তথ্য চাইতেই রেগে গেলেন সহকারী কমিশনার

জেলা প্রতিনিধি, পঞ্চগড়
প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০২৫, ০৯: ৩৪

‘সাংবাদিকদের কোনো তথ্য প্রদান করার বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নিষেধ রয়েছে। তথ্য নিয়ে আপনাদের কী কাজ। কমিশনারের অনুমতি নিয়ে আসেন, তারপর তথ্য পাবেন।’

বিজ্ঞাপন

অসহনীয় বিরক্তি সাথে অসদাচরণ করে এসব কথা বলে গণমাধ্যম কর্মীদের তার কক্ষ থেকে বের হতে বললেন পঞ্চগড় বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের সহকারী কমিশনার ইসাহাক আলী।

গত সোমবার দুপুরে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর স্টেশনে পঞ্চগড় জেলার কয়েকজন সিনিয়র গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে এমন অসদাচরণ করেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা প্রতিবাদ করলে উত্তেজিত হয়ে তার কক্ষ থেকে বের হয়ে যেতে বলেন এই কর্মকর্তা। তাৎক্ষনিক রংপুরে কাস্টমসের কমিশনারকে বিষয়টি অবহিত করতে ফোন করা হলে সে সময় তাকে অফিসে পাওয়া যায়নি। তবে কমিশনারের প্রটোকল অফিসার বিষয়টি শুনে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, তিনি এভাবে গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে অসদাচরণ করতে পারেন না। পুরো বিষয়টি তিনি কমিশনারকে জানাবেন।

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে বিগত অর্থবছরে আমদানি এবং রপ্তানি খাতে কি পরিমাণ রাজস্ব আয় হয়েছে এই তথ্য জানতে চাওয়ায় তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের তথ্য না দিয়ে নানান নীতিকথা শোনাতে থাকেন। এসময় তার কাছ থেকে তথ্য প্রদানে সহায়তা চাইলে তিনি রাগান্বিত হয়ে বলেন, আমার কাজ নেই, আপনাদের তথ্য দিয়ে আমি আমার চাকরিটা হারাবো নাকি। একপর্যায় তিনি তার কক্ষ থেকে গণমাধ্যমকর্মীদের বের হয়ে যেতে বলেন।

কাস্টমস ভবন থেকে বের হয়ে সহকারী কমিশনারের এই অশালীন আচরণের কারণ জানতে গিয়ে বের হয়ে গেলো ভিন্ন তথ্য। এক বছর থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত এই কর্মকর্তার বদলির আদেশ হয়েছে সম্প্রতি। কয়েক দিন ধরে তিনি ব্যবসায়ী, সিএন্ডএফদের ডেকে নিয়ে অবৈধ আয়ের বকেয়া টাকা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে প্রদান করতে হবে বরে মৌখিক আদেশ জারি করেন। ব্যবসায়ী ও সিএন্ডএফরা তার এই অবৈধ নির্দেশনা না মানায় দুদিন ধরে তিনি অগ্নিমূর্তি হয়ে আছেন।

দেশের একমাত্র চতুর্দেশীয় বন্দর এটি। ভারত ভুটান নেপাল ও বাংলাদেশের সাথে এই বন্দর দিয়ে বাণিজ্য আশাতীতভাবে চলছে। এই বন্দর দিয়ে আমদানির বড় ক্ষেত্রই হচ্ছে পাথর। রপ্তানি হচ্ছে আলু, পাট, ওষুধ, গ্রামীণ ঝুটসহ অনুমোদিত নানা পণ্য। ব্যবসায়ীদের নানাভাবে ফাঁদে ফেলে আমদানি এবং রপ্তানির প্রতি কনসাইনমেন্ট থেকে অবৈধভাবে অর্থ আদায় করে আসছে কাস্টমস। বর্তমানে এটি অঘোষিত রীতিতে পরিণত হয়েছে।

এই বন্দর দিয়ে আসা প্রতিটন পাথর থেকে কাস্টমস সংশ্লিষ্ট সিএন্ডএফ এজেন্টদের মাধ্যমে ১০ টাকা হারে বাধ্যতামূলক আদায় করে। রপ্তানিকৃত পণ্যের প্রতি কনসাইনমেন্ট থেকে আদায় করে ৫ হাজার টাকা। প্রতিদিন এই বন্দর দিয়ে সর্বনিম্ন ৫ হাজার থেকে ১৫ হাজার টন পাথর প্রবেশ করে। রপ্তানির হারও অনেক বেশি। অর্থাৎ প্রতিদিন বন্দর থেকে কাস্টমসের অবৈধ আয় ৪০ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকা। প্রতিদিনের হিসাব সপ্তাহের শেষ দিনে সংশ্লিষ্ট সিএন্ডএফদের কাছ থেকে বুঝে নেন তারা। এই ধারাবাহিকতা চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে।

কাস্টমসের এই অনিয়ম দুর্নীতিতে ব্যবসায়ীরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন এই বন্দর থেকে। ফলে আশঙ্কাজনক হারে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এলাকার সচেতন মানুষ, ব্যবসায়ীরা এই অবস্থার পরিবর্তন চাচ্ছেন।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত