বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়

নেই আবেদনের যোগ্যতা, তবু এক যুগ ধরে শিক্ষক

ইমন আলী, বেরোবি
প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০২৫, ১১: ৫২
আপডেট : ৩০ আগস্ট ২০২৫, ১১: ৫২

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) দীর্ঘ এক যুগ ধরে শিক্ষকতা করছেন ড. ইমদাদুল হক। বর্তমানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান এবং জীব ও ভূবিজ্ঞান অনুষদের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তবে সম্প্রতি এক অনুসন্ধানে জানা গেছে, নিয়োগের শর্ত পূরণ না করেই বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক হয়েছিলেন তিনি।

বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে নানামুখী আলোচনা-সমালোচনা চলছে। নিয়োগের শর্ত লঙ্ঘনের অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ হলে তা দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার জন্য একটি দুঃখজনক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, ২০১৩ সালের ৩১ অক্টোবর দেশের দুটি জাতীয় দৈনিকে বেরোবির শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগে একজন প্রভাষক নিয়োগের ঘোষণা দেওয়া হয়। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত শর্তানুসারে প্রার্থীকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী হতে হবে। এর মধ্যে যে কোনো একটিতে কমপক্ষে ৩.৫০ সিজিপিএ (৪.০০ স্কেলে) অথবা প্রথম শ্রেণি (ডিভিশন পদ্ধতিতে) থাকতে হবে। একই সঙ্গে এসএসসি ও এইচএসসির যে কোনো একটিতে প্রথম বিভাগ বা সমমানের ফলাফল আবশ্যক ছিল।

কিন্তু ইমদাদুল হকের শিক্ষাগত যোগ্যতার কাগজপত্র বিশ্লেষণে দেখা গেছে, তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২০০৩ সালে স্নাতক এবং ২০০৮ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। তার সিজিপিএ ছিল যথাক্রমে ৩.২৬ ও ৩.৩৯, যা নির্ধারিত ৩.৫০-এর নিচে। তবে তার এইচএসসিতে প্রথম বিভাগ ছিল।

গ্রেডিং সিস্টেম চালু থাকার সময় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করলেও তিনি আবেদনপত্রে ‘প্রথম বিভাগ’ উল্লেখ করেন, যা অনেকের কাছে বিভ্রান্তিকর ও বিভ্রান্তিমূলক বলে মনে হচ্ছে। কারণ গ্রেডিং সিস্টেমে প্রথম বিভাগ নির্ধারণের কোনো সুযোগ নেই, এটি শুধুই ডিভিশন পদ্ধতির জন্য প্রযোজ্য।

যদিও ২০০১ সাল থেকেই বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গ্রেডিং সিস্টেম চালু হয়। বিশেষ করে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ সিস্টেম চালু ছিল। ফলে তার অনার্স ও মাস্টার্সের ফলাফল ডিভিশন ভিত্তিতে গণ্য হওয়ার কথা নয়। সুতরাং তিনি আবেদনের প্রাথমিক শর্তই পূরণ করেননি।

এর আগে ২০১২ সালে অস্থায়ী ভিত্তিতে (অ্যাডহকে) শিক্ষক হিসেবে ওই বিভাগে নিয়োগ পান তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যে প্রার্থী বিজ্ঞপ্তির প্রাথমিক শর্তই পূরণ করেন না, তার আবেদনপত্র গ্রহণযোগ্য হওয়ার কথা নয়। অথচ ওই প্রার্থী এখন ডিন ও বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন-এটি সত্যিই হতাশাজনক।

এ বিষয়ে ড. ইমদাদুল হক বলেন, হ্যাঁ, আমার মার্কস কিছুটা কম ছিল। তবে আমি আমার ‘অ্যাকুয়াভ্যালেন্স সার্টিফিকেট’ অনুযায়ী আবেদন করেছি। যদি আমার কাগজপত্রে কোনো সমস্যা থাকত, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে চাকরি দিত না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বলেন, আমি বিষয়টি জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। এ বিষয়ে উপাচার্য ড. শওকাত আলী বলেন, আমি এসব বিষয়ে অবগত নই। তবে এ ধরনের কিছু অভিযোগ আমাদের হাতে এসেছে। আমরা যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত