বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সব ইউনিট বন্ধ, ৮ জেলায় ভয়াবহ লোডশেডিং

উপজেলা প্রতিনিধি, পার্বতীপুর (দিনাজপুর)
প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ১৩: ৫২

চায়না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে দিনাজপুরের পাবর্তীপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা ভিত্তিক ৫২৫ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুটি ইউনিট বিকল হয়ে পড়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। এরফলে পাবর্তীপুরসহ উত্তরাঞ্চলের ৮ জেলায় ভয়াবহ লোডশেডিং দেখা দিযেছে । কোথাও এক ঘণ্টা পরপর আবার কোথাও ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, বড়পুকুরিয়া ৫২৫ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে তিনটি ইউনিট রয়েছে। এরমধ্যে ১নং ও ২নং ইউনিটের উৎপাদন ক্ষমতা ১২৫ মেগাওয়াট করে ২৫০ মেগাওয়াট এবং ৩নং ইউনিটের উৎপাদন ক্ষমতা ২৭৫ মেগাওয়াট। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতায় ২নং ইউনিটটি প্রায় চার বছর ধরে বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। ২০২০ সালের নভেম্বর যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। ২ নং ইউনিটটি বন্ধ হয়ে গেলেও তা মেরামতের কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ, পিডিবি এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। সেই থেকে ১নং ও ৩নং ইউনিট চালু রেখে ৪০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার বিপরীতে দুটি ইউনিটে ২৬০-২৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতো।

সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সকালে ৩নং ইউনিটটির গভর্নর ভাল্ব স্টিম সেন্সরের চারটি টারবাইন নষ্ট হয়ে বন্ধ হয়ে যায় এবং গত রোববার (১৯ অক্টোবর) রাত ৯টার দিকে ১নং ইউনিটটির বয়লারের টিউব ফেঁটে সেটি বন্ধ হয়ে যায়।

বড়পুকুরিয়া খনি থেকে উৎপাদিত কয়লা দিয়ে ৫২৫ মেগাওয়াট বড়পুকুরিয়া কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে আসছে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হারবিন ইন্টারন্যাশনাল। পাঁচ বছরের চুক্তি মোতাবেক এ বছর তাদের মেয়াদ শেষ হবে। চুক্তি অনুযায়ী উৎপাদন সচল রাখতে ছোট ধরনের মেরামত ও যন্ত্রাংশ সরবরাহের কথা থাকলেও তার কিছুই করেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি বলে অভিযোগ রয়েছে। জোড়াতালি দিয়ে মেরামত করায় বার বার ত্রুটি দেখা দিচ্ছে।

সূত্রটি আরো জানায়, বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের তিনটি ইউনিটের প্রতিটি ইউনিট সচল রাখতে প্রয়োজন হয় দুটি করে ইলেকট্রো হাইড্রোলিক অয়েল পাম্প। যা ওই ইউনিটের জ্বালানি হিসেবে তেল সরবরাহের মাধ্যমে উৎপাদন কার্যক্রম সচল রাখে; কিন্তু ২০২২ সাল থেকে ৩নং ইউনিটের দুটির মধ্যে একটি পাম্প নষ্ট। যে কোনো সময় বন্ধের ঝুঁকি নিয়ে একটি ইলেকট্রো হাইড্রোলিক অয়েল পাম্প দিয়ে ৩নং ইউনিটের উৎপাদন কার্যক্রম চলে আসছিল। ফলে মাঝে মধ্যেই যান্ত্রিক ক্রটি দেখা দিয়ে ইউনিটটি বন্ধ হয়ে যায়। একাধিকবার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বিষয়টি অবগত করলেও তারা অজ্ঞাত কারণে তা আমলে নেয়নি।

বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, ১নং ইউনিটটি মেরামত করে চালু করতে কমপক্ষে সাতদিন সময় লাগবে। আর ৩ নং ইউনিটটি যে সমস্যার জন্য বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তা মেরামত করে গত রোববার (১৯ অক্টোবর) চালু করার মুহূর্তে আবারো ৩/৪টি সমস্যা দেখা দেয়। এখনও চায়নিজরা ত্রুটি চিহ্নিত করতে পারেনি। বড় ধরনের ত্রুটি হয়ে থাকতে পারে। যা মেরামত সময় সাপেক্ষ।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ৩ নং ইউনিটের দুটি ইলেকট্রো হাইড্রোলিক অয়েল পাম্পের মধ্যে ২০২২ সাল থেকে একটি পাম্প নষ্ট। একটি ইলেকট্রো হাইড্রোলিক অয়েল পাম্প দিয়ে ৩নং ইউনিটের উৎপাদন কার্যক্রম সচল রাখা হয়েছিল।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত