সাত ঘণ্টা পর খামার বাড়ির অবরোধের সমাধান

সাত ঘণ্টা পর রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অবরোধের সমাধান হয়েছে। সোমবার সকাল সাড়ে ৭ টায় আট দফা দাবিতে কৃষি ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মূল গেইটে তালা দিয়ে ভিতরে অবস্থান নেন। একপর্যায়ে দুপুর ১টা ২০ মিনিটের দিকে শেরেবাংলা নগর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অবরোধের বিপক্ষে পাল্টা অবস্থান নিয়ে খামার বাড়ি অধিদপ্তরের গেইটের সামনে অবস্থান নেন। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা সেখানে উপস্থিত হলে খামারবাড়ি এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন। ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগ দাবি অযৌক্তিক উল্লেখ করে তারা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর ৫ দফা স্মারক লিপি পেশ করবেন বলে জানান। কিন্তু গেটের ভেতরে ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে গেট বন্ধ করে রাখার কারণে শিক্ষার্থীরা ভিতরে প্রবেশ করতে না পারলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীরা ও অফিসে প্রবেশ করতে পারছিলেন না। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা সেবা প্রার্থীরাও অধিদপ্তরে প্রবেশ করতে না পেরে বিড়ম্বনায় পড়েন।

বাইরে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের অবস্থান এবং অধিদপ্তরের গেটের ভিতরে ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের অবস্থানের কারণে যেকোনো ধরনের সংঘর্ষ এড়াতে উভয় পক্ষের মাঝখানে পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নিয়ে মানবঢাল তৈরি করেন। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা সেখানে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন। অন্যদিকে নিজেদের দাবি আদায়ে অনড় থাকেন ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীরা। এ অবস্থায় খামারবাড়ী এলাকায় উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়।

ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের এডিসি আলমগীর কবিরসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং খামার বাড়ির কর্মকর্তারা ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের অবরোধ প্রত্যাহার করে নেওয়ার আহ্বান জানান। কৃষি উপদেষ্টার সাথে ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দলের সাথে কৃষি উপদেষ্টার বৈঠক হবে বলে জানানো হলেও ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীরা তাদের দাবিতে ছিলেন অনড়। একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা খামার বাড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মূল গেইটের ভিতরে জোর করে প্রবেশের চেষ্টা চালান। পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি তাৎক্ষণিকভাবে শান্ত হয়। তারা ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের বিশ মিনিট সময় বেধে দেন।

বেলা ২ টা ২৮ মিনিটে আন্দোলনরত ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীরা অবরোধ প্রত্যাহার করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এরপর অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীরা ধীরে ধীরে অফিসে প্রবেশ করেন। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা সেবা প্রার্থীরাও অধিদপ্তরে প্রবেশ করেন।

পরে দুপুর ২ টা ৪০ মিনিটের দিকে কৃষিবিদ ঐক্য পরিষদের তৌহিদ আহমেদ আশিকের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এর কাছে পাঁচ দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি নিয়ে যান।

এর আগে সকাল থেকে রাজধানীর খামার বাড়িতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মূলগেট বন্ধ করে দিয়ে বিক্ষোভ করে আসছিলেন কৃষি ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীরা। এ কারণে এই এলাকায় সকাল থেকে এক ধরনের অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। উচ্চশিক্ষার সুযোগসহ ৮ দফা দাবিতে অধিদপ্তরের সামনে ‘অ্যাগ্রি ব্লকেড’ নামে এ কর্মসূচি শুরু করেন।

এর আগে রোববার সকালে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে ‘কৃষি ডিপ্লোমা ছাত্র অধিকার আন্দোলনের ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে সারাদেশের কয়েকশ ডিপ্লোমা শিক্ষার্থী অংশ নেন। সেই কর্মসূচি থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা আজকের এ ‘অ্যাগ্রি ব্লকেড’ কর্মসূচির ঘোষণা দেন।

কৃষি ডিপ্লোমা ছাত্র অধিকার আন্দোলনের সমন্বয়কারী আসাদুজ্জামান আবির জানান, কৃষি ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষাসহ যৌক্তিক আট দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে চলমান আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ কোনো সুনির্দিষ্ট প্রজ্ঞাপন জারি করেনি। মিথ্যা আশ্বাস বা অযৌক্তিক রেজল্যুশনের নামে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণার প্রতিবাদে অ্যাগ্রি ব্লকেড কর্মসূচি করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, কৃষির সৈনিকদের দাবি বাস্তবায়িত না হওয়া পর্যন্ত কোনো ধরনের কৃষি কার্যক্রম চলতে দেওয়া হবে না। কৃষি ডিপ্লোমার সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষার্থী, সব পেশার ডিপ্লোমা কৃষিবিদদের এ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করার উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।

বাংলাদেশে সরকারি ১৮টি কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটসহ ২৬০টি বেসরকারি কৃষি কলেজে চার বছরের ডিপ্লোমা কোর্সে অধ্যয়ন করা হয়। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মিলিয়ে প্রায় ২৫ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছেন।

কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম কৃষিবিদ ঐক্য পরিষদের তৌহিদ আহমেদ আশিক বলেন, ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীরা তাদের অযৌক্তিক দাবিতে সরকারি অফিস বন্ধ করেছে। আমরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে ৫ দফা দাবি পেশ করার জন্য এসেছি। কৃষি সংশ্লিষ্ট সুশৃঙ্খল নিয়োগ ও শিক্ষাগত যোগ্যতা সংরক্ষণ বিষয়ে ৫ দফা দাবী কৃষিখাতের সার্বিক মানোন্নয়নে এই দাবিগুলো বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি বলে আমরা মনে করি।

তাদের পাঁচ দফা দাবি হলো-প্রচলিত ভর্তি পরীক্ষার নিয়ম ছাড়া কোনোভাবেই পাবলিক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সুযোগ রাখা যাবে না। নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া ব্যতীত ৯ম গ্রেডে পদোন্নতির কোনো সুযোগ রাখা যাবে না এবং ১০ম গ্রেডের পোস্টসমূহ গেজেটের আওতার বাইরে প্রচলিত কাঠামোতেই রাখতে হবে। ১০ম গ্রেডের (উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা/ সমমান) চাকরিতে বিএসসি এবং ডিপ্লোমা সবার জন্য উন্মুক্ত করতে হবে। কৃষি কৃষি সংশ্লিষ্ট বিষয়ক স্নাতক ব্যতীত নামের সাথে কৃষিবিদ-প্রত্যয় ব্যবহার করা যাবে না। এ বিষয়ে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। কৃষি বিষয়ক ডিপ্লোমা বা কারিগরি শিক্ষাকে কৃষি বিষয়ক প্রতিষ্ঠান (ডিএই) এর অধীনেই রাখতে হবে।