রংপুরের পীরগাছা উপজেলার শল্লার বিল আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বিতরণে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে স্থানীয় ভূমিহীনরা ইউএনও অফিস ঘেরাও করেন। রোববার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত উপজেলার অন্নদানগর ইউনিয়নের ভূমিহীনরা তাদের অভিযোগ জানাতে ইউএনও অফিসের সামনে জড়ো হয়ে ঘেরাও করেন।
এ সময় অন্নাদনগর ইউনিয়নের মংলা গ্রামের বাসিন্দা ভূমিহীন মফিজন বেগম বলেন, আমার থাকার ঘর নেই, বারবার আবেদন করেও ঘর পাইনি। কেন ঘর পেলাম না, সেটা জানার জন্য আজ এখানে এসেছি।
রিনা পারভিন বলেন, আমি মানুষের ঘরদুয়ারে পড়ে থাকি। শল্লার বিলে আমাকে একটি ঘর দেওয়ার কথা ছিল; কিন্তু সর্বশেষ ঘর দেওয়া হয়নি। বিশেষ করে যারা টাকা দিতে পারেনি, তাদের ঘর দেওয়া হয়নি।
গৃহহীনরা আমার দেশকে বলেন, অন্নদানগর ইউনিয়নের প্রকৃত ভূমিহীনদের ঘর না দিয়ে রংপুর শহর, গাইবান্ধা, বগুড়া, লালমনিরহাটসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে টাকাওয়ালাদের এনে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর দেওয়া হয়েছে। মরিয়ম বেগম (৬০) বলেন, আমার স্বামীর কাছে আফাজ ও আল আমিন ২০ হাজার টাকা চেয়েছিল, দিতে পারিনি বলে ঘর দেওয়া হয়নি। ছহিরন বেগম বলেন, এ এলাকায় যাদের বাড়িঘর ও আবাদি জমি আছে, যারা ২০-৩০ হাজার টাকা দিয়ে ইউএনওর টোকেন নিয়েছে, তারাই শুধু ঘর পেয়েছে। যাদের টাকা নেই, তাদের ঘরও নেই।
অন্নদানগরের ইউপি সদস্য মাসুদ ও রিয়াজুর ইসলাম আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সহমত পোষণ করে আমার দেশকে বলেন, আমাদের ইউনিয়নের ভূমিহীনদের দাবি যৌক্তিক। শল্লার বিল আশ্রয়ণ প্রকল্পে কিছু লোক একাধিক ঘর বরাদ্দ নিয়েছেন, এমনকি যাদের জমি ও বাড়ি আছেÑতারাও ঘর পেয়েছেন। ঘর বিতরণে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। এতে করে প্রকৃত ভূমিহীন ও গৃহহীনরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন ইউপি সদস্যরা।
ভূমিহীনদের দাবি, তাদের নামে বরাদ্দকৃত ঘর বিক্রি, ভাড়া এবং অবৈধভাবে দখল করে রাখা হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বিতরণে অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে এবং কিছু প্রভাবশালী নিয়ম না মেনে একাধিক ঘর বরাদ্দ নিয়েছেন। এতে বঞ্চিত হয়েছেন প্রকৃত ভূমিহীনরা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ইফতিসাম প্রীতি আমার দেশকে বলেন, ইউএনও, এসি ল্যান্ড, পিআইও, অন্নদানগর ইউনিয়নের প্রশাসক মিলে ঘর বিতরণ কমিটি করা হয়। সেই কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক ঘর বিতরণ করা হয়েছে। এতে কোনো ভুলত্রুটি হয়ে থাকলে তদন্তসাপেক্ষে প্রকৃত ভূমিহীনদের ঘর বরাদ্দ দেওয়া হবে।

