আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

সাক্ষাৎকারে ওয়াহিদুল ইসলাম

গ্রাহক আস্থায় রূপালী ব্যাংকের বিভিন্ন সূচকে উন্নতি

রোহান রাজিব
গ্রাহক আস্থায় রূপালী ব্যাংকের বিভিন্ন সূচকে উন্নতি
কাজী মো. ওয়াহিদুল ইসলাম

কাজী মো. ওয়াহিদুল ইসলাম দায়িত্ব পালন করছেন সরকারি মালিকানাধীন রূপালী ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে। ১৯৯৮ সালে ব্যাংকটির সিনিয়র অফিসার হিসেবে ব্যাংকিং ক্যারিয়ার শুরু করেন তিনি। দীর্ঘ ২৭ বছরের ক্যারিয়ারে রূপালী ব্যাংক ছাড়াও সোনালী ব্যাংকে ডিএমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। রূপালী ব্যাংকের সাম্প্রতিক অবস্থা নিয়ে আমার দেশ-এর সঙ্গে কথা হয় তার। ওয়াহিদুল ইসলামের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন অর্থনৈতিক রিপোর্টার রোহান রাজিব

বিজ্ঞাপন

আমার দেশ : রূপালী ব্যাংকে এমডি হিসেবে আপনার ৬ মাস হয়েছে। এ সময়ে ব্যাংকটির সার্বিক উন্নতি কতটুকু হয়েছে?

কাজী মো. ওয়াহিদুল ইসলাম : গত ৬ মাসে আমানত সংগ্রহে মাইলফলক স্পর্শ করেছি। গত ডিসেম্বরে ব্যাংকের মোট আমানত ছিল ৬৮ হাজার কোটি টাকা। চলতি বছরের জুনে তা বেড়ে হয়েছে প্রায় ৭৮ হাজার কোটি টাকা। ৬ মাসেই ১০ হাজার কোটি টাকার আমানত বেড়েছে। এই আমানতের প্রায় পুরোটাই লো কস্ট ও নো কস্টে সংগ্রহ করা হয়েছে। আমানত ছাড়াও খেলাপি ঋণ থেকে গত ৬ মাসে অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকে আমাদের আদায় পরিস্থিতি ভালো। এখানে প্রায় সাড়ে ৬০০ কোটি টাকার মতো খেলাপি ঋণ আদায় হয়েছে। এছাড়াও এ ৬ মাসে প্রায় ৩ লাখ নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে, যা অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে ব্যাংকের জন্য একটি মাইলফলক। ব্যাংকের পরিশোধিত আমানতে সরকারের আরো ৭০০ কোটি টাকা বেড়েছে। এতে রূপালী ব্যাংকে সরকারের মালিকানা বাড়ছে। গ্রাহকের আস্থার কারণে রূপালী ব্যাংকের এ উন্নতি।

আমার দেশ : খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে কি ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন?

ওয়াহিদুল ইসলাম : খেলাপি ঋণ আদায়ে বছরের শুরুতেই পরিকল্পনা করেছি। ২০২৫ সালকে ‘খেলাপি ঋণ আদায়বর্ষ’ হিসেবে ঘোষণা করেছি। ব্যাংকের প্রত্যেক কর্মকর্তাকে তাদের পদবি অনুযায়ী খেলাপি ঋণ আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও প্রত্যেক ডিএমডিসহ প্রধান কার্যালয়ের সবাইকে নিয়ে বিভিন্ন টিম করেছি। আমাদের পুনঃতফসিল ও সুদ মওকুফসহ খেলাপি ঋণ আদায়ের প্রক্রিয়াসহ অনেক প্রস্তাব বোর্ড থেকে অনুমোদন করা হয়েছে। আগামীতে পুনঃতফসিল ও সুদ মওকুফ প্রক্রিয়ার মধ্যে খেলাপি ঋণ অনেক হ্রাস পাবে। তাছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি সহায়তার পদক্ষেপে রূপালী ব্যাংকের ৫০টি আবেদন রয়েছে। এখন পর্যন্ত তিনটি অনুমোদন হয়ে আসছে। বাকিগুলো আসবে; ফলে খেলাপি ঋণ কমবে।

আমার দেশ : শীর্ষ খেলাপি থেকে ঋণ আদায়ে কি ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছেন?

ওয়াহিদুল ইসলাম : শীর্ষ ঋণখেলাপিদের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। তাদের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য তাগাদা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যাংকিং যত টুলস আছে, তা অনুসরণ করা হচ্ছে। আইনি পদক্ষেপও গ্রহণ করা হয়েছে। আশা করছি শীর্ষ খেলাপিদের কাছ থেকে আদায় ভালোই হবে।

আমার দেশ : রূপালী ব্যাংক বর্তমানে ঋণ বিতরণে কোন খাতকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে?

ওয়াহিদুল ইসলাম : বছরের শুরু থেকে সিএমএসএমই খাতে ফোকাস করেছি বেশি। এদিকেই এখন বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। বড় ঋণের ক্ষেত্রে আমরা খুব যাচাই-বাছাই করে আগাব। কিছু প্রস্তাব আছে, তা এখন যাচাই-বাছাই করছি। যদি সবকিছু ঠিক থাকে, তাহলেই বড় ঋণ বিতরণে যাব। তবে ছোট ছোট ঋণ বিতরণে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

আমার দেশ : রেমিট্যান্সে রূপালী ব্যাংকের বর্তমান পরিস্থিতি কেমনÑসে সম্পর্কে যদি বলতেন…

ওয়াহিদুল ইসলাম : দেশের ইতিহাসে এই অর্থবছরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছে। এ বছর রূপালী ব্যাংকও রেমিট্যান্সে ভালো করেছে। আগে রেমিট্যান্স সংগ্রহে রূপালী ব্যাংকের অবস্থান ১৯তম ছিল; তা এখন শীর্ষ পাঁচে চলে এসেছে। রেমিট্যান্স সেবা বছরের শুরু থেকে আমাদের গ্রাহকদের সহজভাবে দেওয়ার জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

আমার দেশ : ভবিষ্যতে রূপালী ব্যাংকে কোথায় দেখতে চান?

ওয়াহিদুল ইসলাম : আমার প্রধান লক্ষ্য প্রযুক্তিগত দিক থেকে রূপালী ব্যাংককে শীর্ষ ব্যাংক হিসেবে পরিণত করা। যাতে যুগের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে। জনগণকে উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর সেবার মাধ্যমে উত্তম সেবা নিশ্চিত করতে চাই। ইতোমধ্যে রূপালী ব্যাংক ই-ওয়ালেট সেবা চালু করেছে। পাশাপাশি জনগণের আমানতের শতভাগ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে চাই। যাতে কোনো আমানতকারী ক্ষতিগ্রস্ত না হন।

আমার দেশ : সার্বিক ব্যাংক খাত নিয়ে যদি কিছু বলতেন…

ওয়াহিদুল ইসলাম : ব্যাংক খাত নিয়ে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটা অবশ্যই ভালো পদক্ষেপ। এতে করে ব্যাংকগুলোয় সুশাসন ফিরে আসবে। সুশাসন নিশ্চিত করতে না পারার কারণে অতীতে গ্রাহকের আমানত সুরক্ষিত ছিল না। বর্তমান সরকার মানুষের আমানতের সুরক্ষা দিতে পারছে। আশা করি ভবিষ্যতে ব্যাংক সেক্টর আরো ভালো হবে। আমাদের রিজার্ভও এখন বাড়ছে। ডলারের উচ্চমূল্য যেটা হয়ে গিয়েছিল, বাংলাদেশ ব্যাংক বর্তমানে ডলার রেট বাজারের ওপর ছাড়ার পরও তা স্থিতিশীল রয়েছে।

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন