মতামতের জন্য উন্মুক্ত আইপিও বিধিমালা

শেয়ারের মূল্য নির্ধারণে বড় ধরনের পরিবর্তনের প্রস্তাব

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১২: ৫৩

প্রাথমিক গণ প্রস্তাবে (আইপিও) শেয়ারের মূল্য নির্ধারণে বড় ধরনের পরিবর্তনের প্রস্তাব করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। প্রস্তাবে আইপিওতে কোম্পানির শেয়ারের মূল্যের যৌক্তিকতা নির্ধারণে অ্যাবসুলেট ও রিলেটিভ নামে দুটি মডেল চালুর কথা বলা হয়েছে। ফিক্সড কিংবা বুক বিল্ডিং যেকোনো পদ্ধতিতে তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে এ দুটি মডেলের মাধ্যমে কোম্পানির শেয়ারের মূল্যের যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে হবে। বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে মূল্য নির্ধারণের পর আইপিওতে প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ বিনিয়োগকারীরা একই ‘কাট অব প্রাইসে’ শেয়ার কিনতে পারবেন। প্রস্তাবিত বিধিমালায় আইপিও অনুমোদনে স্টক এক্সচেঞ্জের সুপারিশের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ স্টক এক্সচেঞ্জের সুপারিশ ব্যতীত বিএসইসি কোনো আইপিও আবেদন অনুমোদন দেবে না।

বিজ্ঞাপন

গত ৩০ নভেম্বর সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (পাবলিক অফার অব ইকুইটি সিকিউরিটিজ) বিধিমালা, ২০২৫ নামে এ বিধিমালার খসড়া বিএসইসির ওয়েবসাইটে অংশীজনের মতামতের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। আগামী ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত খসড়ার বিষয়ে মতামত দেওয়া যাবে। এসব মতামতের ভিত্তিতে পরিবর্তন বা সংশোধনসাপেক্ষে বিধিমালা চূড়ান্তকরণে বিএসইসির কমিশন সভায় উপস্থাপন করা হবে। কমিশনের অনুমোদন পাওয়ার পর গেজেট আকারে প্রকাশ করার পর বিধিমালাটি কার্যকর হবে।

প্রস্তাবিত বিধিমালায় কোম্পানির শেয়ারের মূল্য নির্ধারণে আগের মতোই ফিক্সড প্রাইস ও বুক বিল্ডিং মেথড বহাল রয়েছে। যেসব কোম্পানির আইপিও এবং আইপিও পরবর্তী পরিশোধিত মূলধন ১০০ কোটি টাকা পর্যন্ত হবে সেসব কোম্পানি ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে তালিকাভুক্তির আবেদন করতে পারবে। অন্যদিকে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে আবেদন করতে হলে পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ১০০ কোটি টাকার বেশি হতে হবে। তবে যে পদ্ধতিতেই আবেদন করুক না কেন কোম্পানির শেয়ারের দরের যৌক্তিকতা নির্ধারিত হতে হবে অ্যাবসুলেট এবং রিলেটিভ ভ্যালু মেথডে।

প্রস্তাবনা অনুযায়ী, ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতিতে অভিহিত মূল্যের পাশাপাশি প্রিমিয়াম মূল্যেও আবেদন করতে পারবে ইস্যুয়ার কোম্পানি। তবে ফিক্সড প্রাইস মেথডে কোনো কোম্পানি তার শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্যের চেয়ে বেশি প্রিমিয়াম দাবি করতে পারবে না। তবে প্রিমিয়ামের যে মূল্যই দাবি করা হোক না কেন তার যৌক্তিকতা তুলে ধরতে হবে ইস্যু ম্যানেজারকে।

অন্যদিকে বুক বিল্ডিং মেথডে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে নির্দেশক মূল্য (ইন্ডিকেটিভ প্রাইস) নির্ধারণে রোড শোর আয়োজন করতে হবে। রোড শোর মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে শেয়ারের মূল্য নির্ধারণে তাদের ইনপুট নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে মোট ৭৫টি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এর মধ্যে কমপক্ষে ১৫টি করে পোর্টফোলিও ম্যানেজার, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট ও স্টক ডিলারের ইনপুট থাকতে হবে। এ তিনটি গ্রুপ ছাড়া অন্যান্য গ্রুপ থেকে কমপক্ষে তিনটি গ্রুপের ১০টি করে মোট ৩০টি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর শেয়ারের মূল্য নির্ধারণে ইনপুট দিতে হবে, এদের মধ্যে অবশ্যই ব্যাংক থাকতে হবে। কমপক্ষে ৭৫টি প্রতিষ্ঠানের মূল্য নির্ধারণের বিষয়ে ইনপুট না থাকলে ইনডিকেটিভ প্রাইস নির্ধারণ গ্রহণযোগ্য হবে না বলে প্রস্তাবে বলা হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা যে ইনডিকেটিভ প্রাইস নির্ধারণ করুক না কেন সেটা অবশ্যই অ্যাবসুলেট ভ্যালু ও রিলেটিভ ভ্যালুর সঙ্গে যৌক্তিক হতে হবে।

অ্যাবসুলেট ও রিলেটিভ প্রাইস মেথডে শেয়ারের মূল্য নির্ধারণে পাঁচটি মডেল দেওয়া হয়েছে। এসব মেথডের মডেলগুলোর মধ্যে দুটি মডেলের সঙ্গে মূল্যের সামঞ্জস্যতা থাকতে হবে।

প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে কোম্পানির শেয়ারের নির্দেশক মূল্য নির্ধারিত হওয়ার পর সেই মূল্যের সঙ্গে ২৫ শতাংশ যোগ এবং বিয়োগ করে বিডিংয়ের জন্য শেয়ারের মূল্যের যথাক্রমে ঊর্ধ্বস্তর ও নিম্নস্তর নির্ধারণ করা হবে। ঊর্ধ্বস্তর ও নিম্নস্তরের মধ্যে বিদ্যমান ব্যবধানে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা শেয়ারের মূল্য ও শেয়ার কেনার সংখ্যা উল্লেখ করে বিডিং প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করবে। বিডিং প্রক্রিয়ায় যে মূল্যে সবগুলো শেয়ারের বিডিং শেষ হবে সেটি হবে কাট অব প্রাইস অর্থাৎ শেয়ারের আইপিও মূল্য। আর এ মূল্যেই সাধারণ বিনিয়োগকারীর পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা আইপিওর মাধ্যমে শেয়ার কিনতে পারবেন। আগে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা যে দরে শেয়ার বিডিং করতেন সে দরেই শেয়ার ক্রয় করতে হতো। কিন্তু প্রস্তাবিত খসড়ায় সবার জন্য একই মূল্য রাখা হয়েছে।

প্রস্তাবিত বিধিমালার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজের প্রধান নির্বাহী মনিরুজ্জামান আমার দেশকে বলেন, শেয়ারের মূল্য নির্ধারণে আগের তুলনায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে। তবে ৭৫ জন যোগ্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে ইন্ডিকেটিভ প্রাইস নির্ধারণের বিষয়টি কতটা বাস্তবসম্মত, সেটি একটি প্রশ্ন। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা যদি প্রাইস নির্ধারণ করে, সেক্ষেত্রে তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আসতে হতে পারে কিন্তু তারা কেন এ ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে চাইবে? বরং তারা সরাসরি বিডিংয়ে অংশ নিতেই আগ্রহী হবে। এছাড়া রোড শো সম্পন্ন হওয়ার অনেক সময় পর আইপিও অনুমোদন দেওয়া হয়। দীর্ঘ সময়ের বিরতির কারণে শেয়ারের মূল্যের যথার্থতা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠে। এ জন্য স্বল্প সময়ের মধ্যে আইপিও অনুমোদন দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বিএসইসি ২০২৪ সালে বেশকিছু বিধিমালা সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। আইপিও বিধিমালা তার মধ্যে অন্যতম। গত মার্চে টাস্কফোর্স আইপিও খসড়া বিধিমালা বিএসইসিতে জমা দেয়। অনুমোদিত খসড়া বিধিমালাটি গত ৩০ অক্টোবর উন্মুক্ত করেছে বিএসইসি।

এদিকে আইপিও বিধিমালা চূড়ান্ত না হওয়ার কারণে কোনো আইপিও অনুমোদন দিচ্ছে না বিএসইসি। এ কারণে গত এক বছরের বেশি সময় ধরে আইপিও অনুমোদন বন্ধ রয়েছে। এত দীর্ঘ সময়ে কোনো কোম্পানির আইপিও অনুমোদন না দেওয়ার ঘটনা নজিরবিহীন বলে বাজার সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত