কোরবানির ঈদ সামনে রেখে দোকানে দোকানে মসলার পসরা সাজিয়ে বসলেও এখনো বেচাকেনা সেভাবে জমে ওঠেনি বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। অন্যান্য বছর দুই সপ্তাহ আগে থেকেই রাজধানীর মসলার বাজারে বেচাকেনার ধুম পড়ে। তবে এবার ঈদ ঘনিয়ে এলেও ক্রেতা নেই বললেই চলে। পাইকারি ও খুচরা বাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, কয়েক বছরের মধ্যে ব্যবসায় সবচেয়ে মন্দা যাচ্ছে। যদিও ক্রেতারা বলছেন, দোকানিরা মন্দার কথা বললেও কোনো মসলার দাম কম না, বরং কোনো কোনো মসলার দাম উল্টো বেড়েছে।
গত বুধবার রাজধানীর মৌলভীবাজার, কারওয়ানবাজার, নয়াবাজারসহ বিভিন্ন মসলার পাইকারি বাজারে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খুচরা পর্যায়ে মান ও আকারভেদে প্রতি কেজি এলাচ বিক্রি হচ্ছে চার হাজার ৪০০ থেকে পাঁচ হাজার ৭৯০ টাকায়। ভালো মানের এলাচের দাম ছয় হাজার টাকা। ভারত থেকে আমদানি করা বড় গ্রিন জাম্বু এলাচের দাম কেজিতে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে পাঁচ হাজার ৮৫০ টাকায়। মাস কয়েক আগেও এ মানের এলাচ বিক্রি হতো দুই হাজার ৮০০ থেকে তিন হাজার টাকা কেজি। ৯৫০ টাকার গোলমরিচ এখন এক হাজার ৩৫০ টাকায়, লবঙ্গের দামও বেড়ে বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৩৫০ থেকে এক হাজার ৬০০ টাকায়। মাস তিনেক আগে মানভেদে প্রতি কেজি গোলমরিচের (কালো) কেজি ছিল ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা। সাদা গোলমরিচ কেজিতে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেড়ে এক হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে গত বছরের তুলনায় এবার জিরার দাম অনেকটাই কম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বছর জিরার কেজি হাজার টাকা ছাড়িয়েছিল। তা কমে কেজিপ্রতি জিরা বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ থেকে ৯০০ টাকায়। ইন্ডিয়ান জিরা ৬৫০ টাকা, জিরা (এএফ) ৭৫০ টাকা, টার্কি জিরা ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঠবাদাম কেজিতে বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ২২০ টাকা, জায়ফলের দাম বেড়ে ৭৩০ থেকে এক হাজার ১০০ টাকা, জয়ত্রীর কেজি দুই হাজার ৪৫০ থেকে বেড়ে হয়েছে দুই হাজার ৮৫০ টাকা। দারচিনির দাম বেড়ে ৪৮০ থেকে ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে খুচরা পর্যায়ে মানভেদে প্রতি কেজি কাজুবাদাম বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৫২০ টাকা থেকে এক হাজার ৬৮০ টাকায়। ধনিয়ার কেজি ২২০ থেকে ২৫০ টাকা, তেজপাতার কেজি ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, শুকনা মরিচ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, গুঁড়া হলুদ ৩৮০ টাকা, শুকনা মরিচের গুঁড়া ৪৮০ টাকা ও ধনিয়ার গুঁড়া ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাংলাদেশ পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এনায়েত উল্লাহ বলেন, এবার মসলার বাজারে খুবই মন্দা যাচ্ছে। বাজারে ক্রেতা নেই বললেই চলে। এ ছাড়া একশ্রেণির লোকজন প্রভাব খাটিয়ে বর্ডার দিয়ে দেদার অবৈধভাবে মসলা দেশে ঢোকাচ্ছে। ফলে আগের মতো মসলার বাজার ঢাকা ও চট্টগ্রামের ওপর নির্ভরশীল নয়। বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে পণ্য চোরকারবারি হওয়ায় উত্তর পশ্চিমাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের ক্রেতারা আর মসলা কিনতে ঢাকা ও চট্টগ্রামে আসেন না। এতে আমরা বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন। সব ধরনের মসলা কমদামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এরপরও গ্রাহক পাওয়া যাচ্ছে না।
তবে রাজধানীর মসলার পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কমমূল্যে মসলা বিক্রি হচ্ছে ব্যবসায়ীদের এ তথ্যের সঙ্গে বাস্তবে মিল নেই। বাজারে ক্রেতা কম থাকলেও চড়াদামেই বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের মসলা।
কারওয়ান বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী ইমাম উদ্দীন বাবুল বলেন, এবারের মতো আর কখনো এমন মন্দা ভাব দেখিনি। এবার মসলার বাজারে ক্রেতা নেই বললেই চলে। সামনের দিনেও মসলা বিক্রি ভালো হবে বলে মনে হচ্ছে না।
নাছিমা খাতুন নামে এক খুচরা ক্রেতা বলেন, দোকানিরা মন্দার কথা বললেও কোনো মসলার দাম তো কম না, বরং কোনো কোনো আইটেমের দাম বেড়েছে।
পাইকার ও আমদানিকারকরা বলছেন, দেশে মসলার চাহিদার পুরোটাই আমদানিনির্ভর হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধি ও ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া এবং অতিরিক্ত শুল্ক-কর আরোপসহ নানা কারণে মসলার আমদানি ব্যয় বেড়েছে।
রাজধানীর মৌলভীবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী রুবেল হোসেন বলেন, যেহেতু অধিকাংশ মসলা আমদানি করতে হয়, তাই আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়ে যাওয়ার কারণেই স্থানীয় বাজারেও মসলার দাম বেড়েছে। আমরা যতটুকু জেনেছি যেসব দেশে এলাচ ও লবঙ্গসহ বেশ কিছু মসলার উৎপাদন হয়, সেখানে এবার ফলন খুবই কম হয়েছে। জিরার বাজার এখন কালোবাজারিরা নিয়ন্ত্রণ করছে। অধিকাংশ জিরা বর্ডার দিয়ে চোরাইপথে ঢুকছে। উত্তরবঙ্গে বেশ কয়েকটি বর্ডার দিয়ে নিয়মিত ঢুকছে। এতে জিরার বাজার পুরোটাই এখন বগুড়ার ব্যবসায়ীরা নিয়ন্ত্রণ করছেন। প্রকৃত আমদানিকারকরা এ নিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছেন।
পাইকারি বাজার থেকে মসলা কিনে কারওয়ান বাজারে বিক্রি করেন মায়ের দোয়া স্টোরের আল আমীন। তিনি বলেন, সব ধরনের মসলাই আগের চেয়ে কমে বিক্রি হচ্ছে।
তবে মিজানুর রহমান নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, আগের বাড়তি দামেই সব ধরনের মসলা বিক্রি হচ্ছে। নতুন করে কোনো পণ্যের দাম বাড়েনি। গত কয়েক মাসের ব্যবধানে সব ধরনের মসলার দাম বেড়েছে। তবে এলাচের দাম কেজিতে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে, যা খুবই অস্বাভাবিক বলে মনে হয়েছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন মসলায় ১০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত কেজিতে বেড়েছে।

