রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল
মঈন উদ্দিন ও এম শামীম, রাজশাহী
উত্তরবঙ্গের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের গৌরবের প্রতীক রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল। প্রায় ২০০ বছর ধরে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে আসছে দেশের অন্যতম প্রাচীন এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। ১৮২৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া বিদ্যালয়টির নাম রাখা হয় বাউলিয়া ইংলিশ স্কুল।
১৮৩৬ সালে কোম্পানি সরকারের শিক্ষা কমিশনার উইলিয়াম অ্যাডামের সুপারিশে ৭৮ জন হিন্দু, দুজন মুসলমান এবং তিনজন খ্রিষ্টান ছাত্রসহ মোট ৮৩ শিক্ষার্থী নিয়ে ‘বাউলিয়া ইংলিশ স্কুল’ সরকারি বিদ্যালয়ের মর্যাদা পেয়ে ‘বোয়ালিয়া জেলা স্কুল’ হিসেবে উন্নীত হয়। ১৮৭৩ সালে এটি হয়ে ওঠে রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল।
দেশের ইংরেজি শিক্ষার প্রসার লাভের জন্য লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক তার ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় ১৮২৮ সালে ‘বাউলিয়া ইংলিশ স্কুল’ নামে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। পদ্মানদীর তীরে বড়কুঠির কাছাকাছি খড়ের দোচালা ঘরের বারান্দায় প্রথম এটির কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথমদিকে এটি ছিল একটি অবৈতনিক ব্যক্তিগত বিদ্যালয়। সে সময় বিদ্যালয়ের জন্য কোনো সরকারি সাহায্য বরাদ্দ না থাকায় রাজশাহীতে বসবাসকারী ইংরেজ কর্মকর্তা, আইনব্যবসায়ী এবং নাটোর দিঘাপতিয়া, দুবলহাটি, পুঠিয়া ও বলিহারের জমিদারদের সাহায্য ও সহযোগিতায় বিদ্যালয়টি চলতে থাকে।
তৎকালীন শিক্ষা বিস্তারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উইলিয়াম অ্যাডাম ১৮৩৫ সালে নাটোরে শিক্ষা জরিপ শেষে রাজশাহী বাউলিয়া স্কুল পরিদর্শনের পর সরকারের কাছে বিদ্যালয়ের উজ্জ্বল সম্ভাবনা তুলে ধরেন। পরে ১৮৩৬ সালের ২০ জুন বিদ্যালয়টিকে সরকারি করা এবং এটি রাজশাহী জিলা স্কুল হিসেবে অধিগ্রহণ করা হয়। রাজশাহীর সারদাপ্রসাদ বসুকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
এ পর্যন্ত তিনটি দেশের সরকার দ্বারা পরিচালিত হয়েছে স্কুলটি। ফলে পেয়েছে তিন দেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থা। প্রতিধ্বনিত হয়েছে তিনটি দেশের জাতীয় সংগীত। ১৮২৮ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা গেয়েছে ‘গড সেভ দ্য কুইন’ (যুক্তরাজ্যের জাতীয় সংগীত); ১৯৪৮ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত গেয়েছে পাকিস্তানের জাতীয় সংগীত ‘কওমী তারানা’; একইভাবে ১৯৭১ থেকে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা’।
প্রতিষ্ঠানটি ১৯৩৬ সালে শতবর্ষের সমৃদ্ধির জানান দিতে সাবেক-বর্তমানদের নিয়ে ঐতিহাসিক জন্মশতবার্ষিকী পালন করে, যা মহা মিলনমেলায় পরিণত হয়। ২০২৮ সালে ঐতিহাসিক ২০০তম বার্ষিকী উদযাপনের প্রস্তুতি নেওয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা
আন্দোলন-সংগ্রামে অসামান্য অবদান রেখেছে রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল। ১৯২৫ সালের ১২ জুলাই মহাত্মা গান্ধী রাজশাহী শহরে আসেন। তার ডাকে স্বরাজ আন্দোলনে কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্ররা পিকেটিং করে। তারা স্কুলের প্রবেশপথে শুয়ে প্রবেশ পথ বন্ধ করে। বিলাতি কাপড় বর্জন করে এবং তা জনসম্মুখে আগুনে পোড়ায়।
ব্রিটিশবিরোধী তৎকালীন আজাদ হিন্দের আন্দোলনকে আরো বেগবান করার লক্ষ্যে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু ১৯২৮ সালের ১২ এপ্রিল রাজশাহী শহরে আসেন। তার ডাকে রাজশাহীর যুবসমাজে এক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের অনেকেই পরে আজাদ হিন্দ ফৌজে যোগ দেন।
বিদ্যালয়টির শিক্ষক মো. রহমত উল্লাহ ১৯৪২ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত সুভাষ চন্দ্র বসুর নেতৃত্বে স্বদেশি মিলিশিয়া আজাদ হিন্দ ফৌজের সদস্য হয়ে বার্মা ফ্রন্টে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। রাজশাহীতে সুবাষ চন্দ্র বসু রাজশাহী সাধারণ গ্রন্থাগারে অবস্থান করেন।
১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে অবদান
১৯৫২ সালে ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনে ঢাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে বেশ কয়েকজন শহীদ হন। এর প্রতিবাদে সন্ধ্যার পরে ছাত্র-জনতা মিলে একটি শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করে কলেজিয়েট স্কুলের চত্বরে (বর্তমান স্থানটি রাজশাহী কলেজের অংশে পড়েছে)। এই নির্মাণে রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্র আব্দুল রাজ্জাক, নাজমুল হক, মহিউদ্দিন আহমেদ সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। এটি বাংলাদেশের প্রথম ভাষা শহীদদের স্মরণে বাংলাদেশের প্রথম শহীদ মিনার। এটির গায়ে একদিকে লেখা ছিল ‘শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’, অন্যদিকে স্মৃতি স্তম্ভটির গায়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত একটি চরণ লেখা হয়, ‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী, ভয় নাই ওরে ভয় নাই, নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান, ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’।
স্বাধীনতা আন্দোলনে কলেজিয়েট স্কুল
১৯৫৮ সালে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান দেশে সামরিক আইন জারি করেন। আইয়ুব খান ১৯৬২ সালে রাজশাহীতে এলে কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্র শরিফুল ইসলাম সাজু আইয়ুব খানের গাড়িতে ঢিল নিক্ষেপ করে প্রতিবাদ করেন। ১৯৬৯ সালে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ১৮ ফেব্রুয়ারি মিছিলের ওপর ইপিআরের গুলিতে সোনাদীঘি মসজিদের সামনে নুরুল ইসলাম খোকা শহীদ হন। তিনি ছিলেন বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র (এসএসসি ১৯৬৭)।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলামের সফর
কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৯২ সালের নভেম্বরে রাজশাহী (তৎকালীন রামপুর বোয়ালিয়া) শহরে আসেন। তিনি রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের সাবেক ছাত্র অক্ষয় কুমার মৈত্রেয় ও শরৎকুমার রায়ের সঙ্গে বেশ কয়েকটি সাহিত্য আসর করেন। সে সময় রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশনের সভায় পাঠ করেন তার ‘শিক্ষার হেরফের’ প্রবন্ধ। মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা লাভই শিক্ষার্থীদের পক্ষে সবচেয়ে উপযোগী বলে মত দেন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
অন্যদিকে ১৯২৬ সালে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম রাজশাহী মুসলিম ক্লাব-এর প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে কলকাতা থেকে রাজশাহীতে আসেন। কবির আগমন উপলক্ষে রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের ফুলার হোস্টেলের ছাত্ররা তার জন্য মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেন। ভোজে কবি বক্তৃতা ও ভাষণ দেন। এ সময় ‘চল চল চল, ঊর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল’ সংগীতটি পরিবেশন করেন (বাংলাদেশের রণসংগীত)।
বিদ্যালয়কে ঋদ্ধ করেছেন যারা
রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের প্রথম প্রধান শিক্ষক ছিলেন সারদাপ্রসাদ বসু। এ ছাড়া অনেক ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব এখানে পড়াশোনা করেছেন। তাদের অনেকেই নিজের নামেই প্রসিদ্ধ হয়েছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, কবিকান্ত হিসেবে খ্যাত রজনীকান্ত সেন, অক্ষয় কুমার মৈত্রেয়, সুদর্শন চক্রবর্তী, স্যার যদুনাথ সরকার, শরৎ কুমার রায়, মহারাজা জগদিন্দ্রনাথ রায়, খান বাহাদুর এমাদউদ্দিন আহমেদ, জমিদার রায় বাহাদুর ব্রজেন্দ্র মোহন মৈত্র, ঋত্বিক ঘটক, ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া, ড. এমাজউদ্দিন আহমদ, সংগীত জগতের গুরুখ্যাত জেমস প্রমুখ।
জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাসির উদ্দিন বলেন, ‘দূর থেকে আমাদের স্কুলটিকে একটা ছোটগল্প মনে হলেও এটি একটা মহাকাব্য। প্রতিষ্ঠার পর থেকে হাজার হাজার শিক্ষার্থী তাদের ভাগ্য নির্ধারণ করে পৃথিবীর কল্যাণে নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছেন। তাতে স্কুলটির ইতিহাসের পাতা বাড়ে আর আমরা তা শুনে স্বস্তি পাই।’
সাবেক শিক্ষার্থী রুপক বলেন, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের কলেজিয়েট স্কুলে পড়তে পেরে আমি গৌরববোধ করি। শিক্ষকদের আন্তরিক প্রচেষ্টা, মনিটরিং, নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষা নেওয়া। সর্বোপরি স্কুলটি শিক্ষাবান্ধব পরিবেশের জন্য বারবার সেরা হয়েছে।
বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষিকা ড. মোসা. নুরজাহান বেগম বলেন, রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল অবিভক্ত বাংলার প্রথম ইংরেজি স্কুল হিসেবে চালু হয়েছিল। বর্তমানে এটির একটি হোস্টেল রয়েছে যেখানে সুবিধাবঞ্চিত ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের প্রায় বিনা খরচেই থাকার সুবিধা পাচ্ছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে শুধু রাজশাহীতে নয়, বরং সারা দেশে অসামান্য অবদান রেখে চলেছে বিদ্যালয়টি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই বিদ্যালয়টি অসংখ্য গুণী মানুষ তৈরি করেছে, যারা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অসামান্য অবদান রেখেছেন।
নুরজাহান বেগম আরো বলেন, ‘বিদ্যালটির একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলোÑ কালের পরিক্রমায় এটি হারিয়ে যায়নি, বিলুপ্তও হয়নি। ঐতিহ্যের ধারা অব্যাহত রেখে এটি ভবিষ্যতেও শিক্ষার আলোকবর্তিকা হয়ে এগিয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ।’
উত্তরবঙ্গের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ইতিহাসের গৌরবের প্রতীক রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল। প্রায় ২০০ বছর ধরে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে আসছে দেশের অন্যতম প্রাচীন এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। ১৮২৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া বিদ্যালয়টির নাম রাখা হয় বাউলিয়া ইংলিশ স্কুল।
১৮৩৬ সালে কোম্পানি সরকারের শিক্ষা কমিশনার উইলিয়াম অ্যাডামের সুপারিশে ৭৮ জন হিন্দু, দুজন মুসলমান এবং তিনজন খ্রিষ্টান ছাত্রসহ মোট ৮৩ শিক্ষার্থী নিয়ে ‘বাউলিয়া ইংলিশ স্কুল’ সরকারি বিদ্যালয়ের মর্যাদা পেয়ে ‘বোয়ালিয়া জেলা স্কুল’ হিসেবে উন্নীত হয়। ১৮৭৩ সালে এটি হয়ে ওঠে রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল।
দেশের ইংরেজি শিক্ষার প্রসার লাভের জন্য লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক তার ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় ১৮২৮ সালে ‘বাউলিয়া ইংলিশ স্কুল’ নামে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। পদ্মানদীর তীরে বড়কুঠির কাছাকাছি খড়ের দোচালা ঘরের বারান্দায় প্রথম এটির কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথমদিকে এটি ছিল একটি অবৈতনিক ব্যক্তিগত বিদ্যালয়। সে সময় বিদ্যালয়ের জন্য কোনো সরকারি সাহায্য বরাদ্দ না থাকায় রাজশাহীতে বসবাসকারী ইংরেজ কর্মকর্তা, আইনব্যবসায়ী এবং নাটোর দিঘাপতিয়া, দুবলহাটি, পুঠিয়া ও বলিহারের জমিদারদের সাহায্য ও সহযোগিতায় বিদ্যালয়টি চলতে থাকে।
তৎকালীন শিক্ষা বিস্তারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উইলিয়াম অ্যাডাম ১৮৩৫ সালে নাটোরে শিক্ষা জরিপ শেষে রাজশাহী বাউলিয়া স্কুল পরিদর্শনের পর সরকারের কাছে বিদ্যালয়ের উজ্জ্বল সম্ভাবনা তুলে ধরেন। পরে ১৮৩৬ সালের ২০ জুন বিদ্যালয়টিকে সরকারি করা এবং এটি রাজশাহী জিলা স্কুল হিসেবে অধিগ্রহণ করা হয়। রাজশাহীর সারদাপ্রসাদ বসুকে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
এ পর্যন্ত তিনটি দেশের সরকার দ্বারা পরিচালিত হয়েছে স্কুলটি। ফলে পেয়েছে তিন দেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থা। প্রতিধ্বনিত হয়েছে তিনটি দেশের জাতীয় সংগীত। ১৮২৮ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা গেয়েছে ‘গড সেভ দ্য কুইন’ (যুক্তরাজ্যের জাতীয় সংগীত); ১৯৪৮ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত গেয়েছে পাকিস্তানের জাতীয় সংগীত ‘কওমী তারানা’; একইভাবে ১৯৭১ থেকে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা’।
প্রতিষ্ঠানটি ১৯৩৬ সালে শতবর্ষের সমৃদ্ধির জানান দিতে সাবেক-বর্তমানদের নিয়ে ঐতিহাসিক জন্মশতবার্ষিকী পালন করে, যা মহা মিলনমেলায় পরিণত হয়। ২০২৮ সালে ঐতিহাসিক ২০০তম বার্ষিকী উদযাপনের প্রস্তুতি নেওয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা
আন্দোলন-সংগ্রামে অসামান্য অবদান রেখেছে রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল। ১৯২৫ সালের ১২ জুলাই মহাত্মা গান্ধী রাজশাহী শহরে আসেন। তার ডাকে স্বরাজ আন্দোলনে কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্ররা পিকেটিং করে। তারা স্কুলের প্রবেশপথে শুয়ে প্রবেশ পথ বন্ধ করে। বিলাতি কাপড় বর্জন করে এবং তা জনসম্মুখে আগুনে পোড়ায়।
ব্রিটিশবিরোধী তৎকালীন আজাদ হিন্দের আন্দোলনকে আরো বেগবান করার লক্ষ্যে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু ১৯২৮ সালের ১২ এপ্রিল রাজশাহী শহরে আসেন। তার ডাকে রাজশাহীর যুবসমাজে এক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের অনেকেই পরে আজাদ হিন্দ ফৌজে যোগ দেন।
বিদ্যালয়টির শিক্ষক মো. রহমত উল্লাহ ১৯৪২ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত সুভাষ চন্দ্র বসুর নেতৃত্বে স্বদেশি মিলিশিয়া আজাদ হিন্দ ফৌজের সদস্য হয়ে বার্মা ফ্রন্টে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। রাজশাহীতে সুবাষ চন্দ্র বসু রাজশাহী সাধারণ গ্রন্থাগারে অবস্থান করেন।
১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে অবদান
১৯৫২ সালে ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনে ঢাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে বেশ কয়েকজন শহীদ হন। এর প্রতিবাদে সন্ধ্যার পরে ছাত্র-জনতা মিলে একটি শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করে কলেজিয়েট স্কুলের চত্বরে (বর্তমান স্থানটি রাজশাহী কলেজের অংশে পড়েছে)। এই নির্মাণে রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্র আব্দুল রাজ্জাক, নাজমুল হক, মহিউদ্দিন আহমেদ সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। এটি বাংলাদেশের প্রথম ভাষা শহীদদের স্মরণে বাংলাদেশের প্রথম শহীদ মিনার। এটির গায়ে একদিকে লেখা ছিল ‘শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’, অন্যদিকে স্মৃতি স্তম্ভটির গায়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত একটি চরণ লেখা হয়, ‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী, ভয় নাই ওরে ভয় নাই, নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান, ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’।
স্বাধীনতা আন্দোলনে কলেজিয়েট স্কুল
১৯৫৮ সালে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান দেশে সামরিক আইন জারি করেন। আইয়ুব খান ১৯৬২ সালে রাজশাহীতে এলে কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্র শরিফুল ইসলাম সাজু আইয়ুব খানের গাড়িতে ঢিল নিক্ষেপ করে প্রতিবাদ করেন। ১৯৬৯ সালে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ১৮ ফেব্রুয়ারি মিছিলের ওপর ইপিআরের গুলিতে সোনাদীঘি মসজিদের সামনে নুরুল ইসলাম খোকা শহীদ হন। তিনি ছিলেন বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র (এসএসসি ১৯৬৭)।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলামের সফর
কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৯২ সালের নভেম্বরে রাজশাহী (তৎকালীন রামপুর বোয়ালিয়া) শহরে আসেন। তিনি রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের সাবেক ছাত্র অক্ষয় কুমার মৈত্রেয় ও শরৎকুমার রায়ের সঙ্গে বেশ কয়েকটি সাহিত্য আসর করেন। সে সময় রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশনের সভায় পাঠ করেন তার ‘শিক্ষার হেরফের’ প্রবন্ধ। মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা লাভই শিক্ষার্থীদের পক্ষে সবচেয়ে উপযোগী বলে মত দেন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
অন্যদিকে ১৯২৬ সালে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম রাজশাহী মুসলিম ক্লাব-এর প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে কলকাতা থেকে রাজশাহীতে আসেন। কবির আগমন উপলক্ষে রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের ফুলার হোস্টেলের ছাত্ররা তার জন্য মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেন। ভোজে কবি বক্তৃতা ও ভাষণ দেন। এ সময় ‘চল চল চল, ঊর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল’ সংগীতটি পরিবেশন করেন (বাংলাদেশের রণসংগীত)।
বিদ্যালয়কে ঋদ্ধ করেছেন যারা
রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের প্রথম প্রধান শিক্ষক ছিলেন সারদাপ্রসাদ বসু। এ ছাড়া অনেক ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব এখানে পড়াশোনা করেছেন। তাদের অনেকেই নিজের নামেই প্রসিদ্ধ হয়েছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, কবিকান্ত হিসেবে খ্যাত রজনীকান্ত সেন, অক্ষয় কুমার মৈত্রেয়, সুদর্শন চক্রবর্তী, স্যার যদুনাথ সরকার, শরৎ কুমার রায়, মহারাজা জগদিন্দ্রনাথ রায়, খান বাহাদুর এমাদউদ্দিন আহমেদ, জমিদার রায় বাহাদুর ব্রজেন্দ্র মোহন মৈত্র, ঋত্বিক ঘটক, ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া, ড. এমাজউদ্দিন আহমদ, সংগীত জগতের গুরুখ্যাত জেমস প্রমুখ।
জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাসির উদ্দিন বলেন, ‘দূর থেকে আমাদের স্কুলটিকে একটা ছোটগল্প মনে হলেও এটি একটা মহাকাব্য। প্রতিষ্ঠার পর থেকে হাজার হাজার শিক্ষার্থী তাদের ভাগ্য নির্ধারণ করে পৃথিবীর কল্যাণে নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছেন। তাতে স্কুলটির ইতিহাসের পাতা বাড়ে আর আমরা তা শুনে স্বস্তি পাই।’
সাবেক শিক্ষার্থী রুপক বলেন, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের কলেজিয়েট স্কুলে পড়তে পেরে আমি গৌরববোধ করি। শিক্ষকদের আন্তরিক প্রচেষ্টা, মনিটরিং, নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষা নেওয়া। সর্বোপরি স্কুলটি শিক্ষাবান্ধব পরিবেশের জন্য বারবার সেরা হয়েছে।
বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষিকা ড. মোসা. নুরজাহান বেগম বলেন, রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল অবিভক্ত বাংলার প্রথম ইংরেজি স্কুল হিসেবে চালু হয়েছিল। বর্তমানে এটির একটি হোস্টেল রয়েছে যেখানে সুবিধাবঞ্চিত ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের প্রায় বিনা খরচেই থাকার সুবিধা পাচ্ছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে শুধু রাজশাহীতে নয়, বরং সারা দেশে অসামান্য অবদান রেখে চলেছে বিদ্যালয়টি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই বিদ্যালয়টি অসংখ্য গুণী মানুষ তৈরি করেছে, যারা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অসামান্য অবদান রেখেছেন।
নুরজাহান বেগম আরো বলেন, ‘বিদ্যালটির একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলোÑ কালের পরিক্রমায় এটি হারিয়ে যায়নি, বিলুপ্তও হয়নি। ঐতিহ্যের ধারা অব্যাহত রেখে এটি ভবিষ্যতেও শিক্ষার আলোকবর্তিকা হয়ে এগিয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ।’
এ সময় অসাবধানতাবশত তার শরীরে সার্ভিস তার স্পর্শ করলে তিনি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে গুরুতর আহত হন। পরে স্থানীয়রা দ্রুত তাকে কুয়াকাটা ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
৮ মিনিট আগেবুধবার ভোর রাতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানে ২৩০ পিস ইয়াবাসহ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার সাইফুল ইসলাম সাঘাটা উপজেলার কামালেরপাড়া ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক। তিনি ওই এলাকার বারকোনা গ্রামের চান মিয়ার ছেলে।
২১ মিনিট আগেমঙ্গলবার রাতে ১২টার দিকে তিনটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় করে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার সময় স্থানীয় বাসিন্দারা ধাওয়া করে। এসময় চালসহ একটি অটোরিকশা জব্দ করলেও বাকি দুটি রিকশা দ্রুত গতিতে পালিয়ে যায়।
২৭ মিনিট আগেবিএনপি নেতা সামছুল ইসলাম জেলার সদর উপজেলার সাধারণ সম্পাদক। ছাড়া পাওয়া দুই আসামি হলেন, সদর উপজেলার লস্করপুর ইউনিয়ন যুবলীগ সহ-সভাপতি মাহবুবুর রহমান ওরফে রানা (৪০) ও একই কমিটির সদস্য মামুন আহমেদ (৩৮)।
৩৯ মিনিট আগে