আধুনিকতার ছোয়ায় কার্তিকের ‘মঙ্গা’ এখন যাদু ঘরে

আবুল কালাম আজাদ কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী)
প্রকাশ : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৭: ০৭
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৭: ১০

আশ্বিন ও কার্তিক মাস জুড়ে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে চলছে আগাম ধান কাটা-মাড়াই ও আলুসহ শীতকালীন হরেক সবজি বুননের কর্মযজ্ঞ। অথচ আগে এই সময়ে গ্রামের ক্ষেত মজুররা কাজ বিহীন অবস্থায় খাদ্যাভাবে অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করত। আধুনিকতার ছোয়ায় কৃষকরা আগাম ব্রি ধানসহ অন্যান্য ফসল উৎপাদনে বিবর্তন ঘটায় কার্তিকের সেই মঙ্গা এখন যাদুঘরে পাঠিয়েছে।

সরেজমিনে জানা যায়, আউশ ধানের চাষাবাদে কৃষকরা প্রকৃতির উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল ছিলেন। খরা মোকাবেলায় সেচ কার্যক্রমের কোন ব্যবস্থা ছিল না। বিঘা প্রতি ৪/৫ মন আউশ ধান হত। উচু জমিগুলো পতিত ছিল। কিন্তু এখন কৃষি আধুনিকায়নে ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধি পাওয়ায় ১ ফসলি জমিতে ৩ থেকে ৪ ফসল চাষাবাদ হচ্ছে। কৃষক ও দিনমজুররা কাজ নিয়ে সাড়া বছর ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। এতে কৃষি সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠির আর্থসামাজিক অবস্থার আমূল পরিবর্তন এসেছে।

বিজ্ঞাপন

আগে ক্ষুধার তাড়নায় কচুর মুড়া, কলার গাদধারা, গম ভাজি-ভাত, কাউনের রুটি-ভাত, পায়রা-যবের গুড়া খেয়ে নিদারুন কষ্টে দিনাতিপাত করতেন। এই অভাব “মঙ্গা” নামে পরিচিত ছিল। এই সময়টাকে মরা কার্তিক নামে ডাকা হত। প্রবাদ ছিল “হাতি ঠেলা যায়, কিন্তু কার্তিক ঠেলা যায়না”। এখন সেদিন-কাল বদলে গেছে। কৃষির যান্ত্রিকরণ ও কৃষি উদ্ভাবনীর স্বল্প জীবনকালে অধিক ফলনশীল নতুন ধান, আলুসহ নানা আগাম ফসল ঘরে তুলে কৃষকরা মঙ্গাকে প্রতিহত করেছে।

AMARDESH_DHAN
AMARDESH_DHAN

সদর ইউনিয়নের ইসমাইল দোলাপাড়া গ্রামের রফিকুল, মাগুড়া সিংঙ্গেরগাড়ি গ্রামের পাপুল, বাহাগিলী উত্তর দুরাকুটি গুচ্ছ গ্রামের ছাদেকুল ইসলাম মাঠে আগাম জাতের আমন ধান কাটা-মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তারা প্রত্যেকে ৫ থেকে ৭ বিঘা করে জমিতে আগাম ব্রি আমন জাতের ধান লাগিয়ে ছিলেন। সেই ধান কেটে আলুসহ শীতের নানা রবিসশ্য চাষে গোমর বেঁধে মাঠে কাজ করছেন। তারা আতীত মঙ্গার স্মৃতি চারণ করে জানান, আশ্বিন-কার্তিক মাস এলে (মঙ্গা) দুর্ভিক্ষ দেখা দিত। অখাদ্য-কুখাদ্য খেয়ে না খেয়ে পরিবারগুলো নিদারুণ দিনাতিপাত করত। কিন্তু সে দিন এখন পাল্টে গেছে, কৃষিতে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। স্বল্প জীবনকাল ও উচ্চ ফলনশীল ধানের আবাদ কৃষি ক্ষেত্রে পরিবর্তন এনেছে। মঙ্গার অপবাদ থেকে এ অঞ্চলের মানুষের মুক্তি মিলেছে।

উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা লোকমান আলম জানান, এক সময়ে উত্তরবঙ্গে মঙ্গা ছিল। আশ্বিন-কার্তিক কাজ না থাকায় দিন মজুররা আগম শ্রম বিক্রি করত। কিন্তু এখন নতুন আগাম জাতের উচ্চ ফলনশীল ধান কৃষকরা ঘরে তুলছে। ফলে দিনমজুর এ সমস্ত জমিতে কাজ করে স্বচ্ছলভাবে জীবিকা নির্বাহ করছে। একারণে মঙ্গা শব্দটি এখন যাদু ঘরে আছে।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত