টিসিবির পণ্য কিনতে দীর্ঘ সারি ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে বিশৃঙ্খলা

সরদার আনিছ
প্রকাশ : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮: ৫৫

জধানীতে টিসিবির (ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ) ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে পণ্য বিক্রি কার্যক্রমের শেষের দিকে এসেও ক্রেতাদের ভিড় কমছে না। সরবরাহ সীমিত থাকায় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও অনেকে পণ্য না পেয়ে খালি হাতে ফিরছেন। অধিকাংশ ট্রাকের সামনে নারী-পুরুষের বিশৃঙ্খলা, দীর্ঘ অপেক্ষা আর হুড়োহুড়ি এখন নিত্যদিনের চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর টিসিবির কয়েকটি বিক্রি পয়েন্ট ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

টিসিবির কার্যক্রমের আওতায় রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে বিক্রি হচ্ছে সয়াবিন তেল, মসুর ডাল ও চিনি। তবে সরবরাহের তুলনায় চাহিদা এত বেশি যে, বিকালের আগেই অধিকাংশ ট্রাকে পণ্য শেষ হয়ে যাচ্ছে। ফলে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা বহু মানুষকে পণ্য না পেয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে একই ব্যক্তি বারবার লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বিজ্ঞাপন

নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে গত ১০ আগস্ট থেকে স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ডধারী পরিবারের বাইরে ঢাকাসহ চার মহানগরে ও পাঁচ জেলায় সাশ্রয়ী মূল্যে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে পণ্য বিক্রি শুরু করে টিসিবি। বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় নিম্নবিত্তের পাশাপাশি মধ্যবিত্তরাও এখন টিসিবির লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনছেন।

গতকাল বেলা সাড়ে ৩টার দিকে কারওয়ানবাজারে মেট্রোরেলের নিচে দেখা যায়, টিসিবির ট্রাকের সামনে ২০০ জনের মতো নারী-পুরুষ দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। পুরুষদের লাইনে তুলনামূলক শৃঙ্খলা থাকলেও নারীদের লাইনে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা যায়। অনেকে নিয়ম না মেনে জোর করে পণ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছেন, কেউ কেউ বারবার লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য নিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন উপস্থিত ক্রেতারা।

তেজকুনিপাড়া থেকে আসা ওয়াহিদা বলেন, দুই ঘণ্টারও বেশি সময় অপেক্ষা করেও পণ্য পাইনি। সংসারের খরচ বেড়েছে, ইনকাম তো বাড়েনি। ট্রাক থেকে পণ্য কিনতে পারলে কিছুটা সাশ্রয় হতো। কাঁঠালবাগান থেকে আসা ফিরোজা বলেন, তিন ঘণ্টার বেশি লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনতে পেরেছি। সরবরাহ এতই কম যে, অপেক্ষা করেও অনেকে কিছু পাননি।

এছাড়া রাজধানীর সচিবালয়, ফার্মগেট, খামারবাড়ি, খাদ্যভবন ও কাঁঠালবাগানসহ বিভিন্ন এলাকায় ট্রাকের সামনে ক্রেতার ভিড় লক্ষ করা গেছে। বিকালের আগেই পণ্য শেষ হয়ে যাওয়ায় অনেককেই পণ্য না পেয়ে খালি হাতে ফেরত যেতে হয়েছে।

কারওয়ানবাজারের মেট্রোরেল পয়েন্টে টিসিবির ট্রাকে পণ্য বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স গ্রানা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ফিরোজ মাহফুজ আমার দেশকে বলেন, ৫০০ জনের পণ্যের বিপরীতে ক্রেতার ভিড় প্রচুর, এর মধ্যে নারীরা বেশি ঝামেলা করছে। কোনো কোনো নারী একাধিকবার নিয়ে বস্তা ভরার কথাও জানান তিনি। হুড়োহুড়ির বিষয়ে তিনি বলেন, পুরুষরা সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনলেও নারীরা হুড়োহুড়ি করেন। এক্ষেত্রে আমরা অনেকটাই নিরুপায়।

এই পয়েন্টের তদারকির দায়িত্বে থাকা ঢাকা জেলা সমবায় কার্যালয়ের সমবায় অফিসার রাজ্জাক উল্লাহ পাটোওয়ারী বলেন, একজনের কয়েকটি পয়েন্টের কার্যক্রম তদারকি করতে হয়, ফলে সকালে যতটুকু দেখেছি তাতে নারীরা বেশি ঝামেলা করেন। হাতে কালি লাগানোর পরও তা মুছে আবারও লাইনে দাঁড়ান।

এ বিষয়ে টিসিবির মিডিয়া মুখপাত্র উপপরিচালক (বাণিজ্যিক) শাহাদত হোসেন কিছু কিছু পয়েন্টে বিশৃঙ্খলা হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, নারীরা বেশি ঝামেলা করে এবং একাধিকবার পণ্য কেনার চেষ্টা করে থাকে।

এর আগে সর্বশেষ পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে গত মে মাসে টিসিবি ট্রাকসেলে দেশব্যাপী পণ্য বিক্রি করে। ওই সময় একজন ভোক্তা ১৩৫ টাকা কেজি দরে দুই লিটার সয়াবিন তেল, ৮০ টাকা কেজি দরে দুই কেজি মসুর ডাল এবং ৮৫ টাকায় এক কেজি চিনি কিনতে পারলেও এবার একজন ক্রেতা কেজিপ্রতি ৭০ টাকা দামে দুই কেজি মসুর ডাল, প্রতি লিটার ১১৫ টাকা দামে দুই লিটার সয়াবিন তেল এবং ৮০ টাকা দামে এক কেজি চিনি কিনতে পারছেন।

তবে স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ডধারীর মাঝে বিক্রয়মূল্য আগের মতো বহাল। বর্তমানে স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ডধারীদের কাছে ভোজ্যতেল ১০০ টাকা, মসুর ডাল ৬০ টাকা এবং চিনি ৭০ টাকা কেজি বিক্রি করছে টিসিবি।

ঢাকা মহানগরীতে ১০ আগস্ট শুরু হওয়া কার্যক্রম চলবে ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এ সময় মোট ৬০টি ট্রাকে পণ্য বিক্রি করছে টিসিবি। রাজধানীর বাইরের জেলাগুলোর কার্যক্রম ৩১ আগস্ট শেষ হয়েছে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত