রোহান রাজিব
পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের বকেয়া বিদেশি ঋণ বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য। হাসিনার আমলে নেওয়া অনিয়ন্ত্রিত ঋণ পরিশোধে নতুন সরকারকে শুরুতেই চাপে পড়তে হয়। একদিকে ঋণের চাপ, অন্যদিকে দাতা সংস্থাগুলোর বিভিন্ন শর্ত মেনে ফ্যাসিবাদী সরকারের ‘ভুয়া রিজার্ভ হিসাব’ থেকে বেরিয়ে আসতে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স আর রপ্তানি আয় এখন মূল ভরসা।
সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে প্রায় ছয় বিলিয়ন ডলার বিদেশি ঋণ পরিশোধ করা হয়, যার মধ্যে সরকারের সরাসরি দায় ছিল প্রায় ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার এবং আদানি বিদ্যুৎ প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র ও পায়রা বন্দরের কয়লা আমদানির বিপরীতে প্রায় ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার শোধ করা হয়। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এই বিপুল পরিমাণ ঋণ পরিশোধ সত্ত্বেও দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে কোনো চাপ পড়েনি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আগের সরকারের সময় ডলার সংকট চরমে পৌঁছলে তৎকালীন গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার ঋণ পরিশোধের সময় বারবার বাড়িয়ে দেন। তখন রিজার্ভ থেকে ডলার খরচ করে দায় মেটানো হতো। ফলে দেশের রিজার্ভ ভয়াবহভাবে কমে যায়।
বর্তমানে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি পুরোপুরি বন্ধ করে এক ব্যাংক থেকে আরেক ব্যাংকে ডলার সরবরাহের মাধ্যমে ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করা হয়। অন্যদিকে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধি এবং অর্থপাচার নিয়ন্ত্রণ করায় বাজারে ডলারের সরবরাহ বাড়ে। ফলে রেকর্ড পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করেও রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হয়েছে। একই সঙ্গে বাজারভিত্তিক বিনিময়হার কার্যকর করায় ডলারের দাম কমতে শুরু করে, যার ইতিবাচক প্রভাব পড়ে মূল্যস্ফীতির হারেও।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত অর্থবছরে বিভিন্ন উৎস থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে ৬ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলার যোগ হয়। বিদেশি ঋণ পরিশোধের পরও নিট ২ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভে জমা হয়। এ সময় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে প্রায় ১ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়।
তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বৈধ চ্যানেলে মোট ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৩৩ কোটি ডলার দেশে এসেছে। এর আগে কখনো ৩০ বিলিয়নের ধারেকাছেও যায়নি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল দুই হাজার ৩৯১ কোটি ডলার। এতে গত অর্থবছরে রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি হয় প্রায় ২৭ শতাংশ। রেমিট্যান্সে উচ্চ প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি গত অর্থবছরে রপ্তানি আয়ে ৯ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি হয়। বিদেশি বিনিয়োগও বাড়ছে। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে নিট বিদেশি বিনিয়োগ ১১৪ শতাংশ বেড়েছে।
বাংলাদেশ গত জুন মাসে আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, এডিবি, এআইআইবি, জাইকাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে পাঁচ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণ পেয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ ব্যাপক বৃদ্ধির ফলে বর্তমানে গ্রস রিজার্ভ ৩০ দশমিক ০২ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। আইএমএফের বিপিএম৬ ম্যানুয়াল অনুযায়ী রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৪ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলার।
গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সময় রিজার্ভ ছিল সাড়ে ২৫ বিলিয়ন ডলার। তবে এটিকে গোঁজামিল হিসেবে দেখানো হয়েছিল বলে অভিযোগ আছে। তখন আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী ২০ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ ছিল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিগত সরকারের সময় নেওয়া বড় বড় মেগা প্রকল্প ও বাজেট সহায়তার ঋণের গ্রেস পিরিয়ড শেষ হওয়ায় বর্তমান সরকারের ওপর বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ ক্রমাগত বাড়ছে। একই সঙ্গে বাজারভিত্তিক উচ্চ সুদহারের বিভিন্ন ঋণ গ্রহণও এতে প্রভাব ফেলেছে। বিগত কয়েক বছর ধরে অর্থনীতিবিদরাও বিদেশি ঋণ গ্রহণের বিষয়ে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছিলেন। তবে তাদের পরামর্শ উপেক্ষা করেই শেখ হাসিনার সরকার বিদেশি উৎস থেকে ঋণ বাড়িয়েছিল। শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সাড়ে ১৫ বছরে বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নেন আট হাজার ৬২ কোটি (৮০ দশমিক ৬২ বিলিয়ন) ডলার।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার বিদায় নেওয়ার পর (২০০৬ সাল শেষে) বাংলাদেশের বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ১৯ বিলিয়ন ডলারের কিছু কম। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছরে তা প্রায় চার বিলিয়ন ডলারের মতো বাড়ে। এতে ২০০৮ সাল শেষে তা দাঁড়ায় ২২ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলারে। তবে আওয়ামী লীগের শাসনামলে তা বেড়ে ৮০ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০০৮ সাল শেষে সরকারের বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি দায়িত্ব নেয় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার। পরের পাঁচ বছরে সরকারের বৈদেশিক ঋণ বৃদ্ধি পায় ৩৯ শতাংশ। এতে ২০১৩ সাল শেষে সরকারের বিদেশি ঋণের স্থিতি দাঁড়ায় ৩১ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার।
২০১৪ সালে আবারও ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। এর পরের পাঁচ বছরে (২০১৪-১৮ সাল) দ্রুত বৈদেশিক ঋণ বৃদ্ধি পায়। ওই পাঁচ বছরে সরকারের বৈদেশিক ঋণ বৃদ্ধি পায় ৭৯ দশমিক ৫১ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮ সাল শেষে সরকারের বিদেশি ঋণ স্থিতি দাঁড়ায় ৫৭ দশমিক ০৭ বিলিয়ন ডলার।
এদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের পাঁচ বছরে (২০১৯-২৩) বৈদেশিক ঋণ বাড়ে সবচেয়ে বেশি। ওই সময় বিদেশি ঋণ বাড়ে ৭৬ শতাংশের বেশি। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে বাংলাদেশ সরকারের বৈদেশিক ঋণের স্থিতি বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছিল ১০০ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলার। চতুর্থ ধাপে ক্ষমতার ছয় মাসে বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নেয় প্রায় তিন বিলিয়ন ডলার।
পতনের সময় শেখ হাসিনা বিদেশি ঋণ রেখে যান ১০৩ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলার। বর্তমান সরকারের ৯ মাসে বিদেশি ঋণ তেমন বাড়েনি। চলতি বছরের মার্চ শেষে বিদেশি ঋণের স্থিতি দাঁড়ায় ১০৪ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার। ৯ মাসে ১ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ বেড়েছে।
রেকর্ড পরিমাণ ঋণ পরিশোধের পরও রিজার্ভে তেমন প্রভাব না পড়ার বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, অর্থপাচার বন্ধ এবং রেমিট্যান্স ও রপ্তানির প্রবৃদ্ধি ভালো থাকার কারণে মূলত রিজার্ভে হাত না দিয়ে ঋণ পরিশোধ করা গেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কোটি কোটি ডলার হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করার কারণে রিজার্ভের স্থিতি রাখা যায়নি। আর এসব অর্থপাচার করেছে সরকারদলীয় লোকেরা।
ড. জাহিদ আরো বলেন, তৎকালীন গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার ডলারের যে মডেল তৈরি করেন, তাতে কোনো রপ্তানিকারক দেশে ডলার প্রত্যাবাসন করতেন না। রপ্তানিকারকরা ডলার রেট বৃদ্ধির আশায় বিদেশে ডলার ধরে রাখতেন। বর্তমানে সে পদ্ধতি নেই। সাপ্লাই ও পাচার বন্ধ রাখতে পারলে তেমন সমস্যা হবে না। তবে রাজনৈতিক সরকার এলে পাচারকারীরা আবারও মাঠে নেমে পড়বে।
পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের বকেয়া বিদেশি ঋণ বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য। হাসিনার আমলে নেওয়া অনিয়ন্ত্রিত ঋণ পরিশোধে নতুন সরকারকে শুরুতেই চাপে পড়তে হয়। একদিকে ঋণের চাপ, অন্যদিকে দাতা সংস্থাগুলোর বিভিন্ন শর্ত মেনে ফ্যাসিবাদী সরকারের ‘ভুয়া রিজার্ভ হিসাব’ থেকে বেরিয়ে আসতে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স আর রপ্তানি আয় এখন মূল ভরসা।
সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে প্রায় ছয় বিলিয়ন ডলার বিদেশি ঋণ পরিশোধ করা হয়, যার মধ্যে সরকারের সরাসরি দায় ছিল প্রায় ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার এবং আদানি বিদ্যুৎ প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্র ও পায়রা বন্দরের কয়লা আমদানির বিপরীতে প্রায় ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার শোধ করা হয়। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এই বিপুল পরিমাণ ঋণ পরিশোধ সত্ত্বেও দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে কোনো চাপ পড়েনি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আগের সরকারের সময় ডলার সংকট চরমে পৌঁছলে তৎকালীন গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার ঋণ পরিশোধের সময় বারবার বাড়িয়ে দেন। তখন রিজার্ভ থেকে ডলার খরচ করে দায় মেটানো হতো। ফলে দেশের রিজার্ভ ভয়াবহভাবে কমে যায়।
বর্তমানে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি পুরোপুরি বন্ধ করে এক ব্যাংক থেকে আরেক ব্যাংকে ডলার সরবরাহের মাধ্যমে ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করা হয়। অন্যদিকে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধি এবং অর্থপাচার নিয়ন্ত্রণ করায় বাজারে ডলারের সরবরাহ বাড়ে। ফলে রেকর্ড পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করেও রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হয়েছে। একই সঙ্গে বাজারভিত্তিক বিনিময়হার কার্যকর করায় ডলারের দাম কমতে শুরু করে, যার ইতিবাচক প্রভাব পড়ে মূল্যস্ফীতির হারেও।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত অর্থবছরে বিভিন্ন উৎস থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে ৬ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ডলার যোগ হয়। বিদেশি ঋণ পরিশোধের পরও নিট ২ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভে জমা হয়। এ সময় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে প্রায় ১ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়।
তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বৈধ চ্যানেলে মোট ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৩৩ কোটি ডলার দেশে এসেছে। এর আগে কখনো ৩০ বিলিয়নের ধারেকাছেও যায়নি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল দুই হাজার ৩৯১ কোটি ডলার। এতে গত অর্থবছরে রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি হয় প্রায় ২৭ শতাংশ। রেমিট্যান্সে উচ্চ প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি গত অর্থবছরে রপ্তানি আয়ে ৯ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি হয়। বিদেশি বিনিয়োগও বাড়ছে। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে নিট বিদেশি বিনিয়োগ ১১৪ শতাংশ বেড়েছে।
বাংলাদেশ গত জুন মাসে আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, এডিবি, এআইআইবি, জাইকাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে পাঁচ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণ পেয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ ব্যাপক বৃদ্ধির ফলে বর্তমানে গ্রস রিজার্ভ ৩০ দশমিক ০২ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। আইএমএফের বিপিএম৬ ম্যানুয়াল অনুযায়ী রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৪ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলার।
গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সময় রিজার্ভ ছিল সাড়ে ২৫ বিলিয়ন ডলার। তবে এটিকে গোঁজামিল হিসেবে দেখানো হয়েছিল বলে অভিযোগ আছে। তখন আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী ২০ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ ছিল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিগত সরকারের সময় নেওয়া বড় বড় মেগা প্রকল্প ও বাজেট সহায়তার ঋণের গ্রেস পিরিয়ড শেষ হওয়ায় বর্তমান সরকারের ওপর বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ ক্রমাগত বাড়ছে। একই সঙ্গে বাজারভিত্তিক উচ্চ সুদহারের বিভিন্ন ঋণ গ্রহণও এতে প্রভাব ফেলেছে। বিগত কয়েক বছর ধরে অর্থনীতিবিদরাও বিদেশি ঋণ গ্রহণের বিষয়ে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছিলেন। তবে তাদের পরামর্শ উপেক্ষা করেই শেখ হাসিনার সরকার বিদেশি উৎস থেকে ঋণ বাড়িয়েছিল। শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সাড়ে ১৫ বছরে বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নেন আট হাজার ৬২ কোটি (৮০ দশমিক ৬২ বিলিয়ন) ডলার।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার বিদায় নেওয়ার পর (২০০৬ সাল শেষে) বাংলাদেশের বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ১৯ বিলিয়ন ডলারের কিছু কম। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছরে তা প্রায় চার বিলিয়ন ডলারের মতো বাড়ে। এতে ২০০৮ সাল শেষে তা দাঁড়ায় ২২ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলারে। তবে আওয়ামী লীগের শাসনামলে তা বেড়ে ৮০ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০০৮ সাল শেষে সরকারের বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি দায়িত্ব নেয় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার। পরের পাঁচ বছরে সরকারের বৈদেশিক ঋণ বৃদ্ধি পায় ৩৯ শতাংশ। এতে ২০১৩ সাল শেষে সরকারের বিদেশি ঋণের স্থিতি দাঁড়ায় ৩১ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার।
২০১৪ সালে আবারও ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। এর পরের পাঁচ বছরে (২০১৪-১৮ সাল) দ্রুত বৈদেশিক ঋণ বৃদ্ধি পায়। ওই পাঁচ বছরে সরকারের বৈদেশিক ঋণ বৃদ্ধি পায় ৭৯ দশমিক ৫১ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮ সাল শেষে সরকারের বিদেশি ঋণ স্থিতি দাঁড়ায় ৫৭ দশমিক ০৭ বিলিয়ন ডলার।
এদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের পাঁচ বছরে (২০১৯-২৩) বৈদেশিক ঋণ বাড়ে সবচেয়ে বেশি। ওই সময় বিদেশি ঋণ বাড়ে ৭৬ শতাংশের বেশি। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে বাংলাদেশ সরকারের বৈদেশিক ঋণের স্থিতি বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছিল ১০০ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলার। চতুর্থ ধাপে ক্ষমতার ছয় মাসে বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নেয় প্রায় তিন বিলিয়ন ডলার।
পতনের সময় শেখ হাসিনা বিদেশি ঋণ রেখে যান ১০৩ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলার। বর্তমান সরকারের ৯ মাসে বিদেশি ঋণ তেমন বাড়েনি। চলতি বছরের মার্চ শেষে বিদেশি ঋণের স্থিতি দাঁড়ায় ১০৪ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার। ৯ মাসে ১ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ বেড়েছে।
রেকর্ড পরিমাণ ঋণ পরিশোধের পরও রিজার্ভে তেমন প্রভাব না পড়ার বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, অর্থপাচার বন্ধ এবং রেমিট্যান্স ও রপ্তানির প্রবৃদ্ধি ভালো থাকার কারণে মূলত রিজার্ভে হাত না দিয়ে ঋণ পরিশোধ করা গেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কোটি কোটি ডলার হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করার কারণে রিজার্ভের স্থিতি রাখা যায়নি। আর এসব অর্থপাচার করেছে সরকারদলীয় লোকেরা।
ড. জাহিদ আরো বলেন, তৎকালীন গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার ডলারের যে মডেল তৈরি করেন, তাতে কোনো রপ্তানিকারক দেশে ডলার প্রত্যাবাসন করতেন না। রপ্তানিকারকরা ডলার রেট বৃদ্ধির আশায় বিদেশে ডলার ধরে রাখতেন। বর্তমানে সে পদ্ধতি নেই। সাপ্লাই ও পাচার বন্ধ রাখতে পারলে তেমন সমস্যা হবে না। তবে রাজনৈতিক সরকার এলে পাচারকারীরা আবারও মাঠে নেমে পড়বে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) পর্যন্ত দেশের গ্রস রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী বর্তমান রিজার্ভের পরিমাণ ২৭ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার।
১ ঘণ্টা আগেফের বড় ধরনের তারল্য সংকটে পড়েছে দেশের শেয়ারবাজার। বুধবার দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হয়েছে মাত্র ৩৫৫ কোটি টাকা, যা গত চার মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে গত ২৩ জুন ডিএসইতে সর্বনিম্ন ২৭৬ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল।
২ ঘণ্টা আগেদাবা বিশ্বকাপে বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিনিধিত্বকারী মনন রেজা নীড়ের বিশ্বজয়ের যাত্রার অংশীদার হতে পেরে গর্বিত বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ।
৪ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি ছয়টি ব্যাংক থেকে প্রতি ডলার ১২১ টাকা ৮০ পয়সা দরে ৩৮ মিলিয়ন ডলার কিনেছে। চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ব্যাংকগুলো থেকে মোট ২ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
৪ ঘণ্টা আগে