ভারতের পাহাড়ি ঢলে বিপৎসীমার ওপরে তিস্তা, বন্যার আশঙ্কা

উপজেলা প্রতিনিধি, গঙ্গাচড়া (রংপুর)
প্রকাশ : ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৫: ১৬

ভারতের গজলডোবার ব্যারেজে গেট খুলে দেওয়ায় পাহাড়ি ঢলে ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে তিস্তা নদীর পানি। এ কারণে আবারো ভোগান্তিতে পড়েছেন রংপুরের গঙ্গাচড়ার তিস্তা তীরবর্তী বাসিন্দারা।

বিজ্ঞাপন

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, বুধবার সকাল ৯টায় ডালিয়া পয়েন্টে পানির স্তর ছিল ৫২.২০ মিটার, যেখানে বিপদসীমা ৫২.১৫ মিটার। অথচ মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগেও তা ছিল বিপদসীমার নিচে।

সরেজমিনে দেখা যায়, শুধু ঘরবাড়ি নয়, পানিতে তলিয়ে গেছে অনেক রাস্তাঘাটও। চরশংকরদহ, বিনবিনা‌, পশ্চিম ইচলী, গজঘন্টা, মটুকপুর, নোহালী ইউনিয়নের শত শত পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।

লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের চরশংকরদহ গ্রামের কৃষক জাহেদুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ভারত আমাদের বন্যায় ডুবিয়ে মারে, আবার খরায় শুকিয়ে মারে। মাত্র দুই মাস আগে খরায় আমার জমিতে ধান গজায়নি, আর এখন অতিরিক্ত পানিতে সব ডুবে গেছে।

চরশংকরদহের গৃহবধূ হাসিনা বেগম বলেন, রাতের আঁধারে পানি এসে ঘর ভাসিয়ে দেয়। আমাদের ছোট মেয়েটার বই-খাতাও রক্ষা করতে পারিনি। এখন উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছি।

রিকশাচালক রবিউল ইসলাম বলেন, রিকশা চালিয়ে যা আয় করি, সেটা দিয়েই সংসার চলে। এখন রাস্তায় পানি, ঘরেও পানি—কি করব বুঝতে পারছি না।

শীত মৌসুমে দেখা দেয় চরম খরা। নদীতে পানি না থাকায় সেচের জন্য হাহাকার পড়ে যায়। কৃষক হাফিজুল ইসলাম বলেন, জানুয়ারিতে ৮ বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছিলাম। কিন্তু পানি না পেয়ে ফসল ওঠেনি। তখন যদি ভারত একটু পানি দিত!

এদিকে গোল বাধা এই সংকটের জন্য ভারতের একতরফা পানি ব্যবস্থাপনাকেই দায়ী করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, তিস্তা এখন আর আশীর্বাদ নয়, অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারত ইচ্ছামতো পানি ছেড়ে দেয় বা আটকে রাখে— ভোগান্তিতে পড়তে হয় আমাদের।

তিনি আরও বলেন, এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে হলে দুই দেশের মধ্যে একটি টেকসই ও ন্যায্য পানি বণ্টন চুক্তি জরুরি।

২০০৯ সাল থেকে তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে ভারত-বাংলাদেশ আলোচনায় থাকলেও এখনো চুক্তির বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে প্রতিবছর বর্ষা ও খরায় চরম বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন কৃষকরা।

সাবেক শিক্ষক ও স্থানীয় সচেতন নাগরিক আব্দুল মালেক বলেন, সরকার বলছে আলোচনা চলছে, কিন্তু বাস্তবে আমাদের জীবনে কোনো পরিবর্তন আসছে না। তিস্তা চুক্তি না হলে এই অঞ্চল ধ্বংস হয়ে যাবে।

গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহমুদ হাসান মৃধা বলেন, আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে জেলা প্রশাসনে পাঠাচ্ছি। সরকারি সহায়তা দেওয়া হবে। তবে এই সমস্যা সমাধানে আন্তঃদেশীয় আলোচনা ও চুক্তি ছাড়া উপায় নেই।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত