আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

পাঁচ ব্যাংকের টাকা ফেরতে স্কিম ঘোষণা

মেয়াদ পূর্ণ হলেও ভাঙানো যাবে না মেয়াদি আমানত, নির্ধারিত হলো সময়সীমা

রোহান রাজিব

মেয়াদ পূর্ণ হলেও ভাঙানো যাবে না মেয়াদি আমানত, নির্ধারিত হলো সময়সীমা

একীভূত প্রক্রিয়ায় থাকা পাঁচটি সমস্যাগ্রস্ত ইসলামী ব্যাংকের আমানতকারীদের জন্য বিশেষ রেজুলেশন স্কিম ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই স্কিম অনুযায়ী আমানতকারীরা প্রথমে দুই লাখ টাকা তুলতে পারবেন। এরপর যারা দুই লাখ টাকার বেশি আমানত রেখেছেন, তারা স্কিম কার্যকর হওয়ার পর প্রতি তিন মাস অন্তর এক লাখ টাকা করে সর্বোচ্চ দুবছর তোলার সুযোগ পাবেন। তবে মেয়াদি আমানতগুলো মেয়াদ পূর্ণ হলেও ভাঙাতে পারবেন না। এ ক্ষেত্রে সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার এ-সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

পাঁচটি ইসলামি ব্যাংককে একীভূত করে একটি ব্যাংক গঠনের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলো হলোÑফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক। এসব ব্যাংক অধিগ্রহণ করবে নবগঠিত ‘সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক’।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, দীর্ঘদিনের অনিয়ম, তীব্র তারল্য সংকট এবং উচ্চমাত্রার খেলাপি ঋণের কারণে এসব ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম ভেঙে পড়ে। ফলে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত নিশ্চিত করা এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা রক্ষার স্বার্থে রেজুলেশন স্কিম বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

তিন মাস অন্তর এক লাখ টাকা তোলা যাবে সর্বোচ্চ দুবছর

স্কিম অনুযায়ী আমানতের পরিমাণের ভিত্তিতে টাকা ফেরতের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। যেসব গ্রাহকের আমানত দুই লাখ টাকা পর্যন্ত, তাদের অর্থ সম্পূর্ণ সুরক্ষিত থাকবে। আমানত সুরক্ষা আইনের আওতায় স্কিম কার্যকরের পর যেকোনো সময় এ টাকা উত্তোলন করা যাবে। দুই লাখ টাকার বেশি আমানতের ক্ষেত্রে কিস্তিতে অর্থ পরিশোধ করা হবে। এক্ষেত্রে দুই লাখ টাকা উত্তোলনের পর অবশিষ্ট অর্থ থেকে প্রতি তিন মাসে এক লাখ টাকা করে সর্বোচ্চ দুবছর পর্যন্ত উত্তোলন করতে পারবে। শুধু প্রাতিষ্ঠানিক চলতি, সঞ্চয়ী ও এসএনডি আমানতের ক্ষেত্রে এই নির্দেশনা কার্যকর হবে।

মেয়াদি আমানত পরিশোধে সময়সীমা নির্ধারণ

অপ্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীদের মেয়াদি, স্থায়ী বা শরিয়াহভিত্তিক অনুরূপ আমানতের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী তিন মাস বা তদূর্ধ্ব মেয়াদি আমানত মেয়াদপূর্তির আগে পরিশোধ করা যাবে না। মেয়াদপূর্তির পর আমানত পরিশোধের ক্ষেত্রে আমানতের মেয়াদ অনুযায়ী নির্ধারিত সূচি অনুসরণ করতে হবে।

নির্দেশনা অনুযায়ী, তিন মাস মেয়াদি এফডিআর স্বয়ংক্রিয়ভাবে তিনবার নবায়ন হবে, যা এক বছর মেয়াদি হিসাবে চলবে। তিন মাসের বেশি কিন্তু ছয় মাসের বেশি নয়Ñএমন এফডিআর স্বয়ংক্রিয়ভাবে দুবার নবায়ন হবে। ছয় মাসের বেশি, কিন্তু এক বছরের কম মেয়াদের এফডিআর স্বয়ংক্রিয়ভাবে দুবার নবায়ন হবে। এক বছরের বেশি, কিন্তু দুবছরের কম মেয়াদের এফডিআর তিন বছর মেয়াদি হিসেবে ধরা হবে। দুবছরের বেশি, কিন্তু তিন বছরের কম মেয়াদের এফডিআর চার বছর মেয়াদি হিসেবে ধরা হবে। তিন বছরের বেশি, কিন্তু চার বছরের কম মেয়াদের এফডিআর পাঁচ বছর মেয়াদি হিসেবে ধরা হবে। আর চার বছরের ঊর্ধ্বের মেয়াদি আমানত মেয়াদপূর্তির পর পরিশোধযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। তবে কিডনি রোগী ও ক্যানসার আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে স্কিমের শর্তাবলি প্রযোজ্য হবে না।

স্থায়ী আমানতকারীদের জন্য নতুন বিনিয়োগ ও ঋণ সুবিধা

ব্যাংক ও আর্থিক খাতের বাইরে অন্যান্য স্থায়ী আমানতকারীরা তাদের স্থায়ী আমানতের বকেয়া স্থিতির বিপরীতে নতুন ব্যাংক থেকে বিনিয়োগ বা ঋণ সুবিধা নিতে পারবেন। নিয়ম অনুযায়ী এসব গ্রাহক তাদের স্থায়ী আমানতের বকেয়ার সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ বা ঋণ সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন।

নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের মতে, এই পদক্ষেপটি সাধারণ আমানতকারীদের জন্য আরো সহজ ও প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করবে এবং বিনিয়োগ ও ঋণ প্রক্রিয়াকে আরো সহায়ক করে তুলবে।

প্রাতিষ্ঠানিক আমানত শেয়ারে রূপান্তর

রেজুলেশন স্কিম অনুযায়ী, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্থায়ী আমানতের সাত হাজার ৫০০ কোটি টাকা নতুন ব্যাংকের ‘খ’ শ্রেণির শেয়ারে রূপান্তর করা হবে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীদের আরো সাত হাজার ৫০০ কোটি টাকার আমানত ‘গ’ শ্রেণির শেয়ারে রূপান্তর করা হবে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্র্যাচুইটি, জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি, বহুজাতিক কোম্পানি, রেজুলেশনের আওতাভুক্ত ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানি এবং বিদেশি দূতাবাসগুলোর ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে না।

কর্মকর্তাদের স্থানান্তর ও শর্তাবলি

নীতিমালার তথ্য অনুযায়ী হস্তান্তরকারী (পুরোনো পাঁচটি) ব্যাংকে কর্মরত যেসব কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বিরুদ্ধে কোনো মামলা বা বিভাগীয় অভিযোগ নেই, তারা নির্ধারিত দিনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নতুন সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের কর্মী হিসেবে গণ্য হবেন।

তবে তাদের চাকরির ক্ষেত্রে কিছু কঠোর শর্তারোপ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনসাপেক্ষে নতুন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ কর্মকর্তাদের চাকরির বিদ্যমান শর্তাবলি পুনর্নির্ধারণ করতে পারবে। যদি শর্ত পরিবর্তনের ফলে কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীর প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধা বা বেতনভাতা আগের তুলনায় কমে যায়, তাহলে ওই কর্মী এ নিয়ে আইনি বা প্রাতিষ্ঠানিক আপত্তি তুলতে পারবেন না। এছাড়া হস্তান্তরকারী ব্যাংকের কোনো কর্মী যদি নতুন ব্যাংকে চাকরি করতে অনিচ্ছুক হন, তাহলে তাকে লিখিতভাবে তা জানাতে হবে। সে ক্ষেত্রে তিনি নতুন ব্যাংকের কর্মচারী হিসেবে গণ্য হবেন না।

অব্যাহতি ও বরখাস্ত-সংক্রান্ত নিয়ম

নীতিমালায় আরো উল্লেখ করা হয়েছে, নতুন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ যদি ব্যাংকের স্বার্থে প্রয়োজনীয় মনে করে কিংবা কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রতারণামূলক বা চাকরিবিধি পরিপন্থী কর্মকাণ্ডের প্রমাণ পায়, তাহলে তাকে যেকোনো সময় কারণ দর্শানো ছাড়াই বরখাস্ত করতে পারবে।

কেন এই রেজুলেশন

বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, গত এক বছরে একাধিক দফা তারল্য সহায়তা দেওয়া হলেও ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থার কোনো টেকসই উন্নতি হয়নি। সুশাসনের অভাব এবং উচ্চ খেলাপি ঋণের কারণে গ্রাহকদের আমানত ফেরত দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। এ প্রেক্ষাপটে ব্যাংক রেজুলেশন অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর আওতায় পাঁচটি ব্যাংক একীভূত করে নতুন ব্যাংক গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

নতুন সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন ধরা হয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ৩৫ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক মনোনীত সাত সদস্যের পরিচালনা পর্ষদ বর্তমানে ব্যাংকটির দায়িত্ব পালন করছে।

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...