জামিনে মুক্ত রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই শিক্ষক

রংপুর অফিস
প্রকাশ : ২২ জুন ২০২৫, ২০: ১১

চার্জশিট দেয়া পর্যন্ত জামিনে মুক্ত হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় মুদি দোকানী হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাহমুদুল হক।

রোববার সন্ধ্যায় তিনি রংপুর কারাগার থেকে মুক্তি পান। এর আগে বিকেলে যুগ্ম-মহানগর প্রথম আদালতে তার জামিনের আবেদন করেন আইনজীবীরা। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক মার্জিয়া খাতুন চার্জশিট দাখিল না হওয়া পর্যন্ত মাহমুদুল হকের জামিন মঞ্জুর করেন। মানলার পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়েছে আগামী ২ জুলাই।

বিজ্ঞাপন

এর আগে বৃহস্পতিবার নগরীর ধাপ নিউ ইঞ্জিনিয়ারপাড়ার নিজ বাড়ি থেকে তাকে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের সময় ২ আগস্ট নিহত মুদি দোকানের সমেস উদ্দিন হত্যা মামলার ৫৪ নম্বরে এজাহার ভুক্ত আসামি হিসেবে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে ১৮ জুলাই গুলিতে নিহত অটোচালক মানিক মিয়া হত্যা মামলার ১৯ নম্বর এজাহার ভুক্ত আসামি হিসেবে তাকে শ্যোন অ্যারেস্টের আবেদন করা হয়। তাকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে শিক্ষক শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করে।

রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মজিদ আলী জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আন্দোলন প্রতিহত করতে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে এবং বাইরে অভ্যন্তরে ‍পুলিশ পাহারায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, তাঁতী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ অঙ্গ ও সহেযাগী সংগঠনের ক্যাডার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষার্থী অস্ত্র নিয়ে সরাসরি অংশ গ্রহন করেছেন। যেসসবের ভিডিও ফুটেজ ও ছবি সারা দুনিয়া দেখেছে। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশকিছু শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীর নামেও মামলা হয়েছে। সুতরাং এসব বিষয়ে পুংখানুপুংখভাবে তদন্ত হওয়া দরকার। জড়িতদের আইনের আওতায় আনা দরকার। যেহেতু মাহমদুল হক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সম্মানিত শিক্ষক। কিন্তু তিনি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালীন ঘটনার অটো চালক মানিক হত্যা মামলার ১৯ এবং মুদি দোকানী সমেস উদ্দিন হত্যা মামলার ৫৪ নম্বর আসামী। সেকারণে তাকে অত্যন্ত সম্মানের সাথে পুলিশী হেফাজতে নিয়ে এজাহার নামীয় দু’হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আমরা আদালতে সোপর্দ করেছি। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। পরবর্তীতে রোববার তার জামিনের জন্য আবেদন করেন আইনজীবীরা। আদালত চার্জশিট দেয়া পর্যন্ত তার জামিন মঞ্জুর করেন। সন্ধ্যায় কারাগার থেকে মুক্তি পান।

পুলিশ কমিশনার জানান, আমরা তার ব্যপারে সবগুলো বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত করে চার্জশিট দিবো। ৩ জুন হাজির হাট থানায় এই হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের স্ত্রী আমেনা বেগম। তাতে অভিযোগ করা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ২০২৪ সালের ২ আগস্ট হাজিরহাট থানার রাধাকৃষ্ণপুর এলাকায় নিজের মুদির দোকানে থাকাকালীন সমেস উদ্দিনকে আসামিরা দোকান থেকে বের করে দেশীয় অস্ত্র, রড ও লোহা দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় পুলিশের কাছে দেয়। পরে পুলিশ চলে গেলে তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। এই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ৫৪ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করা হয়।

উল্লেখ্য যে, সমেস উদ্দিনেরর কবরের পাশে একটি সাইনবোর্ড দেখা যায়। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। তাতে লেখা আছে , ‘জাতীয় বীর সমেস উদ্দিন। গত ২ আগস্ট ২০২৪ পুলিশ বিভাগের একটি দল তার বাড়িতে প্রবেশ করলে তিনি পুলিশ দেখে দৌড় দিতে গিয়ে পড়ে যায় এবং তিনি সেখানেই স্ট্রোক করে মারা যায়। তা নিশ্চিত করে প্রাইম মেডিক্যাল কলেজের ডাক্তার।’

তবে শুক্রবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে ওই সাইনবোর্ডটি সেখানে আর পাওয়া যায়নি।

তাকে গ্রেপ্তারের পরের দিন থেকেই রংপুরসহ বিভিন্ন স্থানে তার মুক্তির দাবিতে মানববন্ধনসহ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন হয়। রোববার ও আদালত প্রাঙ্গনে এবং রোকিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কর্মসূচি পালণ করে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা।

এদিকে তাকে গ্রেপ্তারের তিন দিনের মাথায় বদলি করা হয়েছে অননগর হাজির হাট থানার ওসি আবদুল্লাহ আল মামুনকে। তাকে সেখান থেকে সরিয়ে ডিবিতে ওসি হিসেবে বদলি করা হয়েছে।

এমএস

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত