এনবিআরের অধ্যাদেশ সংশোধনে একগুচ্ছ প্রস্তাব

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে দুটি পৃথক বিভাগ গঠনে জারিকৃত অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় সংশোধনীর লক্ষ্যে একগুচ্ছ প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।

গত সপ্তাহে ‘এনবিআর সংস্কার সমন্বয় কমিটি’র পক্ষ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে ছক আকারে জারিকৃত অধ্যাদেশের বিধান, প্রস্তাবিত বিধান এবং প্রস্তাবনার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে তা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এনবিআর কর্মকর্তাদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার কথা জানিয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয়। সে হিসেবে আজ বৃহস্পতিবারের মধ্যে সংশোধিত অধ্যাদেশ জারির কথা রয়েছে।

এদিকে জারিকৃত অধ্যাদেশে যেসব সংশোধনী আনার জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে রাজস্ব নীতি বিভাগকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘বিশেষায়িত’ বিভাগ হিসেবে গড়ে তোলা। জারিকৃত অধ্যাদেশে শুধু নীতি বিভাগ গঠনের কথা বলা হয়েছে। অপরদিকে নীতি বিভাগের সচিব পদে বিদ্যমান অধ্যাদেশ অনুযায়ী উপযুক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়ার বিধানের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সংশোধনীর প্রস্তাবনায় রাজস্ব আহরণ কর্মে অভিজ্ঞ ও উপযুক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন কোনো সরকারি কর্মকর্তার পাশাপাশি রাজস্ব নীতিতে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিকে ‘নীতি বিভাগের’ সচিব পদে নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। ‘রাজস্ব নীতি বিভাগে’ নীতি-সংক্রান্ত যেসব অনুবিভাগ গঠিত হবে, সেগুলোর বিভিন্ন পদ বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (কর) ও বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (শুল্ক ও আবগারি) ক্যাডার কর্মকর্তাদের দ্বারা পূরণ করার কথা বলা হয়েছে প্রস্তাবনায়। রাজস্ব ব্যয় নীতিমালা প্রণয়ন এবং রাজস্ব ব্যয় প্রাক্কলনকে গঠিতব্য রাজস্ব নীতি বিভাগে ন্যস্ত করার কথা বলা হয়েছে প্রস্তাবনার সংশোধনীতে। এ বিষয়ে জারিকৃত অধ্যাদেশে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার সঙ্গে দ্রুত অটোমেশনের কথা বলা হয়েছে। অপরদিকে অধ্যাদেশে রাজস্ব নীতি প্রণয়নে পরামর্শ দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি পরামর্শক কমিটি গঠনের কথা বলা হলেও কমিটির সদস্য সংখ্যা ও মেয়াদ সম্পর্কে কোনো কিছু বলা হয়নি। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে কমিটির সদস্য সংখ্যা সর্বোচ্চ ১৫ এবং মেয়াদকাল সর্বোচ্চ তিন বছর নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়েছে।

অধ্যাদেশ কার্যকরের বিষয়ে প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, রুলস অব বিজনেস ১৯৯৬-এ সরকারের উপসচিব, যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সচিব পদে পদোন্নতির বিধিমালা-২০০২ সহ নিয়োগ-সংক্রান্ত বিভিন্ন আইন, বিধিমালায় প্রয়োজনীয় সংশোধনসাপেক্ষে অধ্যাদেশ বাস্তবায়নের বিষয়টি উল্লেখ থাকতে হবে। কিন্তু জারিকৃত অধ্যাদেশে এ বিষয়ে কোনো কিছুই বলা হয়নি।

উল্লেখ্য, গত ১২ মে রাতে এনবিআর বিলুপ্ত করে দুটি পৃথক বিভাগ গঠনে অধ্যাদেশ জারি করা হয়। ওই অধ্যাদেশে রাজস্ব কর্মকর্তাদের পরিবর্তে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছেÑএমন অভিযোগ তুলে আন্দোলন করে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। তাদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে অধ্যাদেশে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনার বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু সেই আশ্বাস দেওয়ার পর অসহযোগিতার অভিযোগ এনে এনবিআর চেয়ারম্যানকে অপসারণের দাবিতে আন্দোলন করেন এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সরকারের কঠোর হুঁশিয়ারি ও দুদকের তদন্তের খবরে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেয় তারা।