দিনাজপুরের বোচাগঞ্জে এবার শীতের আগমনে জমে উঠেছে খেজুর রস ও খাঁটি গুড়ের নানা উৎসব । উপজেলার ১ নম্বর নাফানগর ইউনিয়নের সুলতানপুর বাজার থেকে তিন কিলোমিটার দক্ষিণে সাদামহল রোড, ডা. সরল চন্দ্র রায়ের বাগান ও রিয়াজুল মোড়ের খেজুর বাগানে ব্যস্ততা বেড়েছে খেজুরের রস সংগ্রহে।
প্রতিদিন ভোরেই গাছিরা রস সংগ্রহে নেমে পড়েন, আর দূরদূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসেন টাটকা খেজুর রসের স্বাদ নিতে। ঝুলন্ত মাটির হাঁড়ি, রস নামানোর টুপটাপ শব্দ আর ভোরের আলো—সব মিলিয়ে পুরো এলাকাকে শীতের এক প্রাণবন্ত উৎসবে পরিণত করছে।
মানুষের ঢল টাটকা রসের স্বাদ নিতে ধনতলা শাহপাড়ার শিক্ষিকা রুমি আক্তার বলেন, শুনেছিলাম এখানে কাঁচা খেজুরের রস পাওয়া যায়। তাই ভাই, বোন, বোনজামাই সবাই মিলে এসেছি। জীবনে প্রথমবার রস খেলাম। এমন স্বাদ আগে কখনো পাইনি। রহমত আলী যোগ করেন, ছোটবেলায় রসের গল্প শুনেছি, কিন্তু কখনো খাইনি। আজ এসে বুঝলাম, শীত মানেই খেজুর রস।
সেতাবগঞ্জ থেকে মোটরসাইকেলে আসা তরুণ মিরাজুল ইসলাম বলেন, গাছ থেকে নামানো টাটকা রস—অন্যরকম অভিজ্ঞতা। গ্রামের পরিবেশ আর রসের ঘ্রাণ—সব মিলিয়ে অসাধারণ।
অর্গানিক, স্বাস্থ্যসম্মত ও ভেজালমুক্ত গুড় ‘উলামা অর্গানিক ফুড’-এর কারিগর তোফাজ্জল হোসেন জানান, ‘ভোরে রস নামিয়ে লিটারপ্রতি ৮০ টাকায় বিক্রি করি। অবশিষ্ট রস দিয়ে কোনো ধরনের ক্ষতিকারক, রঙ বা কেমিক্যাল মেশাই না। ভেজালমুক্তভাবে তিন ঘণ্টা জ্বাল দিয়ে ঝোল, পাটালি ও চকলেট—এই তিন ধরনের খাঁটি গুড় তৈরি করি।’ গুড়ের মূল্য—ঝোল/লাল গুড়: ৩৫০ টাকা, প্রতিকেজি পাটালি/টিকা গুড় ৪০০ টাকা, চকলেট গুড় ৬৫০ টাকা।
উলামা অর্গানিক ফুডের মালিক আনোয়ার হুসাইন বলেন, ছাত্রজীবন থেকেই গুড় ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। আগে ঠাকুরগাঁওয়ে কয়েকজন মিলে অর্গানিক পদ্ধতিতে গুড় বানাতাম। এবার বোচাগঞ্জে প্রথমবার উদ্যোগ নিয়েছি। হোম ডেলিভারি ও অনলাইনে সরবরাহ করি। আমাদের গুড় সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক, স্বাস্থ্যসম্মত ও ভেজালমুক্ত।
শীতজুড়ে উৎসবের আমেজ শীত বাড়ার সঙ্গে মানুষের মধ্যে রস ও গুড়ের প্রতি আগ্রহও বেড়ে চলেছে। রস নামানো, জাল দেওয়া ও গুড় তৈরির সুবাসে পুরো গ্রামজুড়ে এখন উৎসবের পরিবেশ বিরাজ করছে। স্থানীয়রা বলছেন, বোচাগঞ্জে এই প্রথম এমন ভেজালমুক্ত রস ও গুড়—শীতকে আরো রঙিন করে তুলেছে।

