বিশ্ব নদী দিবস

ভালো নেই সুতাং নদী

কামরুল হাসান, হবিগঞ্জ
প্রকাশ : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২: ৪৯

হবিগঞ্জে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার সুতাং নদীর নাম সবার জানা। একসময়ের খরস্রোতা সুতাং নদী দিয়ে বড় বড় নৌকা যেত। পরিবহন হতো মালপত্র। নদীর পানি দিয়ে আশপাশের লোকজন ফসল ফলাতেন। পাওয়া যেত দেশীয় প্রজাতির মাছ। সুতাং নদীর বেলেশ্বরী নামক স্থানে সনাতন ধর্মের লোকজন পুণ্যস্নান করতেন। এই চিত্র খুব বেশিদিন আগের নয়। এখন আর সেই চিত্র নেই। যৌবন হারিয়েছে নদীটি। পানি দূষিত হয়ে কালো রঙ ধারণ করেছে। নেই কোনো মাছ। পুণ্যস্নানও হয়নি। সুতাং নদীর এই পরিণতির কারণ শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কারখানার বর্জ্য।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় সূত্র জানায়, সুতাং নদী ভারত থেকে চুনারুঘাট উপজেলায় প্রবেশ করে ৪টি ইউনিয়ন দিয়ে প্রবাহিত হয়ে শায়েস্তাগঞ্জ, হবিগঞ্জ সদর ও লাখাই উপজেলা হয়ে মেঘনা নদীতে পতিত হয়েছে। সুতাং নদীর চুনারুঘাট অংশে তিনটি সিলিকা বালুমহাল থেকে সরকার বছরে ৩ থেকে ৫ কোটি টাকা রাজস্ব পায়। লাখাই উপজেলার বোরো ধানের প্রধান সেচের উৎস এই সুতাং নদীর পানি। অন্যান্য এলাকায়ও সেচের কাজে ব্যবহার করা হয় সুতা নদীর পানি। মৎস্য আহরণ এবং বর্ষাকালে নৌপথে এখনও নৌকা চলে নদী দিয়ে।

সুতাং পাড়ের রাজিউড়া গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম জানান, খরা মৌসুমে জমি শুকিয়ে যায়। নদীতেও পানি থাকে না। তাই নদী খনন করা হলে এলাকার কৃষক বাঁচবে, বাঁচবে দেশ। উপকৃত হবে দেশের কৃষি অর্থনীতি। সুতাং পাড়ের সব পেশাজীবী মানুষের দাবি, ঐতিহ্যবাহী সুতাং নদী পুনর্খনন করে তার হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে দেওয়া হোক। পাশাপাশি শিল্প বর্জ্যের দূষণ থেকেও বাঁচতে চান তারা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, শায়েস্তাগঞ্জ ও মাধবপুর উপজেলায় মহাসড়কের পাশে গড়ে ওঠা শিল্প কারখানার বর্জ্য অব্যাহতভাবে সুতাংকে দূষিত করে চলেছে। সারাবছর শিল্প দূষণ চললেও এ থেকে উত্তরণে কোনো দৃশ্যমান প্রদক্ষেপ পরিগণিত হচ্ছে না। বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠনের আবেদন-নিবেদন এবং বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন হচ্ছে নিয়মিতই। কিন্তু কোনো প্রতিকার হচ্ছে না।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ জেলার সাধারণ সম্পাদক ও খোয়াই রিভার ওয়াটার কিপার তোফাজ্জল সোহেল বলেন, অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন বন্ধ ও যথাযথভাবে নদী খনন করে নদীর গতিপথ অবারিত রাখতে হবে। বর্তমানে আমাদের নদীগুলো সুস্থ নেই। প্রকৃত অর্থে নদীগুলো বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে খোয়াই, সুতাং ও পুরাতন নদীসহ অন্যান্য নদীর উপর চলছে বিভিন্ন ধরনের অত্যাচার।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আশীষ দাশগুপ্ত জানান, ফাল্গুন মাসে সনাতন ধর্মের লোকজন আমাদের লাখাই উপজেলার সুতাং নদীর বেলেশ্বরী নামকস্থানে পুণ্যস্নান করে থাকে। পানি দূষণের কারণে কয়েক মৌসুম এই স্নান হয়নি। সুতাং নদীর পানি দূষণ থেকে রক্ষার দাবি জানান সনাতন ধর্মের নেতারা।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত