হাকিমপুরে চিকিৎসককে মারধরের অভিযোগ স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার বিরুদ্ধে

উপজেলা প্রতিনিধি, (হাকিমপুর) দিনাজপুর
প্রকাশ : ০১ আগস্ট ২০২৫, ০২: ১৮

দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীর ছাড়পত্র দেওয়াকে কেন্দ্র করে মশিউর রহমান নামের এক চিকিৎসককে মারধরের অভিযোগ উঠেছে আব্দুলাহ আল মামুন নামের এক স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার বিরুদ্ধে। এ ঘটনার প্রতিবাদে প্রায় দেড়ঘণ্টা কার্যক্রম বন্ধ রাখে হাসপাতালে কর্মরতরা।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ২টার দিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের সামনে এই ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত আব্দুল্লাহ আল মামুন হাকিমপুর পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক।

হাসপাতালের ২নং কেবিনে থাকা রোগীর স্বজন ফাইম বাবু বলেন, আমার বাবাকে দেখার পরে পাশে ৩নং কেবিনে ঢোকে ডাক্তার। এসময় সেখানে থাকা রোগীকে বাড়ি চলে যাওয়ার কথা বলে ডাক্তার। এ নিয়ে ডাক্তার ও রোগীর মাঝে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি দেখা দেয়। পরে আমি নিচ থেকে ঔষধ নিয়ে এসে শুনি তারা ডাক্তারকে মারধর করেছে ।

হাসপাতালে কর্মরত ফয়সাল হোসেন বলেন, দুপুর দেড়টার দিকে কয়েকজন ব্যক্তি স্যারকে রুম থেকে বাইরে আসতে বলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই কয়েকজন ব্যক্তি গিয়ে স্যারকে মুখে ঘুষি ও শরীরে লাথি মারতে থাকে। সাথে সাথে আমরা গিয়ে সেখানে তাদেরকে আটকানোর চেষ্টা করি। কোনভাবেই তাদেরকে থামানো যাচ্ছিল না। জরুরি বিভাগ থেকে টেনে নিয়ে হাসপাতালের সামনে ৪/৫ জন তার গলা চেপে ধরে। আমি আটকাতে গিয়ে তাদের হামলায় আহত হয়।

ভুক্তভোগী চিকিৎসক মশিউর রহমান জানান, উমর ফারুক ও সুখি নামের দুজন রোগী আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ১৪দিন ধরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৩নং কেবিনে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাদের চিকিৎসা চলমান আছে তাদের বড়ধরনের কোন সমস্যা নেই। সকালে রাউন্ডে গিয়ে অবস্থা ভালো হওয়ায় তাদের বাড়িতে বিশ্রাম নেওয়ার কথা বলা হয়। সেই লক্ষ্যে তাদের দুজনকে ছুটি দেওয়ার কথা জানালে তারা রেগে যায় এবং খারাপ ব্যবহার করে ছুটি নিবে না বলে জানায়। এরপরে আমাকেসহ নার্সদের হুমকি ধামকি দেয়। পরবর্তীতে দুপুর ১২টার দিকে মামুন নামের স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা হুমকি দেয় তাকে ছুটি না দেওয়ার জন্য। কিন্তু আমি সেই রোগীকে ছুটি দিয়ে দেয়। দুপুর দেড়টার একটু পরে জরুরি বিভাগের সামনে পেয়ে মামুন তার সহযোগীরা আমাকে আক্রমণ করে।

হাকিমপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমরা হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকসসহ সকল কর্মকর্তা কর্মচারী নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। সেই সাথে এই ঘটনাকে ঘিরে সকলেই হতাশ ও ক্ষুব্ধ। হাসপাতালে মাত্র ২ জন চিকিৎসক দিয়ে উপজেলার সকল মানুষের চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এমন সময়ে এই ধরনের হীনমন্যতামুলক আচরণ ও আক্রমণ কোনভাবেই সহ্য করার মত নয়। আমরা এই ঘটনার আশু প্রতিকার ও যথাযথ বিচার প্রত্যাশা করছি। এবিষয়ে সিভিল সার্জন স্যারকে অবগত করা হয়েছে।

অভিযুক্ত মামুন বলেন, ডাক্তার আমাকে ধাক্কা দেয়, তখন এই ঘটনা ঘটে। তবে আমি তাকে মারিনি, আমার সাথের লোকজন এই ঘটনা ঘটিয়েছে। উনার মোবাইল ফোন ঘটনার পরপরই ফেরত দেওয়া হয়েছে।

হাকিমপুর থানার ওসি (তদন্ত) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দুপুরের দিকে হাসপাতাল থেকে ডাক্তার পরিচয়ে একজন ফোন করে বলেন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ডাক্তারকে মারপিট করা হচ্ছে। সংবাদ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মোবাইল টিম পাঠানো হয়। কিছুক্ষণ পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমাকে বিষয়টি জানালে আমি নিজে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। এসময় ডাক্তারদের সাথে কথা বলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক দেখতে পায়। তবে এবিষয়ে যদি ডাক্তাররা কোন ধরনের আইনগত সহায়তা চান বা কোন অভিযোগ দেন তাহলে বিধি মোতাবেক সার্বিক আইনগত সহায়তা দেয়া হবে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত