জঙ্গি অপবাদে নিঃস্ব হয়ে ফিরলেন প্রবাসী ‘জুলাই যোদ্ধা’

জসীম উদ্দিন, সুনামগঞ্জ
প্রকাশ : ১২ জুলাই ২০২৫, ১৪: ২৬
আপডেট : ১২ জুলাই ২০২৫, ১৪: ২৭

সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার নোয়াখালী গ্রামের প্রবাসী আলী আহমেদ দুলাল জীবিকার তাগিদে পাড়ি জমিয়েছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে। তবে জীবনের বাস্তবতা তাকে যে এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করবে, তা কল্পনাও করেননি। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করতে গিয়ে তাকে জেল খাটতে হয়েছে বিদেশের মাটিতে।

বিজ্ঞাপন

আলী আহমেদ জানান, বাংলাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র ও জনতার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে যখন মানুষ মারা যাচ্ছিল, হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার অভাব ছিল, এবং দেশে ইন্টারনেট বন্ধ ছিল—তখন প্রবাসে বসেও তিনি নিশ্চুপ থাকতে পারেননি। সেই সময় আরব আমিরাতে বসবাসরত বাংলাদেশিদের নিয়ে তিনি ১৯ জুলাই এক প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেন, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করা।

কিন্তু ওই বিক্ষোভের পরেই শুরু হয় ধরপাকড়। আলী আহমেদ অভিযোগ করেন, আবুধাবির বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তা বি এম জামাল তাদের ‘জঙ্গি ও উগ্রবাদী’ আখ্যা দিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে প্ররোচনা দেন। এর জেরে আমিরাত কর্তৃপক্ষ তাকেসহ মোট ৫৭ জন বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করে। তাদের মধ্যে কাউকে ১০ বা ১১ বছরের, আবার কাউকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। আলী আহমেদ নিজেও পান যাবজ্জীবন দণ্ড।

তিনি বলেন, আমাকে গ্রেপ্তারের পর কালো কাপড়ে চোখ বেঁধে, হাতকড়া পড়ি য়ে, পায়ে ডান্ডাবেড়ি দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। মাঝে মাঝে স্থান পরিবর্তন করা হতো, বলা হতো আমরা জঙ্গি। কখনো মৃত্যুর হুমকি, কখনো ‘কালেমা শাহাদাত’ পড়তে বলা হতো। আড়াই মাস পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন ছিলাম।

৬ আগস্ট দেশে ফেরার চেষ্টা করলে ইমিগ্রেশন থেকে তাকেও আটক করা হয়। তার দাবি, ‘আমার সাথে ছিল ৬০ কেজি মালপত্র, ১ ভরি সোনা এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস—কিছুই ফেরত পাইনি।

এই দীর্ঘ দুর্ভোগের পর তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অনুরোধের ভিত্তিতে।

আলী আহমেদ বলেন, ড. ইউনূসের হস্তক্ষেপে আমাদের অনেককে ক্ষমা করে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। আমরা ১৮৯ জন মুক্তি পেলেও এখনও ২৫ জন বাংলাদেশি বন্দি রয়েছেন। তাদের দ্রুত মুক্তি ও দেশে ফেরাতে কূটনৈতিক উদ্যোগ জরুরি।

তার স্ত্রী মরিয়ম আক্তার বলেন, আমার স্বামী ৪ মাস ধরে কোথায় আছে জানতাম না। ফোন বন্ধ। সন্তানের মুখ চেয়ে শুধু কাঁদতাম। শেষমেশ তিনি ফিরে এলেও কিছুই সাথে আনতে পারেননি। তিনি এখন নিঃস্ব।

শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুকান্ত সাহা বলেন, জুলাই আন্দোলনের প্রবাসী কর্মী হিসেবে আলী আহমেদের ত্যাগের কথা জানতে পেরে তাকে একটি দোকান ঘর বরাদ্দ দিয়েছি। যাতে তিনি নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারেন। তার পাশে সব সময় থাকবো।

আলী আহমেদের এই অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে, বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিরাও দেশের গণতান্ত্রিক অধিকার ও মানবাধিকারের প্রশ্নে আজ আর নিরুত্তর নন। তবে তাদের নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষায় রাষ্ট্রেরও রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত