
কাওসার আলম

প্রশিক্ষণ, শিক্ষা ও কাজ-এই তিনের সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা প্রশিকা এখন দুর্নীতি, অনিয়ম, আর্থিক অসংগতি ও নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে প্রায় ক্ষয়িষ্ণু প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। আর্থসামাজিক উন্নয়ন, দক্ষতা বৃদ্ধি, সুশাসন, মানবাধিকার, নারীর ক্ষমতায়ন ও ভোটাধিকারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে এক সময় সরব থাকা এ সংগঠনের কার্যক্রম এখন ক্ষুদ্রঋণ বিতরণে সীমাবদ্ধ। এ ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থাপনায়ও চলছে লাগামহীন অনিয়ম। এছাড়া প্রধান নির্বাহী নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি নিয়মকানুনের ধার ধারছে না।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির (এমআরএ) অনুমোদন ছাড়া সদস্যদের কাছ থেকে দীর্ঘদিন ধরে মেয়াদি আমানত সংগ্রহ করছে প্রশিকা। নিয়ম অনুযায়ী কোনো ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের আমানতের পরিমাণ নিজস্ব পুঁজির ৫০ শতাংশের বেশি হতে পারবে না। কিন্তু প্রশিকার পুঁজি যেখানে মাত্র ১৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা, সেখানে প্রতিষ্ঠানটি আমানত সংগ্রহ করেছে ৫৬ গুণেরও বেশি। এ ধরনের মেয়াদি আমানত সংগ্রহ গ্রাহকের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছে এমআরএ। নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির পক্ষ থেকে মেয়াদি আমানত ফেরত দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হলেও সেটি পরিপালন করছে না প্রশিকা। বরং মাসিক সঞ্চয়, দ্বিগুণ মুনাফা, মাসিকভিত্তিক মুনাফা ও ‘লাখপতি স্কিম’Ñএসব নামে অনুমোদনবিহীন আমানত সংগ্রহ এখন তাদের রুটিন কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জানা গেছে, ২০২১ সালের জুন মাস পর্যন্ত প্রশিকা ২৯৪ কোটি টাকা মেয়াদি আমানত সংগ্রহ করে। ২০২২ সালে সেটি ৪৮৬ কোটি টাকা, ২০২৩ সালের জুনে ৭০৯ কোটি টাকা এবং ২০২৪ সালের ৩০ জুনে ৮১৩ কোটি টাকায় পৌঁছায়।
অপরদিকে মোট আমানতের ১০ শতাংশ তারল্য সঞ্চিতি রাখার নিয়মও মানেনি প্রতিষ্ঠানটি। ২০২৪ সালের ৩০ জুনের হিসাব অনুযায়ী এক হাজার ২৩০ কোটি টাকার মোট আমানতের বিপরীতে তারল্য সঞ্চিতি ছিল মাত্র চার কোটি ৩৯ লাখ টাকা, যা আবশ্যক পরিমাণের তুলনায় অতি নগণ্য, শূন্য দশমিক ৩৬ শতাংশ। এছাড়া এমআরএ বিধিমালা অনুযায়ী মোট সদস্যের ৭০ শতাংশ ঋণগ্রহীতা হতে হবে। কিন্তু ২০২৪ সালের জুনের তথ্যানুযায়ী প্রশিকায় ঋণগ্রহীতা সদস্যের হার ছিল মাত্র ৪৬ শতাংশ।
সিইও নিয়োগেও অনিয়ম
প্রধান নির্বাহী (সিইও) নিয়োগ ও মেয়াদ বাড়ানোর ক্ষেত্রেও ‘কর্মী নীতিমালা ও বেতন কাঠামো’র নিয়ম ভঙ্গ করে যাচ্ছে প্রশিকা। নীতিমালা অনুযায়ী অবসরের বয়সসীমা ৬৫ বছর এবং অবসরের পর সর্বোচ্চ দুই বছরের জন্য এক মেয়াদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া যায়। কিন্তু ২০১৮ সালে ৬৫ বছর পূর্ণ করা প্রধান নির্বাহী সিরাজুল ইসলামের চাকরি চুক্তিভিত্তিক রাখার পরিবর্তে তাকে নিয়মিত কর্মী হিসেবে বহাল রেখেছে বোর্ড। ২০২৩ সালের জুনে তার মেয়াদ আরো তিন বছর বাড়িয়ে ২০২৭ সাল পর্যন্ত করা হয়।
এমআরএর পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে বারবার তার নিয়োগকে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করা হলেও প্রশিকা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টো নীতিমালা সংশোধন করে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বাধ্যতামূলক এক মেয়াদের নিয়ম তুলে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। মূলত সিরাজুল ইসলামকে প্রধান নির্বাহী হিসেবে বহাল রাখতে প্রশিকার বোর্ডে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এছাড়া গাড়ি ক্রয়, অফিস ভাড়া, কর্মকর্তাদের আর্থিক সুবিধা দেওয়াসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে প্রশিকার বিরুদ্ধে।
পর্যবেক্ষক নিয়োগ
প্রতিষ্ঠানটির এসব অনিয়মের জেরে এমআরএ গত ৩০ অক্টোবর প্রশিকার গভর্নিং বোর্ডে একজন পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয়। এমআরএ পরিচালক (এমআইএস, সিআইবি ম্যানেজমেন্ট ও অফসাইট মনিটরিং বিভাগ) মোহাম্মদ কামাল হোসেনকে এক বছরের জন্য এ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি এ বিষয়ে আমার দেশকে বলেন, এমআরএর নির্দেশনা ও প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব নীতিমালাÑদুটিই যাতে যথাযথভাবে মানা হয়, সেটি নিশ্চিত করাই হবে আমার কাজ।
এ ব্যাপারে প্রশিকার চেয়ারম্যান রোকেয়া ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি ফোনে কোনো ধরনের কথা বলতে রাজি হননি। পরে প্রশিকার প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে কথা বলতে চাইলেও তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন। প্রধান নির্বাহী সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে জানানো হয়, তিনিও কোনো কথা বলবেন না।
প্রশিকার ভাইস চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম এ বিষয়ে আমার দেশকে বলেন, প্রশিকার কর্মীর অবসরের বিষয়টি তাদের জানা ছিল না। এ কারণে তারা সিরাজুল ইসলামকে নিয়োগ দিয়েছেন। এমআরএর পক্ষ থেকে আমাদের বিষয়টি জানানো হয়েছে, এখন আমরা তাকে অবসরে পাঠাব।
প্রশিকার গভর্নিং বডির সদস্য আসলাম উদ্দিন আমার দেশকে সিরাজুল ইসলামের নিয়োগের ব্যাপারে বলেন, আমরা বিষয়টি জানতাম না, ভুলবশত তার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। পরবর্তী বোর্ডসভায় বিষয়টি তোলা হবে এবং অনিয়মের মাধ্যমে নেওয়া বেতন-ভাতা ফেরত চাওয়া হবে। শনিবার (১৫ নভেম্বর) প্রশিকার গভর্নিং বডির সভা অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানান তিনি।
নেতৃত্ব নিয়ে জটিলতা
জানা গেছে, প্রশিকার নেতৃত্ব নিয়েও বড় ধরনের দ্বন্দ্ব ও আইনি জটিলতা রয়েছে। বর্তমানে রোকেয়া ইসলাম প্রশিকার গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও এক সময় আলোচিত-সমালোচিত ড. কাজী ফারুক আহমেদ ছিলেন প্রশিকার চেয়ারম্যান। ‘ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন’ নামে রাজনৈতিক দল তৈরি করে ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনিসহ আরো ১৫ জন ওই দল থেকে নির্বাচনে অংশ নেন। কাজী ফারুক তিনটি আসনে নির্বাচন করে জামানত হারান। ওই নির্বাচনে প্রশিকার তহবিল ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। রাজনৈতিক দল গঠনের কারণে ২০০৯ সালে গভর্নিং বডির সভায় তার বিরুদ্ধে অনাস্থা জ্ঞাপন করেন সদস্যরা। এতে তিনি চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারিত হন এবং তৎকালীন ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবদুল ওয়াদুদ চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। কাজী ফারুক চেয়ারম্যানশিপ ফিরে পেতে আদালতে মামলা করলেও এখন পর্যন্ত এর চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি।
প্রশিকার প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ২০১২ সালে কাজী ফারুক তার অনুসারীদের নিয়ে প্রশিকা কার্যালয় দখলে নেন। কিন্তু মাঠপর্যায়ের কর্মীরা তার সঙ্গে ছিল না। ফলে এক ধরনের অচলাবস্থা তৈরি হয় প্রশিকায়। কর্মীদের বেতন দিতে না পারা, শাখা অফিসগুলোয় আমানতকারীদের সঞ্চিত অর্থ ফেরত দিতে না পারাসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে এক সময় তার অনুসারীরাও তাকে ছেড়ে চলে যান। ফলে বাধ্য হয়ে কাজী ফারুক প্রশিকা কার্যালয় ছেড়ে যান। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হিসেবে আছেন রোকেয়া ইসলাম।
কাজী ফারুক আহমেদ বড় ধরনের আলোচনায় আসেন ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিলের ‘ট্রাম্প কার্ড’ ইস্যুতে। তিনি ওই সময় প্রশিকার কর্মীদের রাজধানী ঢাকায় জড়ো করে তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতের ষড়যন্ত্র করেছিলেন। কিন্তু তাদের সে ষড়যন্ত্র নস্যাৎ হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কাজী ফারুক আহমেদ প্রশিকাকে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলে ব্যবহার করেছেন। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন তৎপরতা চালিয়েছেন। ১৯৯৬ সালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘জনতার মঞ্চ’ তৈরির অন্যতম কুশীলবও ছিলেন তিনি। এনজিও প্রতিষ্ঠানগুলোর সমিতি অ্যাডাবের চেয়ারম্যান হিসেবেও কাজী ফারুক প্রভাব খাটিয়েছেন। তার বিরুদ্ধেও অর্থ আত্মসাৎ ও অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এসব বিষয়ে কাজী ফারুক আহমেদের বক্তব্য নেওয়া যায়নি। প্রশিকার গভর্নিং বডির সদস্য আসলাম উদ্দিন বলেন, কাজী ফারুকের হাত ধরে প্রশিকার উত্থান হয়েছিল আবার তার হাত ধরেই প্রশিকা ধ্বংস হয়েছে।
প্রশিকার সার্বিক অনিয়মের বিষয়ে এমআরএ নির্বাহী ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আমার দেশকে বলেন, গভর্নিং বডির বিরোধের কারণে আদালত অবমাননার মতো কোনো ইস্যু থাকতে পারে, এ কারণে এমআরএর পক্ষ থেকে বিগত বছরগুলোয় কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। যেহেতু প্রতিষ্ঠানটি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, তাই নিয়ম মেনে চলার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। তবে প্রশিকার আমানত সংগ্রহ ও সঞ্চিতি রাখাসহ বেশকিছু অনিয়ম প্রমাণ হওয়ায় সেখানে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৬ সালে গ্রামীণ মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন, স্বাস্থ্য সচেতনতা, দক্ষতা উন্নয়ন, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ও বিভিন্ন সামাজিক কর্মসূচির মাধ্যমে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ এনজিও হিসেবে পথচলা শুরু করে প্রশিকা। পরে ব্র্যাক, গ্রামীণ ব্যাংক ও আশার মতো প্রতিষ্ঠানের মডেল অনুসরণ করে ১৯৯৯ সাল থেকে আমানত সংগ্রহ ও সুদভিত্তিক ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম শুরু করে। ২০১৩ সালে এমআরএ থেকে স্থায়ী নিবন্ধন লাভ করে প্রশিকা। বর্তমানে দেশে ৭০০ ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম রয়েছে।

প্রশিক্ষণ, শিক্ষা ও কাজ-এই তিনের সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা প্রশিকা এখন দুর্নীতি, অনিয়ম, আর্থিক অসংগতি ও নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে প্রায় ক্ষয়িষ্ণু প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। আর্থসামাজিক উন্নয়ন, দক্ষতা বৃদ্ধি, সুশাসন, মানবাধিকার, নারীর ক্ষমতায়ন ও ভোটাধিকারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে এক সময় সরব থাকা এ সংগঠনের কার্যক্রম এখন ক্ষুদ্রঋণ বিতরণে সীমাবদ্ধ। এ ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থাপনায়ও চলছে লাগামহীন অনিয়ম। এছাড়া প্রধান নির্বাহী নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি নিয়মকানুনের ধার ধারছে না।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির (এমআরএ) অনুমোদন ছাড়া সদস্যদের কাছ থেকে দীর্ঘদিন ধরে মেয়াদি আমানত সংগ্রহ করছে প্রশিকা। নিয়ম অনুযায়ী কোনো ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের আমানতের পরিমাণ নিজস্ব পুঁজির ৫০ শতাংশের বেশি হতে পারবে না। কিন্তু প্রশিকার পুঁজি যেখানে মাত্র ১৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা, সেখানে প্রতিষ্ঠানটি আমানত সংগ্রহ করেছে ৫৬ গুণেরও বেশি। এ ধরনের মেয়াদি আমানত সংগ্রহ গ্রাহকের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছে এমআরএ। নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির পক্ষ থেকে মেয়াদি আমানত ফেরত দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হলেও সেটি পরিপালন করছে না প্রশিকা। বরং মাসিক সঞ্চয়, দ্বিগুণ মুনাফা, মাসিকভিত্তিক মুনাফা ও ‘লাখপতি স্কিম’Ñএসব নামে অনুমোদনবিহীন আমানত সংগ্রহ এখন তাদের রুটিন কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জানা গেছে, ২০২১ সালের জুন মাস পর্যন্ত প্রশিকা ২৯৪ কোটি টাকা মেয়াদি আমানত সংগ্রহ করে। ২০২২ সালে সেটি ৪৮৬ কোটি টাকা, ২০২৩ সালের জুনে ৭০৯ কোটি টাকা এবং ২০২৪ সালের ৩০ জুনে ৮১৩ কোটি টাকায় পৌঁছায়।
অপরদিকে মোট আমানতের ১০ শতাংশ তারল্য সঞ্চিতি রাখার নিয়মও মানেনি প্রতিষ্ঠানটি। ২০২৪ সালের ৩০ জুনের হিসাব অনুযায়ী এক হাজার ২৩০ কোটি টাকার মোট আমানতের বিপরীতে তারল্য সঞ্চিতি ছিল মাত্র চার কোটি ৩৯ লাখ টাকা, যা আবশ্যক পরিমাণের তুলনায় অতি নগণ্য, শূন্য দশমিক ৩৬ শতাংশ। এছাড়া এমআরএ বিধিমালা অনুযায়ী মোট সদস্যের ৭০ শতাংশ ঋণগ্রহীতা হতে হবে। কিন্তু ২০২৪ সালের জুনের তথ্যানুযায়ী প্রশিকায় ঋণগ্রহীতা সদস্যের হার ছিল মাত্র ৪৬ শতাংশ।
সিইও নিয়োগেও অনিয়ম
প্রধান নির্বাহী (সিইও) নিয়োগ ও মেয়াদ বাড়ানোর ক্ষেত্রেও ‘কর্মী নীতিমালা ও বেতন কাঠামো’র নিয়ম ভঙ্গ করে যাচ্ছে প্রশিকা। নীতিমালা অনুযায়ী অবসরের বয়সসীমা ৬৫ বছর এবং অবসরের পর সর্বোচ্চ দুই বছরের জন্য এক মেয়াদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া যায়। কিন্তু ২০১৮ সালে ৬৫ বছর পূর্ণ করা প্রধান নির্বাহী সিরাজুল ইসলামের চাকরি চুক্তিভিত্তিক রাখার পরিবর্তে তাকে নিয়মিত কর্মী হিসেবে বহাল রেখেছে বোর্ড। ২০২৩ সালের জুনে তার মেয়াদ আরো তিন বছর বাড়িয়ে ২০২৭ সাল পর্যন্ত করা হয়।
এমআরএর পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে বারবার তার নিয়োগকে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করা হলেও প্রশিকা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টো নীতিমালা সংশোধন করে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বাধ্যতামূলক এক মেয়াদের নিয়ম তুলে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। মূলত সিরাজুল ইসলামকে প্রধান নির্বাহী হিসেবে বহাল রাখতে প্রশিকার বোর্ডে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এছাড়া গাড়ি ক্রয়, অফিস ভাড়া, কর্মকর্তাদের আর্থিক সুবিধা দেওয়াসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে প্রশিকার বিরুদ্ধে।
পর্যবেক্ষক নিয়োগ
প্রতিষ্ঠানটির এসব অনিয়মের জেরে এমআরএ গত ৩০ অক্টোবর প্রশিকার গভর্নিং বোর্ডে একজন পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয়। এমআরএ পরিচালক (এমআইএস, সিআইবি ম্যানেজমেন্ট ও অফসাইট মনিটরিং বিভাগ) মোহাম্মদ কামাল হোসেনকে এক বছরের জন্য এ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি এ বিষয়ে আমার দেশকে বলেন, এমআরএর নির্দেশনা ও প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব নীতিমালাÑদুটিই যাতে যথাযথভাবে মানা হয়, সেটি নিশ্চিত করাই হবে আমার কাজ।
এ ব্যাপারে প্রশিকার চেয়ারম্যান রোকেয়া ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি ফোনে কোনো ধরনের কথা বলতে রাজি হননি। পরে প্রশিকার প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে কথা বলতে চাইলেও তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন। প্রধান নির্বাহী সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে জানানো হয়, তিনিও কোনো কথা বলবেন না।
প্রশিকার ভাইস চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম এ বিষয়ে আমার দেশকে বলেন, প্রশিকার কর্মীর অবসরের বিষয়টি তাদের জানা ছিল না। এ কারণে তারা সিরাজুল ইসলামকে নিয়োগ দিয়েছেন। এমআরএর পক্ষ থেকে আমাদের বিষয়টি জানানো হয়েছে, এখন আমরা তাকে অবসরে পাঠাব।
প্রশিকার গভর্নিং বডির সদস্য আসলাম উদ্দিন আমার দেশকে সিরাজুল ইসলামের নিয়োগের ব্যাপারে বলেন, আমরা বিষয়টি জানতাম না, ভুলবশত তার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। পরবর্তী বোর্ডসভায় বিষয়টি তোলা হবে এবং অনিয়মের মাধ্যমে নেওয়া বেতন-ভাতা ফেরত চাওয়া হবে। শনিবার (১৫ নভেম্বর) প্রশিকার গভর্নিং বডির সভা অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানান তিনি।
নেতৃত্ব নিয়ে জটিলতা
জানা গেছে, প্রশিকার নেতৃত্ব নিয়েও বড় ধরনের দ্বন্দ্ব ও আইনি জটিলতা রয়েছে। বর্তমানে রোকেয়া ইসলাম প্রশিকার গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও এক সময় আলোচিত-সমালোচিত ড. কাজী ফারুক আহমেদ ছিলেন প্রশিকার চেয়ারম্যান। ‘ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন’ নামে রাজনৈতিক দল তৈরি করে ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনিসহ আরো ১৫ জন ওই দল থেকে নির্বাচনে অংশ নেন। কাজী ফারুক তিনটি আসনে নির্বাচন করে জামানত হারান। ওই নির্বাচনে প্রশিকার তহবিল ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। রাজনৈতিক দল গঠনের কারণে ২০০৯ সালে গভর্নিং বডির সভায় তার বিরুদ্ধে অনাস্থা জ্ঞাপন করেন সদস্যরা। এতে তিনি চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারিত হন এবং তৎকালীন ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবদুল ওয়াদুদ চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। কাজী ফারুক চেয়ারম্যানশিপ ফিরে পেতে আদালতে মামলা করলেও এখন পর্যন্ত এর চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি।
প্রশিকার প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ২০১২ সালে কাজী ফারুক তার অনুসারীদের নিয়ে প্রশিকা কার্যালয় দখলে নেন। কিন্তু মাঠপর্যায়ের কর্মীরা তার সঙ্গে ছিল না। ফলে এক ধরনের অচলাবস্থা তৈরি হয় প্রশিকায়। কর্মীদের বেতন দিতে না পারা, শাখা অফিসগুলোয় আমানতকারীদের সঞ্চিত অর্থ ফেরত দিতে না পারাসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে এক সময় তার অনুসারীরাও তাকে ছেড়ে চলে যান। ফলে বাধ্য হয়ে কাজী ফারুক প্রশিকা কার্যালয় ছেড়ে যান। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হিসেবে আছেন রোকেয়া ইসলাম।
কাজী ফারুক আহমেদ বড় ধরনের আলোচনায় আসেন ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিলের ‘ট্রাম্প কার্ড’ ইস্যুতে। তিনি ওই সময় প্রশিকার কর্মীদের রাজধানী ঢাকায় জড়ো করে তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতের ষড়যন্ত্র করেছিলেন। কিন্তু তাদের সে ষড়যন্ত্র নস্যাৎ হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কাজী ফারুক আহমেদ প্রশিকাকে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলে ব্যবহার করেছেন। ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন তৎপরতা চালিয়েছেন। ১৯৯৬ সালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘জনতার মঞ্চ’ তৈরির অন্যতম কুশীলবও ছিলেন তিনি। এনজিও প্রতিষ্ঠানগুলোর সমিতি অ্যাডাবের চেয়ারম্যান হিসেবেও কাজী ফারুক প্রভাব খাটিয়েছেন। তার বিরুদ্ধেও অর্থ আত্মসাৎ ও অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এসব বিষয়ে কাজী ফারুক আহমেদের বক্তব্য নেওয়া যায়নি। প্রশিকার গভর্নিং বডির সদস্য আসলাম উদ্দিন বলেন, কাজী ফারুকের হাত ধরে প্রশিকার উত্থান হয়েছিল আবার তার হাত ধরেই প্রশিকা ধ্বংস হয়েছে।
প্রশিকার সার্বিক অনিয়মের বিষয়ে এমআরএ নির্বাহী ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আমার দেশকে বলেন, গভর্নিং বডির বিরোধের কারণে আদালত অবমাননার মতো কোনো ইস্যু থাকতে পারে, এ কারণে এমআরএর পক্ষ থেকে বিগত বছরগুলোয় কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। যেহেতু প্রতিষ্ঠানটি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, তাই নিয়ম মেনে চলার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। তবে প্রশিকার আমানত সংগ্রহ ও সঞ্চিতি রাখাসহ বেশকিছু অনিয়ম প্রমাণ হওয়ায় সেখানে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৬ সালে গ্রামীণ মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন, স্বাস্থ্য সচেতনতা, দক্ষতা উন্নয়ন, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ও বিভিন্ন সামাজিক কর্মসূচির মাধ্যমে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ এনজিও হিসেবে পথচলা শুরু করে প্রশিকা। পরে ব্র্যাক, গ্রামীণ ব্যাংক ও আশার মতো প্রতিষ্ঠানের মডেল অনুসরণ করে ১৯৯৯ সাল থেকে আমানত সংগ্রহ ও সুদভিত্তিক ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম শুরু করে। ২০১৩ সালে এমআরএ থেকে স্থায়ী নিবন্ধন লাভ করে প্রশিকা। বর্তমানে দেশে ৭০০ ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম রয়েছে।

পূর্ব ঘোষণা অনুসারে সেবার মনোন্নয়নের জন্যে নগদ অ্যাপ-এর সিকিউরিটি সিস্টেম আপডেট করার সময় বৃহস্পতিবার রাতে কিছু ব্যবহারকারী গুগলের একটি প্লে প্রটেক্ট সতর্কবার্তার সম্মুখীন হয়েছেন।গুগলের নিজস্ব সিকিউরিটি পলিসি আপডেটের কারণে গ্রাহকরা এই সতর্কবার্তাটি পেয়ে থাকতে পারেন।
১ দিন আগে
দেশের ব্যাংক খাত এখন ভয়াবহ খেলাপি ঋণের চাপে নাজুক অবস্থায় পড়েছে। লাগামহীন এ ঋণ বৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটি যেসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ৩০ শতাংশ ছাড়িয়েছে, সেগুলোকে একীভূত (মার্জার) করা বা অবসায়নের আওতায় আনার পরামর্শ দিয়েছে। সফররত আইএমএফ প্রতিনিধিদলের
১ দিন আগে
প্রায় প্রতিদিনই স্বর্ণের দাম নতুন নতুন রেকর্ড গড়লেও দেশের বাজারে এবার ‘আগুন’ লাগার মতো ঘটনা ঘটছে। এবার ভরিতে ৫ হাজার ২৪৮ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ২ লাখ ১৩ হাজার ৭১৯ টাকা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)।
২ দিন আগে
সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং সংস্কার কার্যক্রমে অগ্রগতি সত্ত্বেও বাংলাদেশ এখনো তিনটি বড় আর্থিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি—দুর্বল রাজস্ব, ঝুঁকিপূর্ণ আর্থিক খাত ও উচ্চ মূল্যস্ফীতি। বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) এক বিবৃতিতে এমন মন্তব্য করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
২ দিন আগে