বাণিজ্য উপদেষ্টাকে ডিসিসিআই সভাপতি

এলডিসি উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কাঠামোগত সংস্কার জরুরি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
প্রকাশ : ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪: ৩৮

বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিশেষ করে আমদানি-রপ্তানি নীতিমালা, রাজস্ব কাঠামো, আর্থিক ব্যবস্থাপনা, লজিস্টিক নীতিমালা এবং জাতীয় বাজেট ও মুদ্রানীতিসহ ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংশ্লিষ্ট বিদ্যমান কাঠমোর সংস্কার ও যুগোপযোগীকরণের কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ।

বিজ্ঞাপন

রোববার বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সঙ্গে সচিবালয়ে তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সৌজন্য সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ এ অভিমত ব্যক্ত করেন।

কোভিড মহামারি, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতা, ২০২৪ সালে দেশের রাজনৈতিক পট-পরিবর্তন পরবর্তী অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশ এলডিসি পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার প্রস্তুতি ভালোভাবে গ্রহণ করতে পারেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আমাদের এলডিসি উত্তরণের সময়সীমা পিছিয়ে নেওয়ার বিষয়টি সরকার বিবেচনা করতে পারে।

ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, এ লক্ষ্যে সরকার ও বেসরকারিখাতের যৌথ আলোচনার মাধ্যমে করণীয় নির্ধারণ ও যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য ‘বাস্তবভিত্তিক উত্তরণ কৌশল (স্মুথ ট্রানজিশন স্ট্র্যাটেজি-এসটিএস)’ প্রণয়ন করা আবশ্যক। পাশাপাশি এলডিসি পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে ব্যবসা ও বিনিয়োগের ধারাবাহিতকা বজায় রাখতে সরকারের পক্ষ হতে বেসরকারিখাতকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানের ওপর জোর দেন তিনি।

তিনি বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্তৃক সম্প্রতি শতাধিক পণ্যের উপর ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক, আবগারি শুল্ক ও কর বৃদ্ধির উদ্যোগের কারণে ইতোমধ্যে দেশের সাধারণ মানুষ সহ ব্যবসায়ীদের মাঝে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে জনগণের জীবনযাত্রার ওপর আরও অধিক হারে চাপ ফেলবে, সেই সাথে ব্যবসায়িক ও বিনিয়োগ কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ হবে। যদিও সরকার বেশকিছু খাতের উপর প্রস্তাবিত শুল্ক বৃদ্ধির উদ্যোগ পুনর্বিবেচনা করবে বলে জানিয়েছে, তবে আসন্ন রামজানকে সামনে রেখে এ পরিস্থিতিতে ভ্যাট, ট্যাক্স বাড়ানোর উদ্যোগ কোনভাবেই কাম্য নয় বলে মত প্রকাশ করেন ডিসিসিআই সভাপতি। বাজারে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে পণ্যের সাপ্লাইচেইন ব্যবস্থাপনায় বিদ্যমান অনিয়ম দূর করতে বাজার মনিটরিং কার্যক্রম বাড়ানোর আহ্বান জানান তাসকীন আহমেদ।

তিনি আরও বলেন, বিশেষকরে রমজান মাসে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের প্রাপ্তি ও সহনীয় মূল্য নিশ্চিতকল্পে এ ধরনের পণ্যের সরবরাহ বাড়ানো, বাজার নজরদারিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কঠোর উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন জরুরি।

সাক্ষাৎকালে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, জুলাই গণঅভ্যুথান পরবর্তী সময়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অস্থিরতা এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে অপ্রত্যাশিত বন্যার কারণে স্থানীয়ভাবে ব্যবসায়িক কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে, তবে ইতোমধ্যে সামগ্রিক পরিস্থিতির বেশ উন্নতি হয়েছে এবং অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার এ অবস্থা হতে উত্তরনের লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, আসন্ন রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল থাকবে, তবে সম্প্রতি চালের মূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিষয়টি সরকারের নজরে এসেছে, যা সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে আমাদের বিদ্যমান কর আহরণের হার ও করজাল সম্প্রসারণের কোন বিকল্প নেই বলে তিনি মতপ্রকাশ করেন।

এলডিসি উত্তরণের ফলে দেশের বেসরকারিখাত বেশ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে উল্লেখ করে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, বিষয়টি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ, এ লক্ষ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংশ্লিষ্ট নীতিমালার সংস্কার ও সকলের সম্মিলিত উদ্যোগ একান্ত অপরিহার্য। এ লক্ষ্যে বাস্তবভিত্তিক উত্তরণ কৌশল (স্মুথ ট্রানজিশন স্ট্র্যাটেজি-এসটিএস)-এর পুনপর্যালোচনার ওপর তিনি জোরারোপ করেন।

তিনি বলেন, নীতি সহায়তা ও ধারাবাহিকতা অব্যাহত না থাকলে স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগের সম্ভাবনা হ্রাস পাবে। তবে ভবিষ্যতে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বেসরকারিখাতের সক্ষমতা বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই বলে বাণিজ্য উপদেষ্টা মতপ্রকাশ করেন।

ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী এবং সহ-সভাপতি মো. সালিম সোলায়মান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত