শেখ আনোয়ার হোসেন, নওগাঁ
নওগাঁর অন্যতম বিদ্যাপীঠ কৃষ্ণধন (কেডি) সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। অবিভক্ত বাংলার অন্যতম উচ্চ বিদ্যালয় হিসেবে এ প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয়। তখন থেকেই এ অঞ্চলের আলোকবর্তিকা হয়ে রয়েছে বিদ্যালয়টি। দেশ-বিদেশে আলো ছড়িয়েছেন ঐতিহ্যের ১৪২ বছরে থাকা বিদ্যালয়টির হাজারো শিক্ষার্থী। এর মধ্যে রয়েছেন বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজ্ঞ ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, সচিব, মন্ত্রী, রাজনীতিবিদসহ আরো বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। তারা স্ব-স্ব ক্ষেত্রে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে এ প্রতিষ্ঠান তথা দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন।
ইতিহাস ঘেঁটে জানা গেছে, নওগাঁ শহরে ১৮৮৪ সালে একটি হাই স্কুল স্থাপিত হয়, যা পরে নওগাঁ কেডি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় নামে খ্যাতি লাভ করে। সেদিনের বৃহত্তর রাজশাহী জেলায় এটি ছিল তৃতীয় উচ্চ বিদ্যালয়। সে সময় নওগাঁ শহরের বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও এখানে একটি উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টা চালান।
অন্যদিকে শাসনকাজের সুবিধার জন্য ব্রিটিশ সরকার প্রত্যেকটি মহকুমায় একটি করে ইংরেজি উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় তৎপর হয় এবং এরই ধারাবাহিকতায় নওগাঁ মহকুমায় একটি উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে যথেষ্ট আগ্রহ প্রকাশ করে। বিদ্যোৎসাহী হওয়ায় সে সময়ে নওগাঁর সাব-ডেপুটি কালেক্টর ও গাঁজা সোসাইটির সুপারভাইজর কৃষ্ণধন বাবু এই হাইস্কুল স্থাপনে বিশেষ তৎপরতা চালান। কৃষ্ণধন বাবুর এ প্রচেষ্টায় সহযোগিতা করেন দুবলহাটি, বলিহার ও মহাদেবপুরের জমিদাররা, অর্থশালী ব্যবসায়ী, জোতদার ও স্থানীয় গাঁজাচাষিরা।
১৯৬৯ সালে প্রকাশিত নওগাঁ কেডি হাইস্কুল নামে বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, এটি স্থাপনে প্রথম উদ্যোগ নেন তদানীন্তন সাব-ডেপুটি কালেক্টর ও গাঁজা সোসাইটির সুপারভাইজার কৃষ্ণধন বাগচী। তার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ হস্তক্ষেপে স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য ভূমি এবং অর্থ-সম্পত্তির পর্বততুল্য সমস্যার ত্বরিত সমাধান হয়। তিনি আত্মনিয়োগ করেন ধ্বংসপ্রায় স্কুলটির পুনর্নির্মাণ কাজে। পরিকল্পনা অনুযায়ী স্কুলগৃহ নির্মাণের উদ্দেশ্যে অর্থ সংগ্রহের নিরলস প্রচেষ্টা চালাতে থাকেন। হাত পাতলেন বিভিন্ন মহলে। হাত পাতলেন জমিদার-জোতদারদের কাছে। কিন্তু এই ইচ্ছা পূর্ণ হওয়ার আগেই ১৮৯৫ সালে কলেরায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি।
বাবু কৃষ্ণধন বাগচীর অপরিণত তিরোধানের কারণে বিদ্যালয়ের নির্মাণকাজ শুরু করতে কিছুটা বিলম্ব হয়। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার প্রায় ১৫ বছর পর ১৮৯৯ সালে নওগাঁ মহকুমার সে সময়ের এসডিও বাবু অম্বিকা প্রসাদ এই হাই স্কুলের পাকা গৃহ নির্মাণে এগিয়ে আসেন। তিনি কৃষ্ণধনের আদায় করা অর্থেই কাজ করাতে সক্ষম হন।
সূত্র জানায়, সে সময় বিদ্যালয় ভবনটি নির্মাণ করা হয় ইংরেজি ‘এইচ’ বর্ণের আকারে। পরে বিদ্যালয়ের পৃথক বেশ কয়েকটি ভবন নির্মাণ করা হলেও পুরাতন ভবনটির একাংশে একই আদলে দ্বিতল ও ত্রিতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ১৯৭০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে বিদ্যালয়টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা লাভ করে ‘নওগাঁ কেডি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়’ নাম ধারণ করে।
বর্তমানে এ বিদ্যালয়টির প্রভাতী ও দিবা শাখায় (তৃতীয় থেকে দশম শ্রেণি) প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। এখানে ২০১০ সালে শুধু তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র ভর্তির মধ্য দিয়ে উভয় শিফটের শ্রেণি কার্যক্রম চালু হয়। তবে পূর্ণাঙ্গভাবে উভয় শিফট চালু হয় ২০১১ সাল থেকে। এখানে মোট শিক্ষকের পদ ৫০টি। সরকারি ও বেসকারি মিলে মোট কর্মচারীর সংখ্যা ১২। শ্রেণিকক্ষ রয়েছে ২৭টি।
বর্তমানে স্কুলটিতে রয়েছে মিলনায়তন, ছাত্রাবাস, দুটি খেলার মাঠ, বিজ্ঞানাগার, গ্রন্থাগার, আইসিটি ভবন, মালটিমিডিয়া ক্লাসরুম, শহীদ মিনার, আধুনিক ত্রিতল একাডেমিক ভবন, অভিভাবক ছাউনি, নতুন ছয়তলা ভবন। এ ছাড়া ১৯৪১ সাল থেকে স্কুলের সাময়িকী ‘সাধনা’ প্রকাশিত হয়ে আসছে। ২০১৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর কেডি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রদের সংগঠন ‘কেডিয়ান’ গঠিত হয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় স্থানীয় সর্বদলীয় স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিষদের কর্মস্থল ছিল কেডি উচ্চ বিদ্যালয়। এখান থেকে মুক্তিযুদ্ধের স্থানীয় সব কর্মসূচির পরিকল্পনা করা হতো। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় কেডি স্কুল থেকে অংশগ্রহণকারী সাবেক ছাত্র ও শিক্ষক মুক্তিযোদ্ধারা হলেনÑসাবেক মন্ত্রী মো. আব্দুল জলিল, মো. আফজাদ হোসেন তরফদার, আকতারুজ্জামান রঞ্জু, শহীদ কাজী নুরুন নবী, আলতাফুল হক চৌধুরী, আফজাল হোসেন, খন্দকার মকবুল হোসেন, শফিকুল ইসলাম খান, মমিনুল হক (ভুটি ভাই), তৌফিক-ই-ইলাহী, এমএ রকিব, মোজাহারুল হক (পোনা ভাই), সাবেক সংসদ সদস্য একেএম মোরশেদ, অধ্যাপক নুরউল হক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এএমএম মোশারফ হোসেন, অধ্যাপক আতাউল হক সিদ্দিকী, বাংলা একাডেমির তৌহিদুর রহমান বাচ্চু, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ফুটবল খেলোয়াড় জাকারিয়া পিন্টু, হামিদুর রহমান, মোশারফ হোসেন প্রমুখ।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে শহীদ হন নাজমুল হক (উপপরিচালক, দুর্নীতি দমন কমিশন), কুদরত-ই-এলাহী (এডিসি), কাজী নুরুন নবী (এমবিবিএস শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন), আবদুল্লাহ আল মামুন, ইদ্রিস আলী (এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন), ইব্রাহিম আলী খন্দকার, এসএম মতিউল ইসলাম, জয়নাল আবেদীন, সানাউল্লাহ, হিম্মত আলী, আব্দুর রাজ্জাক।
সূত্র জানায়, এই বিদ্যাপীঠের ছাত্র ছিলেন শিক্ষাবিদ কুমুদনাথ দাস, কবি তালিম হোসেন, শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও রাজনীতিবিদ হুমায়ুন কবির, রাজনীতিবিদ আব্দুল জলিল, লেখক খান সাহেব মো. আফজাল হোসেন, বাংলাদেশ মেডিকেল ফিজিক্সের পথিকৃৎ অধ্যাপক ড. গোলাম আবু জাকারিয়া প্রমুখ।
প্রতিবেদনটির তথ্য সংগ্রহে গিয়ে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠাকাল থেকে আজ পর্যন্ত যেসব কৃতী শিক্ষার্থী কেডি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে গিয়ে দেশ-বিদেশে প্রশংসনীয় সাফল্য অর্জন করেছেন, তাদের মধ্যে সাহিত্যিক হুমায়ুন কবিরের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। ইংরেজি ও বাংলায় লেখা দর্শন, সাহিত্য, রাজনীতি ও সংস্কৃতিবিষয়ক প্রায় ২০টির অধিক বইয়ের লেখক হুমায়ুন কবিরের দুটি উপন্যাস এবং তিন খণ্ডের কবিতার বই রয়েছে। তার নদী ও নারী উপন্যাস এবং শরৎচন্দ্রের ওপর গবেষণাকাজ বৈজ্ঞানিক যুক্তি নিষ্ঠার এক অপূর্ব দলিল। মাওলানা আজাদের পৃথিবীখ্যাত রাজনৈতিক গ্রন্থ ও আত্মজীবনী ‘ইন্ডিয়া উইনস ফ্রিডম’-এর সম্পাদক ছিলেন হুমায়ুন কবির। ঐতিহাসিক গ্রন্থটির ইংরেজি শ্রুতিলেখকও ছিলেন তিনি। আর এটির বাংলা অনুবাদক কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়। তারা দুজনই ছিলেন এ বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রউফ খান বলেন, ‘উত্তরাঞ্চলের বিদ্যাপীঠ হিসেবে স্কুলটি যেন ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারে, সে চেষ্টা করে যাচ্ছি। সামাজিক অবক্ষয়ের এ সময়ও ছাত্রদের আগলে রাখতে পেরেছি। দেশ-জাতি গঠনে প্রায় দেড়শ বছর আমাদের ছাত্ররা ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। ভালো ফল করার ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছি আমরা।’
কেডি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র ও নওগাঁ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. শরিফুল ইসলাম খান বলেন, আমার তিন পুরুষ এখানকার ছাত্র হওয়ায় আমি গর্বিত। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এই বিদ্যালয়কে নিয়ে গবেষণা করলে আরো অনেক তথ্য বেরিয়ে আসবেÑযা এখনো জানা সম্ভব হয়নি। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এটা প্রয়োজন।’
বিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক (ইংরেজি) এবং বিদ্যালয়ের ‘সাধনা’ ম্যাগাজিনের সম্পাদক মো. আল মামুন বলেন, ‘ম্যাগাজিনটি স্কুলের প্রতিচ্ছবি বয়ে বেড়ায়। সাধনা প্রকাশের কাজ করতে গিয়ে জেনেছি এই বিদ্যালয়ের অনেক অজানা ইতিহাস। আমাদের সাবেক ছাত্ররা যারা দেশ-বিদেশে বিভিন্ন অঙ্গনে অবদান রেখে চলেছেন, আমরা তাদের স্মরণ করি।’
নওগাঁর অন্যতম বিদ্যাপীঠ কৃষ্ণধন (কেডি) সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। অবিভক্ত বাংলার অন্যতম উচ্চ বিদ্যালয় হিসেবে এ প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয়। তখন থেকেই এ অঞ্চলের আলোকবর্তিকা হয়ে রয়েছে বিদ্যালয়টি। দেশ-বিদেশে আলো ছড়িয়েছেন ঐতিহ্যের ১৪২ বছরে থাকা বিদ্যালয়টির হাজারো শিক্ষার্থী। এর মধ্যে রয়েছেন বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজ্ঞ ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, সচিব, মন্ত্রী, রাজনীতিবিদসহ আরো বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। তারা স্ব-স্ব ক্ষেত্রে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে এ প্রতিষ্ঠান তথা দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন।
ইতিহাস ঘেঁটে জানা গেছে, নওগাঁ শহরে ১৮৮৪ সালে একটি হাই স্কুল স্থাপিত হয়, যা পরে নওগাঁ কেডি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় নামে খ্যাতি লাভ করে। সেদিনের বৃহত্তর রাজশাহী জেলায় এটি ছিল তৃতীয় উচ্চ বিদ্যালয়। সে সময় নওগাঁ শহরের বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও এখানে একটি উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টা চালান।
অন্যদিকে শাসনকাজের সুবিধার জন্য ব্রিটিশ সরকার প্রত্যেকটি মহকুমায় একটি করে ইংরেজি উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় তৎপর হয় এবং এরই ধারাবাহিকতায় নওগাঁ মহকুমায় একটি উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে যথেষ্ট আগ্রহ প্রকাশ করে। বিদ্যোৎসাহী হওয়ায় সে সময়ে নওগাঁর সাব-ডেপুটি কালেক্টর ও গাঁজা সোসাইটির সুপারভাইজর কৃষ্ণধন বাবু এই হাইস্কুল স্থাপনে বিশেষ তৎপরতা চালান। কৃষ্ণধন বাবুর এ প্রচেষ্টায় সহযোগিতা করেন দুবলহাটি, বলিহার ও মহাদেবপুরের জমিদাররা, অর্থশালী ব্যবসায়ী, জোতদার ও স্থানীয় গাঁজাচাষিরা।
১৯৬৯ সালে প্রকাশিত নওগাঁ কেডি হাইস্কুল নামে বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, এটি স্থাপনে প্রথম উদ্যোগ নেন তদানীন্তন সাব-ডেপুটি কালেক্টর ও গাঁজা সোসাইটির সুপারভাইজার কৃষ্ণধন বাগচী। তার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ হস্তক্ষেপে স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য ভূমি এবং অর্থ-সম্পত্তির পর্বততুল্য সমস্যার ত্বরিত সমাধান হয়। তিনি আত্মনিয়োগ করেন ধ্বংসপ্রায় স্কুলটির পুনর্নির্মাণ কাজে। পরিকল্পনা অনুযায়ী স্কুলগৃহ নির্মাণের উদ্দেশ্যে অর্থ সংগ্রহের নিরলস প্রচেষ্টা চালাতে থাকেন। হাত পাতলেন বিভিন্ন মহলে। হাত পাতলেন জমিদার-জোতদারদের কাছে। কিন্তু এই ইচ্ছা পূর্ণ হওয়ার আগেই ১৮৯৫ সালে কলেরায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি।
বাবু কৃষ্ণধন বাগচীর অপরিণত তিরোধানের কারণে বিদ্যালয়ের নির্মাণকাজ শুরু করতে কিছুটা বিলম্ব হয়। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার প্রায় ১৫ বছর পর ১৮৯৯ সালে নওগাঁ মহকুমার সে সময়ের এসডিও বাবু অম্বিকা প্রসাদ এই হাই স্কুলের পাকা গৃহ নির্মাণে এগিয়ে আসেন। তিনি কৃষ্ণধনের আদায় করা অর্থেই কাজ করাতে সক্ষম হন।
সূত্র জানায়, সে সময় বিদ্যালয় ভবনটি নির্মাণ করা হয় ইংরেজি ‘এইচ’ বর্ণের আকারে। পরে বিদ্যালয়ের পৃথক বেশ কয়েকটি ভবন নির্মাণ করা হলেও পুরাতন ভবনটির একাংশে একই আদলে দ্বিতল ও ত্রিতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ১৯৭০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে বিদ্যালয়টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা লাভ করে ‘নওগাঁ কেডি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়’ নাম ধারণ করে।
বর্তমানে এ বিদ্যালয়টির প্রভাতী ও দিবা শাখায় (তৃতীয় থেকে দশম শ্রেণি) প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। এখানে ২০১০ সালে শুধু তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র ভর্তির মধ্য দিয়ে উভয় শিফটের শ্রেণি কার্যক্রম চালু হয়। তবে পূর্ণাঙ্গভাবে উভয় শিফট চালু হয় ২০১১ সাল থেকে। এখানে মোট শিক্ষকের পদ ৫০টি। সরকারি ও বেসকারি মিলে মোট কর্মচারীর সংখ্যা ১২। শ্রেণিকক্ষ রয়েছে ২৭টি।
বর্তমানে স্কুলটিতে রয়েছে মিলনায়তন, ছাত্রাবাস, দুটি খেলার মাঠ, বিজ্ঞানাগার, গ্রন্থাগার, আইসিটি ভবন, মালটিমিডিয়া ক্লাসরুম, শহীদ মিনার, আধুনিক ত্রিতল একাডেমিক ভবন, অভিভাবক ছাউনি, নতুন ছয়তলা ভবন। এ ছাড়া ১৯৪১ সাল থেকে স্কুলের সাময়িকী ‘সাধনা’ প্রকাশিত হয়ে আসছে। ২০১৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর কেডি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রদের সংগঠন ‘কেডিয়ান’ গঠিত হয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় স্থানীয় সর্বদলীয় স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিষদের কর্মস্থল ছিল কেডি উচ্চ বিদ্যালয়। এখান থেকে মুক্তিযুদ্ধের স্থানীয় সব কর্মসূচির পরিকল্পনা করা হতো। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় কেডি স্কুল থেকে অংশগ্রহণকারী সাবেক ছাত্র ও শিক্ষক মুক্তিযোদ্ধারা হলেনÑসাবেক মন্ত্রী মো. আব্দুল জলিল, মো. আফজাদ হোসেন তরফদার, আকতারুজ্জামান রঞ্জু, শহীদ কাজী নুরুন নবী, আলতাফুল হক চৌধুরী, আফজাল হোসেন, খন্দকার মকবুল হোসেন, শফিকুল ইসলাম খান, মমিনুল হক (ভুটি ভাই), তৌফিক-ই-ইলাহী, এমএ রকিব, মোজাহারুল হক (পোনা ভাই), সাবেক সংসদ সদস্য একেএম মোরশেদ, অধ্যাপক নুরউল হক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এএমএম মোশারফ হোসেন, অধ্যাপক আতাউল হক সিদ্দিকী, বাংলা একাডেমির তৌহিদুর রহমান বাচ্চু, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ফুটবল খেলোয়াড় জাকারিয়া পিন্টু, হামিদুর রহমান, মোশারফ হোসেন প্রমুখ।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে শহীদ হন নাজমুল হক (উপপরিচালক, দুর্নীতি দমন কমিশন), কুদরত-ই-এলাহী (এডিসি), কাজী নুরুন নবী (এমবিবিএস শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন), আবদুল্লাহ আল মামুন, ইদ্রিস আলী (এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন), ইব্রাহিম আলী খন্দকার, এসএম মতিউল ইসলাম, জয়নাল আবেদীন, সানাউল্লাহ, হিম্মত আলী, আব্দুর রাজ্জাক।
সূত্র জানায়, এই বিদ্যাপীঠের ছাত্র ছিলেন শিক্ষাবিদ কুমুদনাথ দাস, কবি তালিম হোসেন, শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও রাজনীতিবিদ হুমায়ুন কবির, রাজনীতিবিদ আব্দুল জলিল, লেখক খান সাহেব মো. আফজাল হোসেন, বাংলাদেশ মেডিকেল ফিজিক্সের পথিকৃৎ অধ্যাপক ড. গোলাম আবু জাকারিয়া প্রমুখ।
প্রতিবেদনটির তথ্য সংগ্রহে গিয়ে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠাকাল থেকে আজ পর্যন্ত যেসব কৃতী শিক্ষার্থী কেডি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে গিয়ে দেশ-বিদেশে প্রশংসনীয় সাফল্য অর্জন করেছেন, তাদের মধ্যে সাহিত্যিক হুমায়ুন কবিরের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। ইংরেজি ও বাংলায় লেখা দর্শন, সাহিত্য, রাজনীতি ও সংস্কৃতিবিষয়ক প্রায় ২০টির অধিক বইয়ের লেখক হুমায়ুন কবিরের দুটি উপন্যাস এবং তিন খণ্ডের কবিতার বই রয়েছে। তার নদী ও নারী উপন্যাস এবং শরৎচন্দ্রের ওপর গবেষণাকাজ বৈজ্ঞানিক যুক্তি নিষ্ঠার এক অপূর্ব দলিল। মাওলানা আজাদের পৃথিবীখ্যাত রাজনৈতিক গ্রন্থ ও আত্মজীবনী ‘ইন্ডিয়া উইনস ফ্রিডম’-এর সম্পাদক ছিলেন হুমায়ুন কবির। ঐতিহাসিক গ্রন্থটির ইংরেজি শ্রুতিলেখকও ছিলেন তিনি। আর এটির বাংলা অনুবাদক কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়। তারা দুজনই ছিলেন এ বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রউফ খান বলেন, ‘উত্তরাঞ্চলের বিদ্যাপীঠ হিসেবে স্কুলটি যেন ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারে, সে চেষ্টা করে যাচ্ছি। সামাজিক অবক্ষয়ের এ সময়ও ছাত্রদের আগলে রাখতে পেরেছি। দেশ-জাতি গঠনে প্রায় দেড়শ বছর আমাদের ছাত্ররা ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। ভালো ফল করার ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছি আমরা।’
কেডি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র ও নওগাঁ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. শরিফুল ইসলাম খান বলেন, আমার তিন পুরুষ এখানকার ছাত্র হওয়ায় আমি গর্বিত। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এই বিদ্যালয়কে নিয়ে গবেষণা করলে আরো অনেক তথ্য বেরিয়ে আসবেÑযা এখনো জানা সম্ভব হয়নি। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এটা প্রয়োজন।’
বিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক (ইংরেজি) এবং বিদ্যালয়ের ‘সাধনা’ ম্যাগাজিনের সম্পাদক মো. আল মামুন বলেন, ‘ম্যাগাজিনটি স্কুলের প্রতিচ্ছবি বয়ে বেড়ায়। সাধনা প্রকাশের কাজ করতে গিয়ে জেনেছি এই বিদ্যালয়ের অনেক অজানা ইতিহাস। আমাদের সাবেক ছাত্ররা যারা দেশ-বিদেশে বিভিন্ন অঙ্গনে অবদান রেখে চলেছেন, আমরা তাদের স্মরণ করি।’
চলতি বছরের ডিসেম্বরে নির্বাচনি তফসিল ঘোষণা হলে বর্তমান সরকার আর কোনো প্রকল্পের উদ্বোধন করতে পারবে না। সে কারণে দ্রুত পিডি নিয়োগ করে নভেম্বরেই কাজ শুরু করতে হবে। সেটি করা না হলে সারা দেশে এই আন্দোলন ছড়িয়ে দেওয়া হবে। প্রয়োজনে চীন টাকা না দিলেও নিজের টাকা দিয়ে কাজ শুরুর দাবি জানান তারা।
১ ঘণ্টা আগেময়মনসিংহের গৌরীপুরে জহিরুল ইসলাম মিঠু হত্যা মামলায় পলাতক দুই ভাইকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
২ ঘণ্টা আগেপরিবারের পক্ষ থেকে জানা গেছে, ১১ বছর বয়সে ১৯৩৫ সালে শামসুদ্দিন ব্রিটিশ-ইন্ডিয়ান আর্মিতে যোগ দিয়েছিলেন। তার সৈনিক নম্বর ছিল ৬৪১৪৬০। ১৯৩৯ থেকে শুরু করে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত পুরো ছয় বছর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ময়দানে ছিলেন এ যোদ্ধা।
২ ঘণ্টা আগেচট্টগ্রামের হাটহাজারী থানার ভেতরে পুলিশের ওপর চড়াও হয়েছেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের এক সাবেক নেতা। ঘটনার পর তাকে আটক করেছে পুলিশ। বুধবার দুপুর ২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আটক মো. রায়হান হাটহাজারি কলেজ শিবিরের সাবেক সভাপতি।
২ ঘণ্টা আগে