আইন পাসের দুই যুগ পর শুরু হচ্ছে ববিপ্রবির কার্যক্রম

সবুর শাহ্ লোটাস, বগুড়া
প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২: ৫৩

আইন পাসের দুই যুগ পর শুরু হতে যাচ্ছে ‘বগুড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববিপ্রবি)’ শিক্ষা কার্যক্রম। নিজস্ব জমি ও স্থায়ী ভবন নেই। ফলে আপাতত অস্থায়ী ক্যাম্পাস হিসেবে জেলার ভোকেশনাল টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে (ভিটিটিআই) চলবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির প্রাথমিক কার্যক্রম। আটটি বিভাগ ও ১৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে চালু হতে যাওয়া দেশের ৫৫তম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টি হবে এটি।

চলতি বছরের ১৮ আগস্ট অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ বাজেট-১ ও অনুবিভাগ বাজেট-২ শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব শাহরিয়ার জামিল স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বগুড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুকূলে চার কোটি ৬৭ লাখ টাকার বরাদ্দ হয়েছিল। এর আগে বগুড়ার ভিটিটিআইয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির অস্থায়ী ক্যাম্পাস চালুর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) আবেদন করা হয়।

বিজ্ঞাপন

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. কুদরত-ই-জাহান জানিয়েছেন, ভিটিটিআই ভবন নেওয়ার কোনো অনুমোদন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কোনো অর্থও বরাদ্দ পাননি। বরাদ্দ পেলে চলতি বছরই তিনি শিক্ষার্থীদের ভর্তি কার্যক্রম শুরু করবেন।

জানা যায়, ২০০১ সালের ১৫ জুলাই জাতীয় সংসদে বগুড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাস হয়েছিল। বিভিন্ন কারণে বিশ্ববিদ্যালয়টির কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। ২০২৩ সালের ১০ মে বগুড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন বাস্তবায়নে সরকার এসআরও জারি করেছিল। ২০০১ সালে আইন বহাল রেখে ২০১৯ সালে খসড়া নীতিগত অনুমোদন রহিত করা হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ ২০২৩ সালের ১০ মে প্রজ্ঞাপন জারি করে।

বগুড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০১ অনুযায়ী জেলার জামালপুরে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার কথা ছিল। আওয়ামী আমলে জেলা প্রশাসন সদর উপজেলার নুরইল বিলে ক্যাম্পাস স্থাপনের জন্য প্রস্তাব করেছিল। সরকারের একাধিক মন্ত্রী প্রস্তাবিত জায়গা পরিদর্শন করেছিলেন কিন্তু পরবর্তী সময়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি। সে সময় ১২টি বৃহত্তর জেলায় ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনাও তৎকালীন সরকার গ্রহণ করেছিল।

২০২০ সালের ২৭ জানুয়ারি ২১টি অনুচ্ছেদে সচিবালয় মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে লক্ষ্মীপুর ও বগুড়া জেলায় দুটি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয়। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ২০০১ সালের আইনটি কার্যকর করে বিশ্ববিদ্যালয়টি চালু করার অনুমোদন দিয়েছে। ২০২৫ সালের ৩ জুন বগুড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক ড. মো. কুদরত-ই-জাহানকে উপাচার্য নিয়োগ দেন। ৪ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভিসি হিসেবে তিনি যোগদান করেন।

উপাচার্য অধ্যাপক কুদরত-ই-জাহান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বগুড়া বঞ্চিত। ২০০১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার কথা থাকলেও বৈষম্যের কারণে ২০২৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয় শুরু হতে যাচ্ছে। কিছু বিষয়ের চাহিদায় আবেদন হয়েছে। বিষয়গুলোর অনুমোদন হলে ভর্তি শুরু করা যাবে। অর্থ বরাদ্দের চিঠি অনুমোদন হয়েছে কিন্তু বরাদ্দের টাকা না আসাতে নিয়োগ ও শিক্ষা কর্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না।

তিনি আরো বলেন, আগামী ২০২৬-২৭ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তির মাধ্যমে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরু করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস চূড়ান্ত না হওয়ায় ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াও শুরু হয়নি। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অস্থায়ী ক্যাম্পাসেই আপাতত ববিপ্রবির কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হাছানাত আলী বগুড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বরাদ্দ সম্পর্কে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, এখন আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে শিক্ষা কার্যক্রম চালু হওয়ার মধ্য দিয়ে বগুড়াবাসীর প্রত্যাশা পূর্ণ হবে।

বগুড়ার জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা বলেন, বগুড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এখনো অনেক কাজ বাকি। প্রাথমিকভাবে চার কোটি ৬৭ লাখ টাকা বরাদ্দ মিলেছে। ভবিষ্যতে আরো বরাদ্দ আসবে।

বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ ড. শওকত আলম মীর বলেন, বগুড়ার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলায় এতদিন বিশ্ববিদ্যালয় না থাকাটা লজ্জাজনক। তিনি জেলা প্রশাসকের নিরলস প্রচেষ্টার ভূয়সী প্রশংসা করেন।

বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা বলেন, দীর্ঘদিন পরে হলেও উপাচার্য নিয়োগ হয়েছে। এখন দ্রুত কার্যক্রম শুরু হলে বগুড়াবাসী ভীষণ আনন্দিত হবে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত