দেশে রেমিট্যান্স প্রেরণে শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র পেছনে পড়ল আরব আমিরাত

রোহান রাজিব
প্রকাশ : ২২ জুলাই ২০২৫, ১৪: ১৮
আপডেট : ২২ জুলাই ২০২৫, ১৭: ০২
ডলার, ফাইল ছবি

এক সময় দেশে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় আসত সৌদি আরব থেকে। তবে গত কয়েক বছর সেই চিত্র পাল্টে গেছে। সদ্য বিদায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে রেকর্ড ৩ হাজার ৩৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ২৭ শতাংশ বেশি।

গত অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। মোট রেমিট্যান্সের সাড়ে ১৫ শতাংশই এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। তার আগের অর্থবছরে (২০২৩–২৪) প্রবাসী আয় প্রেরণকারী দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ছিল দ্বিতীয় অবস্থানে। সেখান থেকে গত অর্থবছর শেষে দেশটি শীর্ষে উঠে এসেছে। প্রবাসী আয়ের বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

বিজ্ঞাপন

ব্যাংক খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রবাসী আয় প্রেরণের ক্ষেত্রে গত কয়েক বছরে বিশ্ববাজারে উৎস দেশের বড় বাঁক বদল হয়েছে। বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসী আয় সংগ্রহ করে বড় বড় এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো তা যুক্তরাষ্ট্র থেকে গন্তব্য দেশে প্রেরণ করছে। যার কারণে যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষে উঠে এসেছে। এর আগে আরব আমিরাত শীর্ষে ছিল। কারণ দেশের মোট রেমিট্যান্সের বেশি অংশ আসে এক্সচেঞ্জ হাউসের মাধ্যমে। যেসব দেশের এক্সচেঞ্জ হাউসের মাধ্যমে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স আসে, এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিবন্ধিত কোম্পানি বেশি। ফলে প্রবাসীরা যে দেশ থেকেই অর্থ পাঠান না কেন, ক্লিয়ারিং হয় এক্সচেঞ্জ হাউসের নিবন্ধিত দেশ থেকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৪৭৩ কোটি ডলার প্রবাসী আয় এসেছে। তার আগের অর্থবছর এসেছিল ২৯৬ কোটি ডলার। এক বছরের ব্যবধানে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসী আয় বেড়েছে ১৭৭ কোটি ডলার বা ৬০ শতাংশ। তাতেই শীর্ষে উঠে এসেছে দেশটি। যুক্তরাষ্ট্রের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় এসেছে সৌদি আরব থেকে। গত অর্থবছরে এপ্রিল পর্যন্ত দেশটি শীর্ষ ছিল। তবে অর্থবছর শেষে দ্বিতীয় স্থানে নেমে এসেছে। দেশটি থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৪২৬ কোটি ডলার। তার আগের অর্থবছরে এসেছিল ২৭৪ কোটি ডলার। এক বছরের ব্যবধানে রেমিট্যান্স বেড়েছে ১৫২ কোটি ডলার বা ৫৫ শতাংশ।

তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। দেশটি থেকে সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে প্রবাসী আয় এসেছে ৪১৬ কোটি ডলার। তার আগের অর্থবছরে এসেছিল ৪৬০ কোটি ডলার, ওই বছর দেশটি রেমিট্যান্স পাঠানো শীর্ষে ছিল। বছরের ব্যবধানে দেশটি থেকে রেমিট্যান্স কমেছে ৪৪ কোটি ডলার। চতুর্থ অবস্থানে যুক্তরাজ্য।

অর্থনীতিবিদ ও শ্রমবাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সম্প্রতি সময়ে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের নতুন গন্তব্য হয়ে উঠেছিল সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই। এ কারণে পাচার হওয়া অর্থের একটি অংশ হয়তো প্রণোদনার সুবিধা নিতেই বৈধ পথে দেশে ফেরত নিয়ে আসছিল। প্রণোদনা গ্রহণের পর সেই অর্থ আবার অবৈধ পথে পাঠিয়ে দিত। এই কারণে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশটি শীর্ষে উঠে আসে। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশ থেকে টাকা পাচার প্রায় বন্ধ তাই আরব আমিরাত থেকে প্রবাসী আয় কমেছে। কারণ এখন পাচার করতে পারছে না। আবার দেশে অর্থ পাঠানো তাদের জন্য ঝুঁকি হয়ে উঠেছে।

গত অর্থবছর দেশটি থেকে ৩১৬ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। আগের অর্থবছরে যার পরিমাণ ছিল ২৭৯ কোটি ডলার। দেশটি থেকে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৩৭ কোটি ডলার। শীর্ষ পাঁচে রয়েছে মালয়েশিয়া। দেশটি থেকে এক বছরে রেমিট্যান্স বেড়েছে ১২০ কোটি ডলার। গত অর্থবছর মালয়েশিয়া থেকে রেমিট্যান্স আসে ২৮০ কোটি ডলার, তার আগের বছর এসেছিল ১৬০ কোটি ডলার।

এছাড়া গত অর্থবছর ইতালি থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ১৬৫ কোটি ডলার, ওমান থেকে ১৬৩ কোটি ডলার, কুয়েত থেকে ১৬২ কোটি ডলার, কাতার থেকে ১২০ কোটি ডলার, সিঙ্গাপুর থেকে ৯৮ কোটি ডলার এবং অন্যান্য দেশ থেকে ৪০৯ কোটি ডলার ।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত