এনবিআরে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন চলছেই

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
প্রকাশ : ১৮ জুলাই ২০২৫, ১৫: ০৪

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন চলছেই। বদলির আদেশ ছিঁড়ে ফেলার ঘটনার আরো সাত জনকে সামরিক বরখাস্তকরা হয়েছে। গতকাল তাদের বরখাস্তের বিষয়ে পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে এনবিআর।

আন্দোলন প্রত্যাহার করে কাজে যোগ দিলেও দুই সপ্তাহেও স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসেনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর)। আন্দোলন প্রত্যাহারের পর থেকে বাধ্যতামূলক অবসর, সাময়িক বরখাস্ত, বদলি কিংবা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ফলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ‘শাস্তির আতঙ্ক’ বিরাজ করছে।

বিজ্ঞাপন

এনবিআরের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আমার দেশকে বলেন, একের পর এক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কারণে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসছে না। সবার মধ্যেই এক ধরনের অস্থিরতা ও উদ্বেগ কাজ করছে। এ পরিস্থিতির আশু অবসান হওয়া উচিত।

তবে তারা মনে করছেন, যারা আন্দোলনের নামে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করেছিল, তাদের বিরুদ্ধেই সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে। তবে অযথা যাতে কেউ হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয়টি নিশ্চিত করা উচিত। তা না হলে কাজের পরিবেশ বিনষ্ট হওয়ার শঙ্কা থেকে যাবে।

জানতে চাইলে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ আমার দেশকে বলেন, সরকারের রাজস্ব আদায়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমের সঙ্গে এনবিআর জড়িত। তাই এর কার্যক্রম বন্ধ রাখার অর্থই হচ্ছে সরকারের আয় বাধাগ্রস্ত করা। কারো ব্যক্তিগত ক্ষোভ থাকতেই পারে, সে এটা নিয়ে কথা বলতে পারে; সে অধিকার তার রয়েছে।

কিন্তু তাই বলে রাষ্ট্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করার মতো কাজ সমর্থন করা যায় না। কোনো কাজেই কারো বাড়াবাড়ি করা উচিত নয় মন্তব্য করে সাবেক এ চেয়ারম্যান বলেন, যারা যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছেন তাদের ভয় বা আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ থাকতে পারে না। এ নিয়ে আতঙ্ক ছড়ানোর কিছু নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এদিকে এনবিআরে আন্দোলন ইস্যুতে এ পর্যন্ত ২৫ জন সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন। এর মধ্যে বদলির আদেশ ছিঁড়ে ফেলার দায়ে বরখাস্ত হয়েছেন ২২ জন। এদের মধ্যে ১৫ জন ক্যাডার ও সাত জন নন-ক্যাডার কর্মকর্তা।

এ ছাড়া আন্দোলনে যোগদানে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের কমিশনার, গোপন তথ্য ফাঁসের কারণে একজন উপকমিশনার এবং চেয়ারম্যানকে কটূক্তি করার দায়ে একজন নিরাপত্তাকর্মীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। অন্যদিকে তিনজন সদস্যসহ চারজনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তাদের কয়েকজনের বিরুদ্ধে দুদকের তদন্ত চলছে। এ পর্যন্ত মোট ১৬ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত কার্যক্রম চলমান থাকার খবর পাওয়া গেছে।

আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা কয়েকশ কর্মকর্তা-কর্মচারীর একটি তালিকা তৈরি হয়েছে এবং এ তালিকা ধরেই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছেএমন আলোচনা রয়েছে এনবিআরে। তবে এ ধরনের তালিকার বিষয়ে স্পষ্ট কোনো কিছু জানা যায়নি। এনবিআরের দায়িত্বশীল কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, যেসব শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তা সরকারের সিদ্ধান্তে হচ্ছে।

এখানে এনবিআর চেয়ারম্যানের কোনো কিছুই করার নেই। এমনকি অর্থ উপদেষ্টাও এ বিষয়ে খুব একটা হস্তক্ষেপ করতে পারছেন না। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে তারা জানান। তবে যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তাদের সংখ্যা খুব বেশি হবে না বলেও তারা মনে করছেন।

গত ২৯ জুন আন্দোলন প্রত্যাহার করার পর গত ৮ জুলাই দুই শতাধিক কর্মকর্তা এনবিআর চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ‘গণক্ষমা’ প্রার্থনা করেছিলেন। চেয়ারম্যান তাদের বলেছিলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমি ক্ষমা করে দিয়েছি, কিন্তু যারা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে তাদের ক্ষমা করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের।

প্রায় দুই মাস ধরে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে কর্মকর্তারা চার দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যায়ে এসে মূল দাবি থেকে সরে এসে এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে ২৮ জুন থেকে টানা শাটডাউন কর্মসূচি পালন করেন।

এ কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে সরকারের পক্ষ থেকে আন্দোলন প্রত্যাহারে কঠোর হুঁশিয়ারি ঘোষণা এবং কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের তদন্ত চলমান থাকার কথা ঘোষণা করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ওই রাতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সমঝোতা বৈঠকে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেয় ঐক্য পরিষদ।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত