বন্যার পানি নামলেও দুঃখ কমেনি বানভাসিদের

হাসান উল আজিজ, লালমনিরহাট
প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ১২: ১৪

লালমনিরিহাটে তিস্তার পানি কমতে শুরু করায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। তবে বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও দুঃখ কমেনি বাসভাসিদের।

বিজ্ঞাপন

এর আগে রোববার (৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ভারত নিয়ন্ত্রিত গজলডোবা ব্যারাজের ৫৪টি গেটের সবগুলোই খুলে দেয়ায় তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়! এতে লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলার ৩০ গ্রামের নিম্নাঞ্চলের প্রায় লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। তিস্তার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাঁচা, পাকা, রাস্তা পানির তোড়ে বিভিন্ন স্থানে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ক্ষত ভেসে উঠেছে। তবে এখনো নিম্নাঞ্চলের অধিকাংশ গ্রামগুলোর ঘরবাড়ি ও শস্যক্ষেত পানিতে ডুবে রয়েছে।

বানভাসিদের অভিযোগ, রোববার সন্ধ্যায় ভারত হঠাৎ গজলডোবা ব্যারাজের সব গেট খুলে দেয়ায় বিস্তীর্ণ জনপদ প্লাবিত হয়! এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে আমাদের। শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজে যেতে পারছে না, নষ্ট হয়েছে চাষাবাদ, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। গবাদিপশু নিয়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিতে হচ্ছে। দেখা দিয়েছে শিশুখাদ্য ও গবাদিপশুর খাবারের সংকট। প্লাবিত হয়ে আছে রাস্তাঘাটসহ ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

সরেজমিন দেখা যায়, মঙ্গলবার উজানের ঢল কমে যাওয়ায় তিস্তার পানিপ্রবাহ কমতে শুরু করেছে। তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করেছে। পানিবন্দি থেকে পুরোপুরি মুক্তি মিলতে আরো ২/৩ দিন সময় লাগতে পারে বলে জানান বন্যাদুর্গতরা। পানি ওঠায় ঘরবাড়ির বেড়া নষ্ট হয়েছে। ময়লা আবর্জনা প্রবেশ করেছে বাড়িঘরে। পানি পুরোপুরি নেমে গেলে ঘরবাড়ি মেরামতকাজ শুরু করবেন বন্যার্তরা।

প্রতিবারই যখন ভারতের বন্যার পানি ছেড়ে দেয়া হয়, তখন খবর আসে তলিয়ে গেছে গ্রাম, ভেসে গেছে ঘরবাড়ি, ডুবে গেছে ফসল এবং কৃষকের স্বপ্ন। তিস্তাপারের মানুষগুলো প্রতিবারই মৃত্যুর সাথে সংগ্রাম করে করে বেঁচে থাকে।

‘চোখে ঘুম নেই, পেটে ভাত নেই। শুধুই স্মৃতি তাড়া করে।’ অশ্রুসিক্ত নয়‌নে আগ্রাসী তিস্তার দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলছিলেন তিস্তা নদী সংলগ্ন আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়নের কুটিরপাড় গ্রামের মনছুর শেখ (৭০)। উজান থেকে নেমে আসা ঢল আর অব্যাহত বৃষ্টিতে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় তিনি পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম দুঃখ-কষ্টে দিনাতিপাত করছেন।

তিস্তাপারের ভুক্তভোগী মানুষজন বলছেন, যখন পানি চাই, তখন পাই না, আর যখন পানির কোনো প্রয়োজন নেই, তখন পানিতে ভেসে বেড়াই।

পানি উন্নয়ন বোর্ড লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনিল কুমার বলেন, তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় জেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে নদীতে পানি কমলে পাড়ে ভাঙন দেখা দিতে পারে। নদীপারের অবস্থা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, তিস্তার পানি কমতে শুরু করায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বানভাসিদের তালিকা তৈরি করে সহায়তা প্রদান করা হবে। বানভাসি মানুষ যাতে কোনো কষ্ট না পায় এ জন্য জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন সজাগ রয়েছে বলে জানান তিনি।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত