রংপুরে পুলিশ কর্মকর্তার প্রভাবে ব্যবসায়ীর জমি দখলের অভিযোগ

রংপুর অফিস
প্রকাশ : ০৮ আগস্ট ২০২৫, ২১: ৪৯

রংপুর মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার ড. মুহাম্মদ আব্দুল আলীম মাহমুদের প্রভাব খাটিয়ে তার ভাগনিজামাই আকিফুলের বিরুদ্ধে জমি ও বসতবাড়ি দখলের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক কাউন্সিলর তৌহিদুল বাহিনীর নেতৃত্বে তিনি এ সম্পত্তি দখল করেন।

শুক্রবার দুপুর ১২টায় নগরীর সুমি কমিউনিটি সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী মশিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যরা।

বিজ্ঞাপন

তবে সাবেক কমিশনার জানিয়েছেন, আমি কখনোই কোনো অন্যায় করিনি। অন্যায়কে প্রশ্রয়ও দেইনি। আকিফুলের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে অভিযোগ ওঠার পর তার সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দেই। যদি আকিফুলের বিরুদ্ধে আমাকে জড়িয়ে প্রভাব বিস্তার কিংবা কোনো অন্যায়ের অভিযোগ থাকে, তাহলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

মশিউর রহমান অভিযোগ করে বলেন, আমার বাবা মোহাম্মদ আলী ২০১৪ সালে ডা. গিয়াস উদ্দিন মিয়ার কাছ থেকে ১২ শতক জমি কেনেন। পরবর্তীতে হেবা দলিলমূলে ১২ শতকসহ মোট ১৮ শতক জমির মালিক হই। এখানে বসতবাড়ি ও দোকানঘর নির্মাণ করে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করি।

কিন্তু আওয়ামী লীগ আমলে তৎকালীন পুলিশ কমিশনার আব্দুল আলীমের ভাগনিজামাই আকিফুল ইসলাম ওরফে টুটুল ২০নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও কোতোয়ালি থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম ও তার বাহিনী নিয়ে আমার বসতবাড়ি ও দোকানপাট জোরপূর্বক দখল করে। তখন পরিবার-পরিজনসহ আমাকে বসতবাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। ওই সময় আমি কোতোয়ালি থানায় মামলা করলেও তৎকালীন তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই এরশাদ আমাকে থানায় তুলে নিয়ে মামলা নিষ্পত্তি করতে সাদা কাগজে জোরপূর্বক সই নেন।

তিনি আরো অভিযোগ করেন, আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে আমি পরিবার-পরিজনসহ চলতি বছরের ২ আগস্ট থেকে সেখানে বসবাস শুরু করি। কিন্তু আবারও আকিফুল তার বাহিনী আমার বসতবাড়ি ও দোকানপাটে হামলা চালায়।

তিনি বলেন, আমি যখন সংবাদ সম্মেলন করছি, তখন আকিফুল সন্ত্রাসীদের দিয়ে আবারও আমার দেয়াল ভেঙে দিয়েছে।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত আকিফুল ইসলাম টুটুল জানান, রংপুর মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার মোহাম্মদ আব্দুল আলীম মাহমুদ আমার দূর সম্পর্কের আত্মীয়। আমি আমার নিজের পরিচয়ে চলি। তার নাম ভাঙিয়ে চলি না। ওই জমি আমি নিজের টাকায় কিনেছি। মশিউর তার সন্ত্রাসীদের নিয়ে ২ আগস্ট আমার জমি, বসতবাড়ি ও দোকানপাটে হামলা চালিয়ে অর্ধকোটি টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। পরে সেনাবাহিনী আমাকে চাবি দেয়।

এ ব্যাপারে রংপুর মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার ড. মুহাম্মদ আব্দুল আলীম মাহমুদ জানান, আমি বর্তমানে ওএসডি। আমি কখনোই প্রভাব বিস্তার করিনি, আইনের বাইরে যাইনি। আইনের বাইরে কাউকে কোনো সুবিধাও দেইনি। কেউ যদি আমার নাম ভাঙায়, তাহলে তার বা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ওসি আতাউর রহমান জানান, ওই জমিটি আওয়ামী লীগের আমলে দখল করা হয়েছিল। আদালতের রায়ে এক মাসের মধ্যে জমিটি ছেড়ে দেওয়ার জন্য আকিফুলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এক মাস না যেতেই মশিউর ওই জমিতে উঠে যান। এ নিয়ে হট্টগোল বাধলে আমরা সেখানে উপস্থিত হই। পরে সেনাবাহিনী আসে। দুপক্ষের চাবি নিয়ে রাখা হয়। কিন্তু সমঝোতা বৈঠকে মশিউর না আসায় আকিফুলকে চাবি দেওয়া হয়। আকিফুল ও মশিউরের করা মামলায় আদেশের স্থগিতাদেশ নিয়ে এসেছে, যার শুনানি হবে আগামী ১৬ অক্টোবর।

এ ব্যাপারে রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. মজিদ আলী জানান, পুলিশিং কিংবা কোনো দলের ক্ষমতা ব্যবহার করে জমি দখলসহ কোনো অপরাধের সুযোগ নেই। বিষয়টি ওসিকে জানানো হয়েছে। প্রকৃত ঘটনা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত