আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

তিন মাসে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ৬২ শতাংশ

রোহান রাজিব
তিন মাসে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ৬২ শতাংশ

আবার হোঁচট খেয়েছে দেশের বিদেশি বিনিয়োগ। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআই বেড়েছিল ৭৬ শতাংশ। তবে দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) বিদেশি বিনিয়োগ প্রায় ৬২ শতাংশ কমে গেছে। যদিও বছরের ব্যবধানে বিনিয়োগ বেড়েছে ১১ দশমিক ৪১ শতাংশ। গতকাল সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের ত্রৈমাসিক প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

বিজ্ঞাপন

রাজনৈতিক অস্থিরতা, গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটসহ বিভিন্ন কারণে দীর্ঘদিন ধরেই এফডিআই মন্দা ভাব চলছিল। গত বছরের শেষ ছয় মাসে তা ৭১ শতাংশ কমে যায়। তবে হঠাৎ চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময় এফডিআই আসার হার বেড়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল-জুন সময়ে নিট এফডিআই এসেছে ৩০ কোটি ৩২ লাখ ডলার। তার আগের তিন মাস জানুয়ারি-মার্চ সময়ে নিট এফডিআই এসেছিল ৭৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার। সে অনুযায়ী তিন মাসে বিদেশি বিনিয়োগ ৬১ দশমিক ৫২ শতাংশ কমেছে। তবে বছরের ব্যবধানে বিনিয়োগ ১১ দশমিক ৪১ শতাংশ বেড়েছে। গত বছরের এপ্রিল-জুন সময়ে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছিল ২৭ কোটি ২২ লাখ ডলার।

সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড পিস স্টাডিজের (সিএসপিএস) নির্বাহী পরিচালক কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. মিজানুর রহমান আমার দেশকে বলেন, ‘বিনিয়োগ কমার সুস্পষ্ট কারণ দেখছি না। তবে বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের যে ক্যারিশমা, সেটাও শেষ হয়ে আসছে। তাই বিনিয়োগকারীরা পরিবর্তিত পরিস্থিতি, নির্বাচন হয় কি—না তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় আছেন। পশ্চিমা দেশের যারা বিনিয়োগ করে, তারা একটা দেশের স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি চায়। এখন যেহেতু একটা অস্থিরতা চলছে। তাই তারা পরিস্থিতির পর্যবেক্ষণ করছে। এ কারণে বিনিয়োগ কমতে পারে। আবার এক প্রান্তিকে বাড়ে অন্য প্রান্তিকে কমে যায় এটাও স্বাভাবিক। প্রতি প্রান্তিকে বাড়বে এমন নয়।’

বিদেশি কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে কারখানা স্থাপন করে, নতুন প্রকল্পে টাকা আনে কিংবা শেয়ার কেনে—এসবই মোট বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) হিসেবে গণ্য হয়। এ অর্থ অর্থনীতিতে প্রবেশ করে। একই সঙ্গে বিদেশি কোম্পানিগুলো দেশ থেকে তাদের মুনাফা ফেরত নিয়ে যায়, কখনো আবার শেয়ার বিক্রি করে টাকা তুলে নেয়—এটি হলো এফডিআই আউট ফ্লো বা বহির্গমন। মোট এফডিআই থেকে আউট ফ্লো বাদ দিলে নিট এফডিআই পাওয়া যায়। এ অর্থই শেষ পর্যন্ত দেশের অর্থনীতিতে থাকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে নিট নতুন বিনিয়োগ বা ইক্যুইটি এসেছে আট কোটি ১৩ লাখ ডলার। আগের তিন মাসে এসেছিল ২৬ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। তিন মাসে ইক্যুইটি বিনিয়োগ ৬৯ দশমিক ১৮ শতাংশ কমেছে। এছাড়া গত এপ্রিল-জুন সময়ে নিট এফডিআইয়ের ১৬ কোটি ৮২ লাখ ডলার এসেছে পুনর্বিনিয়োগ আয় থেকে। জানুয়ারি-মার্চ সময় এসেছিল ১৯ কোটি ১১ লাখ ডলার। পুনর্বিনিয়োগ কমেছে ১২ শতাংশ। আন্তঃকোম্পানি ঋণ থেকে এসেছে পাঁচ কোটি ৩৭ লা্খ ডলার। আগের তিন মাসে এসেছিল ৩৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলেন, গত আগস্টের শুরুতে গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়। ফলে বিদেশি বিনিয়োগ কমে যায়। বর্তমান সরকার বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে নানারকম পদক্ষেপ নিয়েছে। তাই প্রথম তিন মাসে যেটা বেড়েছে, এটা তারও ফল হতে পারে। তবে এখনো রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। তাই আবার বিদেশি বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) একজন মহাপরিচালক আমার দেশকে বলেন, বিদেশি অনেক বিনিয়োগকারী আসছেন, আমাদের সঙ্গে আলোচনা করছেন। কিন্তু ওনারা বিনিয়োগের কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন না। কারণ রাজনৈতিক সরকার না থাকার কারণেই বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করছেন না। বর্তমান সরকার চেষ্টার পরও তাই বিনিয়োগ বাড়ছে না।

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন