বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ বেড়েছে ৫৭ শতাংশ

রোহান রাজিব
প্রকাশ : ১৮ মে ২০২৫, ১৯: ৩৯

বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকারের ব্যাপক হারে ঋণ বেড়েছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে ১২ মে পর্যন্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে এক লাখ ৮ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা নিট ঋণ নেওয়া হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৫৭ শতাংশ বেশি। ফলে এসব ব্যাংক থেকে নেওয়া সরকারের ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৮৫ হাজার ৫৬৮ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

খাত-সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, সরকারের রাজস্ব আদায়ে মন্দাবস্থা বাজেট ঘাটতি মেটাতে ঋণ বৃদ্ধি, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধিতে ধীরগতি ও আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ব্যবসা-বাণিজ্যে অনিশ্চয়তাসহ নানা কারণে সরকারের ব্যাংক ঋণ ব্যাপক হারে বেড়েছে।

বিজ্ঞাপন

তবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ১০ মাস ১২ দিনে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে নেওয়া ঋণের মাধ্যমে সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নেওয়া ধারের ৪৯ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। ফলে ব্যাংক খাত থেকে সরকারের নিট ঋণ দাঁড়িয়েছে ৫৬ হাজার ১১৬ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৫১ হাজার ৬৩৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ ১০ মাস ১২ দিনে ঋণ বেড়েছে ৪ হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৬ হাজার ৬৪ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, অর্থবছরের শেষ সময়ে স্বাভাবিকভাবে সরকারের ঋণ বেড়ে থাকে। তবে এখন পর্যন্ত যে ঋণ নিয়েছে, লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় তা অনেক কম। আওয়ামী লীগ সরকারের দেওয়া বাজেটে চলতি অর্থবছর ব্যাংক থেকে এক লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে অন্তর্বর্তী সরকার লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৯৯ হাজার কোটি টাকা করেছে। গভর্নর জানিয়েছেন, ব্যাংক খাতের বর্তমান বাস্তবতায় সরকারের ঋণ ৯০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে সীমিত রাখা হবে।

নতুন অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি কমাতে সরকার ব্যাংক ঋণ নেওয়া অনেক কমানোর পরিকল্পনা করছে। আগামী অর্থবছরের ব্যাংক ঋণের পরিমাণ চলতি অর্থবছরের মূল লক্ষ্যমাত্রা থেকে প্রায় ২৫ শতাংশ কমিয়ে এক লাখ চার হাজার কোটি টাকা করা হবে।

সম্প্রতি অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বা টাকা ছাপিয়ে বাজেট বাস্তবায়ন করা ঠিক হবে না। আগামী অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য হবে।’

সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমান সরকার ব্যয় সংকোচন নীতিতে চলছে। তবে বকেয়া ঋণ ও সুদ পরিশোধ অনেক বেড়েছে। আবার বেতন-ভাতাসহ সরকারের চলতি ব্যয় প্রতিবছর বেড়েই থাকে। তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত সরকার সরাসরি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিল। অর্থনীতিবিদ ও সংশ্লিষ্টরা এর সমালোচনা করে বলেছিলেন যে, এটি মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে দিচ্ছে। এরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই ঋণ সুবিধা বন্ধ করে দেয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণ দেওয়া বন্ধ করায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে বড় অঙ্কের ঋণ নেওয়া ছাড়া সরকারের কোনো উপায় ছিল না। উচ্চ সুদহার ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে বেসরকারি খাত ঋণ নিতে আগ্রহী নয়।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই থেকে ১২ মে পর্যন্ত সার্বিকভাবে ব্যাংক ব্যবস্থায় সরকারের ঋণস্থিতি দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজার ৬০৬ কোটি টাকা। গত জুন শেষে যা ছিল ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত