সিলেটে ভয়াবহ লোডশেডিং : পাওয়ার স্টেশন কবে চালু হবে জানে না পিডিবি

সিলেট ব্যুরো
প্রকাশ : ২৬ জুলাই ২০২৫, ১৮: ১০

সিলেটের কুমারগাও ২৫ মেগাওয়াট পাওয়ার স্টেশন প্রায় ১১ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ থাকায় বিতরণে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ফলে তীব্র তাপদাহের মাঝেও সিলেট নগরীতে ভয়াবহ লোডশেডিং চলছে। এতে অতিষ্ঠ জনজীবন।

নগরবাসী বলছেন, গত কয়েকদিন ধরে সিলেটের তাপমাত্রা ৩৭/৩৮ ডিগ্রি। এই তাপমাত্রায় এমনিতেই নগরজীবন অতিষ্ঠ। এরমধ্যে আবার ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং। ফলে কষ্টে দিন কাটাচ্ছে নগরের বাসিন্দারা। দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবি তাদের।

বিজ্ঞাপন

তবে কুমারগাঁও ২৫ মেগাওয়াট পাওয়ার স্টেশন প্রায় ১১ দিন ধরে বন্ধ থাকলেও কবে নাগাদ স্টেশনটি চালু হবে, খোদ জানে না বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। কর্মকর্তারা বলছেন, এটা তাদের আওতাধীন না, তাই কবে নাগাদ চালু হবে সেটা বলতে পারছেন না। যদিও ২৫ মেগাওয়াট পাওয়ার স্টেশনটি পিডিবির। খোদ পিডিবির এমন বক্তব্যে দীর্ঘস্থায়ী বিদ্যুৎ বিভ্রাটে পড়ার শঙ্কা নগরবাসীর।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেট নগরের বিদ্যুৎ সরবরাহকারী কুমারগাঁও ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্রের ২৫ মেগাওয়াট পাওয়ার স্টেশন প্রায় ১১ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। ফলে সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নিজস্ব জেনারেশন সিলেটে আর নেই। তাই জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ এনে নগরীতে বিদ্যুৎ বিতরণ করা হচ্ছে। তবে চাহিদার তুলনায় কম বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে ন্যাশনাল লোড ডেসপ্যাচ সেন্টার (এনএলডিসি)। এতে সিলেটে বিদ্যুৎ বিভ্রাট চরম আকার ধারণ করেছে। পাওয়ার স্টেশন বন্ধের কারণ ও চালু হওয়ার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য জানেন না সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) ও কুমারগাঁও গ্রিড উপকেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বরত কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, পাওয়ার স্টেশনটি বন্ধ থাকায় সিলেট নগরে বিদ্যুৎ বিতরণে প্রভাব পড়েছে। সিলেটে দৈনিক বিদ্যুতের চাহিদা ২৩০-২৪০ মেগাওয়াটের মতো। এর মধ্যে সরবরাহ হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৯০ মেগাওয়াট। ফলে গড় ঘাটতি ৪০ মেগাওয়াট। লোডশেডিংয়ের এর মাত্রা ১৭.৩৯ শতাংশ। বিউবো কর্তৃপক্ষ বলছে, কুমারগাঁওয়ের ২৫ মেগাওয়াট পাওয়ার স্টেশন বন্ধ হয়েছে পাওয়ার স্টেশনের ট্রান্সফর্মার পুড়ে যাওয়ার কারণে। বন্ধ হওয়ার পর পাওয়ার স্টেশনের প্রধান প্রকৌশলীও অবসরে চলে গেছেন। তবে তার দায়িত্বে থাকা মিজানুর রহমান আমার দেশকে জানান, পাওয়ার স্টেশনের

ট্রান্সফর্মার পুড়ে যায়নি, তবে সমস্যা হয়েছে। এটা ঠিক করতে কতদিন লাগবে, বলতে পারছি না। তবে ভিন্ন কথা বলছেন পাওয়ার স্টেশনের দায়িত্বরত কর্মকর্তা বিদ্যুৎ আচার্য।

তিনি বলেন, কুমারগাঁওয়ের ২৫ মেগাওয়াট পাওয়ার স্টেশন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। পাওয়ার স্টেশনে ওইরকম কোনো সমস্যা নেই। কবে এই পাওয়ার স্টেশন চালু হবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটাতো অন্য ডিপার্টমেন্টের, একটু জেনে জানাতে হবে।

বিউবো সূত্র জানায়, সিলেট মহানগরীতে পাঁচটি ডিভিশনে ১৩টি সাবস্টেশন আছে। তাপমাত্রা বেশি থাকার কারণে বর্তমানে সমস্যা বেশি হচ্ছে। ফিউজ ছিঁড়ে যাওয়া, তার ছিঁড়ে পড়ে যাওয়া বৃদ্ধি পেয়েছে। তার উপর কুমারগাঁওয়ের ২৫ মেগাওয়াট পাওয়ার স্টেশন বন্ধ। এই পাওয়ার স্টেশনের ট্রান্সফর্মার পুড়ে গেছে প্রায় ১১ দিন ধরে। এরপর থেকেই সিলেটে লোডশেডিং বেড়ে গেছে এবং ভোল্টেজও কম হচ্ছে। পাশাপাশি চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে না সিলেটে।

সিলেট নগরীর পাঠানটুলা এলাকার বাসিন্দা মো. বেলাল উদ্দিন বলেন, গত কয়েকদিন ধরে সিলেটে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এরমধ্যে দিনে ৬-৭ ঘণ্টা লোডশেডিং। জীবন অতিষ্ঠ। দেখার যেন কেউ নেই।

এ ব্যাপারে বিউবো সিলেট বিতরণ বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী শামস-ই আরেফিন বলেন, পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ না পাওয়ায় কিছু এলাকায় লোডশেডিং করতে হয়। পুরো সিস্টেমে ফ্রিকুয়েন্সি ডাউন হয়ে গেলে ঢাকা থেকে বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেয়। তাই লোডশেডিং করতে হয়।

এ ব্যাপারে সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল কাদির বলেন, সিলেটের বিদ্যুৎ সরবরাহ হয় কুমারগাও গ্রিড উপকেন্দ্র থেকে। ১১ দিন আগে এই পাওয়ার স্টেশনের ট্রান্সফর্মার পুড়ে গেছে। ফলে লোডশেডিং ও ভোল্টেজ কম হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা এখন গ্রিড থেকে পাওয়ার আনছি। আমাদের নিজস্ব জেনারেশন সিলেটে আর নেই। এটা চালু হলে সিলেটের লোডশেডিং কমবে। ট্রান্সফর্মার পুড়ে গেছে তাই বলা যাচ্ছে না কতদিনের ভেতর ঠিক হবে। কারণ এটার যন্ত্রপাতি বাইরে থেকে আনা হয়। তা ছাড়া সিলেট চাহিদার তুলনায় কম বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে ন্যাশনাল লোড ডেসপ্যাচ সেন্টারের (এনএলডিসি)। লোডশেডিং কমাতে হলে আমাদের পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ দিতে হবে। কুমারগাঁওয়ের ২৫ মেগাওয়াট পাওয়ার স্টেশন চালু করতে হবে। কিন্তু ওই পাওয়ার স্টেশন মেরামত আমাদের আওতাধীন নয়। তাই সেটা কবে নাগাদ চালু হবে, সেটা বলতে পারছি না।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত