কমতে শুরু করেছে তিস্তার পানি, দুর্ভোগে এখনো বানভাসিরা

মেজবাহুল হিমেল, রংপুর ও হাসান উল আজিজ, লালমনিরহাট
প্রকাশ : ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৭: ০৭
ছবি: সংগৃহীত

ভারত থেকে ছেড়ে দেওয়া পানি এবং ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে উত্তরাঞ্চলে যে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তার অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। এরই মধ্যে পানি নামতে শুরু করেছে। তবে দুঃখ কমেনি বানভাসিদের। বরং কোথাও কোথাও ভোগান্তি বেড়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মঙ্গলবার থেকে তিস্তার পানি প্রবাহ কমতে শুরু করেছে। তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটতে শুরু করেছে। বাসাবাড়ি, রাস্তাঘাট থেকে পানি নামতে শুরু করেছে।

বিজ্ঞাপন

পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী জানান, মঙ্গলবার বেলা ৩টায় তিস্তার লালমানিরহাটের ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার এবং রংপুরের কাউনিয়ার তিস্তা সেতু পয়েন্টে ১৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব জানান, পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় রোববার রাত থেকে তিস্তা অববাহিকার ১৫২ কিলোমিটার এবং ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র এলাকার ৩৬০ কিলোমিটার এলাকার চরাঞ্চল ছাড়াও নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছিল। হাজার হাজার হেক্টর জমির আমনের আবাদ, সবজির আবাদ পানির নিচে তলিয়ে যায়। হাজার হাজার পুকুরের লাখ লাখ টাকার মাছ ভেসে যায়। রাস্তাঘাট তলিয়ে অনেক এলাকার সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলগুলো থেকে মানুষজন বাড়িঘর ছেড়ে গবাদিপশুসহ প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছিল। পানিবন্দি পরিবারগুলো ছোট শিশু, বৃদ্ধ ও গরু, ছাগল, হাস-মুরগি নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছিলেন।

এখন পানি কমতে শুরু করেছে। তবে পানিবন্দি অবস্থা থেকে পুরোপুরি মুক্তি মিলতে আরো দুই-তিন দিন সময় লাগতে পারে বলে জানান বন্যাদুর্গতরা। তারা বলেন, পানি ওঠায় বাড়িঘরের অনেক ক্ষতি হয়েছে। পানিতে ডুবে থাকায় শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজে যেতে পারছে না। দেখা দিয়েছে শিশু খাদ্য ও গবাদিপশুর খাবারের সংকটও।

বন্যাকবলিত লোকজন আরো জানান, বাসাবাড়ি থেকে পানি নেমে গেলেও প্রচুর কাদা রয়ে গেছে। এতে পায়ে বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দিচ্ছে। ঘা হচ্ছে। অন্য ভোগান্তি তো আছেই।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, উপজেলা নির্বাহী অফিস, ইউনিয়ন পরিষদ এবং সরেজমিনে পাওয়া তথ্য মতে, তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নীলফামারীর ডোমার, ডালিয়া, জলঢাকা, রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, পীরগাছা, লালমনিরহাটের সদর, আদিতমারী, পাটগ্রাম, হাতিবান্ধা, কালিগঞ্জ, কুড়িগ্রামের রাজারহাট, উলিপুর, চিলমারী, নাগেশ্বরী, ফুলবাড়ি, ভূরুঙ্গামারী, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চরাঞ্চল এবং নিম্নাঞ্চলের আমনের আবাদ এখনো পানির নিচে। সেই সঙ্গে রয়েছে কচুরিপানার উৎপাত। বন্যার পানিতে ভেসে আসার এসব কচুরিপানা সরানো না গেলে পুরো আবাদই নষ্ট হয়ে যাবে।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণের উপপরিচালক সৈয়দা সিফাত জাহান, পাঁচ জেলার তিন হাজার হেক্টর আমনের আবাদ পানিতে ডুবে আছে। দুয়েক দিনের মধ্যে পানি সরে না গেলে এসব আবাদ নষ্ট হয়ে যাবে। তিনি কৃষকদের কচুরিপানা ও বন্যার পলি ধানক্ষেত থেকে সরিয়ে ফেলার পরামর্শ দিয়েছেন।

রংপুরের ডিসি মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল জানান, আমার তিনটি উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের চরাঞ্চল এবং নিমন্ত্রলে পানি ঢুকেছিল। এখন পানি নেমে গেছে। কৃষি বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কৃষকদের পাশে থাকতে।

লালমনিরহাটের ডিসি এইচএম রকিব হায়দার জানান, বন্যার পানি বাসাবাড়ি রাস্তাঘাট থেকে নেমে গেছে। তবে আমনের আবাদ এখনো অনেক জায়গায় পানির নিচে আছে। কৃষি বিভাগকে তালিকা করে ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয়ের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

রংপুর বিভাগীয় কমিশনার শহিদুল ইসলাম জানান, তিস্তা অববাহিকার পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। পানিবন্দি ও ক্ষতিগ্রস্ত আবাদের কৃষকদের তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। তাদের সহযোগিতা করা হবে। ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে আইআরআই প্রতিনিধি দলের বৈঠক

শুক্র-শনিবারও চলবে বিমানবন্দরের শুল্কায়ন কার্যক্রম

প্রধান উপদেষ্টার আদেশে জুলাই সনদের আইনি রূপ দিতে হবে

নভেম্বরের মধ্যে তিস্তা মহাপরিকল্পনা শুরুর দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি

আইআরআই’র সঙ্গে নির্বাচনের প্রক্রিয়া ও ইসির নিরপেক্ষতা নিয়ে আলোচনা এনসিপির

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত