিম বলেন, সব কেনাকাটা সরকারের রেটশিট অনুসারেই হয়েছে। মালামাল সরবরাহ করেছে রোমেল এন্টারপ্রাইজ। আরএফকিউ (রিকোয়েস্ট ফর কোটেশন) পদ্ধতি অনুসরণ করে টেন্ডার দেওয়া হয়েছে। এখানে কোনো অনিয়ম হয়নি।

পৌরসভার প্রশাসক ও পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরাফাত আমান আজিজ বলেন, আরএফকিউ পদ্ধতিতে ক্রয়ের সময় ১০ শতাংশ ভ্যাট ও ৫ শতাংশ আয়কর যোগ হয়। বাজারের দাম ও সরকারি ক্রয়মূল্যের মধ্যে পার্থক্য থাকতেই পারে। এ পদ্ধতিতে দ্রুত ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন করা হয়।

তবে এ ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নন স্থানীয় অনেকেই। নওহাটা পেরৗসভার সাবেক মেয়র মোকবুল হোসেন বলেন, আমিও শুনেছি বাজারদরের চেয়ে বেশি দামে বিল করা হয়েছে। এটা কোনোভাবেই ঠিক নয়। সরকারি টাকার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। আমি মেয়র থাকাকালে টাকার অপচয় হতে দেইনি।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ মাহমুদুর রহমান বলেন, যদি সত্যি এক টাকার জিনিস তিন টাকায় কেনা হয়, এটি প্রশাসনিক শুদ্ধাচারবিরোধী ও দুর্নীতির শামিল। পৌরবাসীর উচিত এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো।

স্থানীয় সচেতন মহল বলছেন, সরকারি অর্থের স্বচ্ছ ব্যবহার নিশ্চিত না হলে উন্নয়ন নয়; বরং দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নেবে।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত