ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তফসিল ঘোষণা না হলেও হাওরবেষ্টিত সুনামগঞ্জের পাঁচটি আসনে নির্বাচনি হাওয়া বইছে। গণসংযোগ, মিছিল, উঠান বৈঠক সভা সেমিনারসহ নানা কর্মসূচিতে সরগরম থাকছে ভোটের মাঠ।
এদিকে জামায়াতের একক প্রার্থী ঘোষণা করায় ভোটের মাঠে দাপটের সাথে প্রচার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন জামায়াতের প্রার্থীর পক্ষে নারী-পুরুষ মিলে প্রচারণা চালাচ্ছেন। ফলে ক্রমেই ভোটের মাঠে আধিপত্য বাড়ছে।
অন্যদিকে বিএনপির প্রার্থিতা ঘোষণার পর মনোনয়নপ্রাপ্ত ও মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থীরা ভোটের মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রতিদিনই উঠান বৈঠক, গণসংযোগের মধ্য দিয়ে ৩১ দফা প্রচার করছেন। এমনকি প্রার্থী বাতিলের দাবিতে সমাবেশ করছেন মনোনয়ন বঞ্চিতরা। কোথাও কোথাও সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। যার কারণে বিভক্ত হয়ে পড়েছে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। দলের ভেতরে বাড়ছে অসন্তোষ ও ক্ষোভ।
জানা গেছে, গত ৩ নভেম্বর জেলার পাঁচটি আসনের মধ্যে তিনটিতে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা করেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। জোট কিংবা একাধিক প্রার্থীর কারণে দুটি আসন ফাঁকা রাখা হয়।
সুনামগঞ্জ- ১ আসনে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছেন আনিসুল হক। তিনি কেন্দ্রীয় কৃষকদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক। এ আসনে মনোনয়নবঞ্চিত হয়েছেন তিনজন। তারা হলেন জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান কামরুল, কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, সালমা নজীর।
মনোনয়ন বঞ্চিতদের মধ্যে কামরুল ও মাহবুব প্রতিদিন চূড়ান্ত মনোনয়নের আশায় জনসংযোগ করে যাচ্ছেন। হাজার হাজার ভোটারও তাদের সাথে সভা সমাবেশে যোগ দিচ্ছেন।
গত ১৯ নভেম্বর তাহিরপুরে নির্বাচনি মিছিলকে কেন্দ্র করে আনিসুল হক ও কামরুলের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার সন্ধ্যায় তাহিরপুর উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের কলাগাঁও বাজারে এ সংঘর্ষ হয়।
অন্যদিকে এ আসনে আরেক মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থী মাহবুবুর রহমানের নির্দেশনায় জামালগঞ্জের সেলিমগঞ্জ বাজারে জন সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ২০ নভেম্বর এ আসনে প্রার্থী পুনর্মূল্যায়নের দাবিতে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে প্রার্থী ঘোষণার পর পরই আনিসুল হক প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছুটে বেড়াচ্ছেন এবং জনগণের কাছে ধানের শীষের ভোট প্রার্থনা করছেন। বিভিন্ন সভা সেমিনারে হাওরাঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নয়নের প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, অনেক যাচাইবাছাই করে দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। ধানের শীষের বিজয়ের লক্ষ্যে দিনরাত পরিশ্রম করছি। ভোটাররাও গ্রামে গ্রামে ভোট প্রার্থনা করছেন। নির্বাচিত হলে হাওর এলাকার কৃষি ও জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতে কাজ করব।
মনোনয়ন বঞ্চিত কামরুল বলেন, দীর্ঘ ১৬ বছর ভোটের মাঠে আছি। মামলা হামলা, জেল জুলুমের শিকার হয়েছি। আমার টাকা নেই। কর্মী-সমর্থকরাই আমার খরচ চালান। হাওরের ভোটাররা আমাকে ভালোবাসেন। আশা করি দল আমাকে পুনর্মূল্যায়ন করবে।
মনোনয়ন বঞ্চিত মাহবুবুর রহমান বলেন, আমি মনোনয়ন বঞ্চিত হলেও হাল ছাড়িনি। শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবো। প্রতিদিন তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। আমার সমর্থকরাও ভোটের মাঠে প্রার্থী পুনর্মূল্যায়নের দাবিতে মিছিল, মিটিং করছেন। আশা করি দলে আমাকে বিবেচনা করবেন।
সুনামগঞ্জ- ৫ নির্বাচনি আসনে প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছেন কলিমউদ্দিন আহমেদ মিলন। তিনি জেলা বিএনপির আহবায়ক। এ আসনে মনোনয়নবঞ্চিত হয়েছেন মিজানুর রহমান চৌধুরী মিজান। তিনি বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ছাতক উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। এই আসনে দুই প্রার্থীই ভোটের মাঠে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। মনোনয়নবঞ্চিত হয়েও মিজান হাল ছাড়েননি। প্রতিদিনই জণসংযোগ, সভা সমাবেশ অব্যাহত রেখেছেন। মিজান চৌধুরী গত ১৫ নভেম্বর প্রায় ৩০ হাজার মানুষের সমাগম ঘটিয়ে গণ মিছিল করেন।
এ সময় তিনি বলেন, আমাকে প্রাথমিক মনোনয়ন থেকে বাদ দেয়া আপনারা কষ্ট পেয়েছেন। আমিও আপনাদের মতো স্তম্ভিত হয়েছি। আপনারা হতাশ হবেন না। প্রাথমিক মনোনয়ন চূড়ান্ত নয়।
সুনামগঞ্জ-৩ আসন একটি মর্যাদাপূর্ণ আসন। এই আসনে প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমেদ। মনোয়ননবঞ্চিত হয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ব্যারিস্টার এম আনোয়ার হোসেন, জেলা বিএনপির আহব্বায়ক কমিটির সদস্য নাদের আহমদ, বিএনপি নেতা মেজর আশফাক সামী ও আব্দুস সাত্তার, যুক্তরাজ্য সুইন্ডন বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুল কাহার।
মনোনয়ন বঞ্চিতদের মধ্যে ব্যারিস্টার আনোয়ার হোসেন সম্প্রতি স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি ইতিমধ্যে ভোটের মাঠে সরব প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ২০ নভেম্বর তার নিজ উপজেলা শান্তিগঞ্জের ডুংগরিয়াও শান্তিপুর গ্রামে সমাবেশ করেন।
এমনকি শোনা যাচ্ছে আনোয়ার হোসেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় ভোটের মাঠে আঞ্চলিক মোড় নিতে পারে। এছাড়া মনোনয়ন বঞ্চিতদের মধ্যে আব্দুস সাত্তার বাদে বাকি সবাই আনোয়ারকে সমর্থন দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বলে একটি বিশ্বস্ত সূত্রে খবর জানা গেছে।
ব্যারিস্টার আনোয়ার হোসেন বলেন, আমি দীর্ঘ দিন ভোটের মাঠে জনগণের সাথে কাজ করছি। আশা করি জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে।

