পাকশী রেল বিভাগে রাজস্ব ঘাটতি বাড়ছে

ওহিদুল ইসলাম সোহেল, ঈশ্বরদী (পাবনা)
প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩: ১৮

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশী বিভাগে এক বছরে প্রায় ৯ কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে। ২০২৩-২৪ ও ২০২৪-২৫ অর্থবছরের আয় বিশ্লেষণে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এর পেছনে পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল কমে যাওয়া এবং আন্দোলন-সংগ্রামের কারণে তৈরি হওয়া নেতিবাচক পরিবেশকে দায়ী করছে কর্তৃপক্ষ।

বিজ্ঞাপন

পাকশী রেলওয়ে বিভাগের বাণিজ্যিক কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য বলছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যাত্রী, পণ্য, পার্সেল-লাগেজ এবং বিবিধ খাত মিলিয়ে আয় হয়েছিল ৪৭৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। পরের বছর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আয় নেমে যায় ৪৬৪ কোটি ২৩ লাখ টাকায়। অর্থাৎ, এক বছরে রাজস্ব কমেছে ৯ কোটি ২১ লাখ টাকা। রাজনৈতিক অস্থিরতায় দীর্ঘ সময় ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকা এবং ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রেন কমে যাওয়ায় আয় কমে যায়।

তথ্য বিবরণী অনুযায়ী, যাত্রী পরিবহন খাতে আয় বেড়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যাত্রী খাত থেকে এসেছে ৩৭৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা। পরের অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৮৯ কোটি ১৬ লাখ টাকায়। তবে বড় ধস নেমেছে পণ্যবাহী ট্রেনে। এ খাতে আগের বছর আয় হয়েছিল ৮৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা এবং ২০২৪-২৫ সালে আয় নেমে আসে ৬৪ কোটি ৯ লাখ টাকায়।

পার্সেল ও লাগেজ খাতেও আয় কিছুটা কমেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে চার কোটি ৮৭ লাখ টাকা থেকে ২০২৪-২৫ সালে তা নেমে আসে চার কোটি ৭৮ লাখ টাকায়। বিবিধ খাত নিম্নগামী, যা আট কোটি ৮৬ লাখ টাকা থেকে নেমে এসেছে ছয় কোটি ১৯ লাখ টাকায় ।

২০২২-২৩ অর্থবছরে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে মোট আয় করেছে ৪৮৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এই অর্থবছরে আয় আগের অর্থবছরের (২০২১-২২) তুলনায় ৩৬ কোটি টাকা বেশি ছিল।

রেল কর্মকর্তারা জানান, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে ২৮ দিন ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। ওই সময় যাত্রী কিংবা পণ্যবাহী কোনো ট্রেন চলেনি। একই বছরের জুলাই মাসে বন্ধ হয়ে যায় আন্তঃদেশীয় ‘বন্ধন এক্সপ্রেস’। পাশাপাশি আগস্ট থেকে ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রেনের সংখ্যা হ্রাস পায়। এসব কারণেই রাজস্বে বড় ধাক্কা লাগে।

২০২৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর খুলনা-ঢাকা রুটে ‘জাহানাবাদ এক্সপ্রেস’ এবং বেনাপোল-ঢাকা রুটে ‘রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস’ চালু হয়। এছাড়া ২০২৫ সালের ১৮ মার্চ যমুনা রেলসেতু চালুর পর বিভিন্ন শ্রেণির আসনে ৪৫ থেকে ১৪৫ টাকা পর্যন্ত ভাড়া বাড়ানো হয়। ফলে যাত্রী আয়ে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। কর্মকর্তাদের দাবি, ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল কমে না গেলে অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় ওই অর্থবছরেই আয় সবচেয়ে বেশি হতো।

পাকশী রেলের বাণিজ্যিক কর্মকর্তা গৌতম কুমার কুণ্ডু বলেন, ‘আয় কমার দুটি প্রধান কারণ হচ্ছে ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল হ্রাস ও জুলাই-আগস্টে টানা ২৮ দিন সেবা বন্ধ থাকা। বর্তমানে ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রেন আসা-যাওয়া ধীরে ধীরে বাড়ছে। আশা করছি আগামী অর্থবছরে আয়ও বাড়বে।’

পশ্চিমাঞ্চল রেলের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা সুজিত কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘প্রায় এক মাস সব ট্রেন বন্ধ, ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রেন অর্ধেকের নিচে নেমে আসা এবং আন্তঃদেশীয় বন্ধন এক্সপ্রেস বন্ধ থাকার কারণে আয় কমেছে। তবে সংকটের মধ্যেও যাত্রী পরিবহন খাতে আগের চেয়ে বেশি আয় হয়েছে। কেবল ভারতীয় ট্রেন কমে যাওয়াতেই বড় ঘাটতি তৈরি হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, আগে মাসে যেখানে ১০০টি ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রেন আসত, এখন তা কমে ২০টিতে নেমেছে। এ কারণে যাত্রী আয়ে ক্ষতি না হলেও পণ্য পরিবহন খাতে বড় ধাক্কা লেগেছে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত