গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে দুধকুমার নদে ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত কয়েক দিনের ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে কুড়িগ্রাম জেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের বানিয়াপাড়া গ্রাম। সোমবার ভোর থেকে এ ভাঙন শুরু হয় গ্রামজুড়ে।
সাতসকালে শান্ত দুধকুমার নদ আকস্মিক এমন রাক্ষসী রূপ ধারণ করায় চরম ভয় ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে গ্রামের সহজ-সরল মানুষের মাঝে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই অনেকের গাছপালা, ভিটেমাটি বিলীন হয়ে গেছে।
ভাঙনরোধে নেওয়া হচ্ছে না কোনো উদ্যোগ। ভাঙনের তীব্রতায় অন্তত অর্ধশত পরিবার হয়েছে বাস্তুহারা ও নিঃস্ব। তারা কোথায় যাবেন, পরিবার নিয়ে কীভাবে বসতি গাড়বেন—সেই চিন্তায় দিশাহারা। এখনো ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে আরো অর্ধশতাধিক পরিবার। বাড়িঘর ও আসবাবপত্র সরানোর কাজ করছে ভাঙনকবলিত মানুষ।
ভিটেমাটিহারা মনছেনা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘সব শেষ হয়ে গেছে। এখন ঘর তোলার জায়গাও নেই। ঘর দুটা ভেঙে নদীর ওপারে ভাইয়ের বাড়িতে পাঠালাম। এখানে ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা করাই।
এখন তো ওদের পড়াশোনা আর হবে না।’ তাইজুল ইসলাম কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিলেন, ‘আমার সব শেষ হয়ে গেছে। এখান থেকে বাড়ি ভেঙে পুবের চরে নিয়ে যাব। কিন্তু জমি কিনতে এত টাকা কোথায় পাব?’
আকস্মিক ভাঙনে দিশাহারা ভোলা মিয়া বলেন, ‘দুটা ঘর ও ২০টা গাছ গেছে। আর যে কী কী গেছে, এটা বলতে পারি না। ভয়ে বাড়ির সবাই কান্নাকাটি শুরু করেছে। ঘরের জিনিসপাতি বের করা হয়েছে। একটা ঘর কোনোমতে ভেঙে রাখা হয়েছে, আর বাকি আর সব গেছে।’
ভাঙন রোধে পাশেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের জিও ব্যাগ ফেলার কাজ চলমান থাকলেও তা কোনো কাজে আসেনি বানিয়াপাড়ার বাসিন্দাদের।
সুরমান আলী নামে একজন বলেন, ‘জিও ব্যাগ ফেলার কাজগুলো যদি উজান থেকে করত, তাহলে আজ এভাবে ভাঙত না। তারা ভাটি থেকে কাজ শুরু করেছিল। যে জায়গায় জিও ব্যাগ ফেলার কথা, সে জায়গায় না ফেলার দরুন এই ভাঙন।’ হঠাৎ দুধকুমারের এমন আগ্রাসী রূপ দেখে হতবাক স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল আউয়াল।
তিনি বলেন, ‘আমরা খবর শুনেই নদীর ধারে চলে আসি। নদীর এমন ভয়ংকর রূপ দেখে ভয় পেয়ে যাই। এমন ভাঙন জীবনেও দেখিনি। মুহূর্তের মধ্যে বাড়িঘর, আবাদি জায়গা—সব নদীতে চলে যায়। অনেকের বাড়ি সরাতেই পারেনি।
একজনের বাড়ির দুটা ঘর সরিয়েছে, আরেকটা ঘর নদীতে গেছে। সিঁড়িগুলো সব ভেঙেচুরে গেছে। আর গাছপালা তো কোনো কিছুই কাটতে পারেনি। এরকম অসংখ্য গাছপালা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।’
সোমবার বিকালে ভাঙন এলাকা পরিদর্শনে আসেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসমাইল হোসেন। তিনি ভাঙনকবলিত পরিবারের তালিকা করে তাদের সহায়তার আশ্বাস দেন। সেইসঙ্গে ভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও জানান।
তবে ভাঙনের শিকার পরিবারগুলোর পুনর্বাসনের জন্য ব্যবস্থা করা হবে কি না, সে ব্যাপারে তাৎক্ষণিক কোনো সিদ্ধান্ত জানাতে পারেননি তিনি।

