কাজে আসছে না শায়েস্তাগঞ্জ রেল জংশন, নেই সক্রিয় শাখা লাইন

কামরুল হাসান, হবিগঞ্জ
প্রকাশ : ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৩: ১৫

এক সময়ের ব্যস্ততম শায়েস্তাগঞ্জ রেল জংশন আজ কেবল নামেই আছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলাচলকারী বেশ কয়েকটি আন্তঃনগর ট্রেন এই স্টেশনে থামলেও নেই কোনো সক্রিয় শাখা লাইন। ফলে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে সেই শায়েস্তাগঞ্জ-বাল্লা রেলপথ। ফলে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে এই জংশনের কার্যকারিতা ও গুরুত্ব।

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, শায়েস্তাগঞ্জ থেকে বাল্লা সীমান্ত পর্যন্ত রেললাইনের দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৬ কিলোমিটার। আশির দশকে সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে প্রথমবারের মতো এই শাখা লাইনটি বন্ধ করা হয়। পরে কিছুদিন চালু থাকলেও ২০০৩ সালে তা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে হবিগঞ্জ বাইপাস সড়ক নির্মাণের জন্য শায়েস্তাগঞ্জ-হবিগঞ্জ লাইন উঠিয়ে নেওয়া হয়।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, এক সময় বাল্লা রেলপথ ছিল ১৩টি চা বাগানের চা পাতা রপ্তানি ও প্রয়োজনীয় মালামাল আমদানির একমাত্র মাধ্যম। ট্রেন বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে বাল্লা স্টেশন ভবনটি শুধু ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। অধিকাংশ স্টেশন ঘর ও অবকাঠামো নষ্ট হয়ে গেছে, চুরি হয়ে গেছে দরজা-জানালা, আসবাবপত্রসহ মূল্যবান মালামাল।

বর্তমানে শায়েস্তাগঞ্জ স্টেশন দিয়ে চট্টগ্রামগামী উদয়ন ও পাহাড়িকা এক্সপ্রেস এবং ঢাকাগামী উপবন, কালনী, জয়ন্তিকা, পারাবত এক্সপ্রেস ও সুরমা মেইল চলাচল করে। স্টেশনে ছয়টি লাইন থাকলেও সচল রয়েছে মাত্র তিনটি। বাকিগুলো অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে।

যাত্রীদের অভিযোগ, স্টেশনের আধুনিক ভবন থাকলেও নেই পর্যাপ্ত সুবিধা। বিশ্রামাগারগুলো জরাজীর্ণ, বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা নেই, সর্বত্র দুর্গন্ধ। এমনকি ভালো মানের খাবারের দোকান বা রেস্টুরেন্টও নেই। ঢাকাগামী যাত্রী রিপন বলেন, এত গুরুত্বপূর্ণ একটি স্টেশনে এমন অব্যবস্থাপনা দুঃখজনক। বাল্লা লাইনটি পুনরায় চালু হওয়া জরুরি।

বাল্লা এলাকার বাসিন্দা হাবিব মিয়া বলেন, ট্রেনে করে শায়েস্তাগঞ্জে কাঁঠাল নিয়ে গিয়ে বিক্রি করতাম। ট্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ব্যবসাও বন্ধ হয়ে গেছে। ট্রেন চালু হলে আবার অনেকের জীবিকা ফিরবে।

এলাকার প্রবীণ হারিছ মিয়া জানান, যেসব শিক্ষার্থী হবিগঞ্জ অথবা শায়েস্তাগঞ্জে গিয়ে পড়াশোনা করত, তাদের একমাত্র ভরসা ছিল বাল্লা ট্রেন। ট্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এলাকার শিক্ষার্থীরা এবং ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

অবসরপ্রাপ্ত এক রেল কর্মচারী বলেন, লোকবল সংকট, বিনা টিকিটে যাত্রী ভ্রমণ ও আর্থিক লোকসানের কারণে ট্রেন চলাচল বন্ধ করা হয়।

শায়েস্তাগঞ্জ রেল জংশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার লিটন চন্দ্র দে বলেন, আমার জানা মতে, বাল্লা লাইন এখনো পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়নি। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো এখানেও শাখা লাইন বন্ধ রয়েছে। তবে বাল্লা লাইন পুনরায় চালুর সম্ভাবনা রয়েছে।

স্থানীয়দের দাবি, শায়েস্তাগঞ্জ জংশনের নাম ও ঐতিহ্য রক্ষা করতে হলে শিগগিরই বাল্লা রেললাইন চালু করা প্রয়োজন। তাতে শুধু জংশনের মর্যাদা রক্ষা হবে না, ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিক্ষা ক্ষেত্রেও নতুন গতি আসবে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত